ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

মনের জোরটাই মাশরাফির সম্বল

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১০
মনের জোরটাই মাশরাফির সম্বল

ঢাকা: বিমর্ষ মুখখানায় যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। চোট আক্রান্ত ডান হাঁটুতে বরফের থলে (আইস প্যাক) জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

চিকিৎসকদের ভাষায় বিশ্রামে আছেন।

অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং এবং এ্যাপোলো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ এম আলীর পরামর্শে হাঁটুর পরিচর্যা করছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। স্ক্যান এবং এমআরআই’তে ধরা পড়েছে প্রতিস্থাপিত লিগামেন্টের অনেকটা (প্রায় ৭০ ভাগ) ছিড়ে গেছে। তবে এখনই বড় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়নি। দেওয়া হচ্ছে কনজারভেটিভ চিকিৎসা। যার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্রামে থেকে চোট আক্রান্ত জায়গায় বরফ দেওয়া এবং ব্যাথানাশক ঔষুধ সেবন করা।

এধরণের আঘাতে সাধারণত ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে তিনদিন বরফ এবং ব্যথানাশক ঔষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। মাশরাফিকেও তিনদিন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর পুনরায় হাঁটু পরীক্ষা করে দেখা হবে। অনেক ক্ষেত্রে অবস্থার দ্রুত উন্নতি হয় ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় না।

আপাতত এই দিকগুলোই পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসক দল। অবস্থা ভালো হলে হাঁটু এবং উরুর পেশির ক্ষমতা বাড়াতে ওজন তোলা, সাইক্লিং এবং বিশেষ ধরণের ব্যায়ামের নির্দেশনা দেবেন ডেভিড ইয়াং। এই ডেভিড হলেন মাশরাফির পুরনো চিকিৎসক। যিনি মাশরাফির দুই হাঁটুতে তিনবার অস্ত্রোপচারে সক্রিয় ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপর ভীষণ ভরসা নড়াইল এক্সপ্রেসের। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাকি চাইছেন অন্তত বিশ্বকাপ খেলুক মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেস বলছিলেন,“আমি খুব করে চাই বিশ্বকাপ খেলতে। আশা করি খেলতে পারবো। ডেভিডও চাচ্ছেন আমি খেলি। সেজন্য অস্ত্রোপচারে মতো সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন না। বিশ্বকাপ শেষে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করাতে হবে। ”

কনজারভেটিভ চিকিৎসা চলবে ১০ দিন। পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বিসিবির ফিজিশিয়ান আমিরুল আমিন।

তবে বিকল্প প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে ক্রিকেট বোর্ড। ডেভিড চাইলে অস্ট্রেলিয়াতেও পাঠানো হবে তাকে। ভিসাও তৈরি করে রাখা হচ্ছে। মাশরাফিকে ফিরে পেতে সবধরণের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি । মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বুধবার বলেন,“বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকজন মাশরাফি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সে। যে কোন অবস্থায় মাশরাফিকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বিসিবি। ”

বিসিবি কর্মকর্তাদের যে আন্তরিকতার অভাব নেই তা বোঝা যায় বোর্ড সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল মাশরাফিকে বাসায় দেখতে যাওয়ায়। বিকেলে মাশরাফির পল্লবির ফ্যাটে গিয়ে সাবেক অধিনায়ককে আশ্বস্ত করেছেন কামাল,“সব ঠিক হয়ে যাবে। কোন অসুবিধা নেই। খেলতে পারবে তুমি। ”

কথাগুলো সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হলেও এই মুহূর্তে মহামূল্যাবান। এছাড়া বলার কিই বা আছে। এতে যে মনোবল ফিরে পেয়েছেন মাশরাফি তা বলা যাবে না। কারণ বিসিবি সভাপতির উপস্থিতিতেও চুপ মেরেছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

গতির ঝড় তোলা যার কাজ সেই মাশরাফির মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, হাঁটুর অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই ঝড় থামার নয়। বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। দুই মাসও বাকি নেই। মাশরাফি জানেন এধরণের চোট মোকাবেলা করে ফিরতে কতটা সময় লাগে। শুধু সেরে উঠলেই হবে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার মতো শারীরিক সক্ষমতাও ফিরে পেতে হবে।

বড্ড অসময়ে পুরনো জায়গায় চোট পেলেন মাশরাফি। সবে তো ফিরেছেন। তবুও নিয়তির নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হলো উদ্যোমী এক ক্রিকেটারকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।