গুয়াংজু থেকে: ফুলের তোড়া হাতে বিজয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিকেটাররা। গলায় সোনার পদক শোভা বাড়াচ্ছিলো।
এশিয়ান গেমসে ৩২ বছর অপেক্ষার অবসান হয় শুক্রবার। সোনার অক্ষরে লেখা হয়ে গেছে ২৬ নভেম্বর দিনটি। কাঙ্খিত সোনার পদক এসেছে ক্রিকেট থেকে। মোহাম্মদ আশরাফুলদের হাত ধরে। এই পদক ক্রিকেটারদের একা নয়, পুরো জাতির অর্জন। কোচ সারোয়ার ইমরান সংবাদ সম্মেলনে সে কথাই বলছিলেন,“এই স্বর্ণ পদক শুধু ক্রিকেটের নয়। এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ স্কোয়াডের। দেশের মানুষের জন্য সত্যিই আনন্দের দিন আজ (শুক্রবার)। ”
সারোয়ার ইমরানের জন্য আনন্দ একটু বেশি হওয়ার কথা। ইন্দোবাংলা গেমস, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের পরে এশিয়ান গেমসের সফল কোচ তিনি। বলেন,“বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি দল প্রস্তুত করতে হয়। অল্প সময়ের জন্য কাজটি বেশ কঠিন। চাপের মধ্যেও সাফল্য পাওয়ায় ভালো লাগছে। ”
এশিয়ান গেমসে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন আশরাফুল বাহিনী। অধিনায়কের দৃষ্টিতে,“প্রত্যেকে ভালো খেলেছে। তেমন ভুল হয়নি। সবাই সেরাটা দিয়ে খেলেছে। তবে আফগানিস্তান ভালো দল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলেছে ফাইনালে। ধন্যবাদ আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের। ”
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষুদ্র পরিসরে খেলা হয় ক্রিকেট। এশিয়ান গেমসে সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে খেলাটি। প্রথম আসরেই বাজিমাত করেন আশরাফুলরা। অনেক সাফল্যকেও ছাপিয়ে গেছে এশিয়ান গেমসের এই অর্জন। অধিনায়কের ভাষায়,“খুবই ভালো সময় কেটেছে গুয়াংজুতে। দেশের অন্যান্য খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে কাছাকাছি থেকেছি। প্রতিটি দিনই ছিলো আনন্দের। বিশেষ করে আজকের দিনটি একটু বেশি উপভোগ্য হয়েছে। ”
উত্তেজনার পারদ উঁচিয়ে শেষপর্যন্ত জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১৮ ওভার পর্যন্ত সমানে লড়াই হয়েছে। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১৯ রান। নাঈম ইসলামের সঙ্গে উইকেটে ছিলেন সাব্বির রহমান। দেখেশুনে খেলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দলকে। এই সাফল্যে নাঈমের অবদান সবচেয়ে বেশি। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শেষপর্যন্ত চালকের আসনে ছিলেন। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। বলছিলেন,“একজনকে না একজকে দায়িত্ব নিতে হয়। আশরাফুল ভাই এবং ডিকেন্স ভাই আউট হয়ে যাওয়ার পরে আমার দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছিলো। নিজের কাজটুকু করতে পেরে ভালো লাগছে। ”
বিজয়ের অন্যতম অংশীদার পেসার সাহাদাত হোসেন রাজিব জাতীয় পতাকা বুকে জড়িয়ে ভিক্টোরি ল্যাপে অংশ নিয়েছেন। দারুণ খুশি জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। তিনি জানান,“দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিততে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমার বিশ্বাস ছিলো আফগানিস্তানকে হারাতে পারবো। ”
১৮ বলে ৩৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন সাব্বির রহমান। অপরাজিত এই ব্যাটসম্যান বলছিলেন,“খেলাটা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। দুই ওভার হাতে থাকতে নিশ্চিত হয়ে গেছি জয় পাওয়া সম্ভব। ”
ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং প্রতিটি বিভাগে সমান পারদর্শী আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে ফিল্ডিং এবং বোলিংয়ের প্রশংসা না করলেই নয়। কোচ সারোয়ার ইমরান প্রশংসায় ভাসালেন,“দারুণ ফিল্ডিং দিয়েছে আফগানিস্তান। বোলিংও অনেক ভালো। আমরা চেয়েছিলাম উইকেট ধরে রাখতে। সেটা সম্ভব না হওয়ায় কৌশল নিয়েছিলাম একজন বোলারের ওপর আক্রমণাত্মক হতে। ”
গুয়াংজু সময়: ১৯২২ ঘন্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১০