ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

খেলা

কোচের কৌশলগত ভুলে ঘরের মাঠে ব্যর্থতা: প্রশ্নের মুখে কাবরেরার পরিকল্পনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৮, জুন ১১, ২০২৫
কোচের কৌশলগত ভুলে ঘরের মাঠে ব্যর্থতা: প্রশ্নের মুখে কাবরেরার পরিকল্পনা

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে নিজেদের ঘরের মাঠে। হাজার হাজার সমর্থকের প্রত্যাশা ও আবেগের সামনে ভেঙে পড়েছে লাল-সবুজের দল।

ম্যাচ শেষে দল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত, খেলোয়াড় বদলের সময়জ্ঞান এবং কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।

হোম গ্রাউন্ড, কিন্তু মনোভাব ভীতুর মতো
দলের মানসিকতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। ঘরের মাঠ ও সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থনের সুবিধা থাকার পরও বাংলাদেশ দল ম্যাচ শুরু করে অত্যন্ত রক্ষণাত্মক মুডে। যেখানে প্রয়োজন ছিল আক্রমণাত্মক খেলার, সেখানে খেলোয়াড়দের মাঝখানে দেখা যায় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। প্রথম ৩০ মিনিট সিঙ্গাপুর অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের গতির, কিন্তু নিজেদের রক্ষণাত্মক কৌশল দেখে তারাও গুছিয়ে নেয় নিজেদের ছক। ফলাফল— প্রথমার্ধের ৪৪তম মিনিটেই গোল হজম।

খেলোয়াড় নির্বাচন ও পজিশনিং নিয়ে বড় প্রশ্ন
মিডফিল্ডে হামজা, শমিত ও শান্তের উপস্থিতি সঙ্গত হলেও ডান উইংয়ে কাজেমের অন্তর্ভুক্তি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কাজেম সাধারণত শান্তর পজিশনের খেলোয়াড়, কিন্তু তাকে শান্তর জায়গায় খেলানো হলে পুরো উইংটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ না বল দখলে রাখতে পেরেছে, না আক্রমণ গড়ে তুলতে পেরেছে।

ফরোয়ার্ড লাইনে তরুণ ফামিদুলকে শুরুর একাদশে রাখা হয়, যদিও আগের ম্যাচে তার ম্যাচিউরিটির ঘাটতি স্পষ্ট ছিল। যদি বাঁ পাশে রাকিব, মাঝখানে মোরসালিন ও ডান পাশে ইসা ফয়সাল বা ইমনকে খেলানো হতো, তবে ফল ভিন্ন হতে পারত।

সেট পিস ও ডিফেন্স: পুরনো দুর্বলতার পুনরাবৃত্তি
বাংলাদেশের সেট পিস ডিফেন্স আগেও ছিল দুর্বল, এই ম্যাচে সেটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ভুটানের বিপক্ষে একটি গোল পেলেও তা থেকে ভুল শিক্ষা না নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগে দল। প্রতিপক্ষের লং থ্রো বা টার্গেটম্যানকে ঠেকানোর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না, যা প্রতিপক্ষের সুযোগ সৃষ্টি ও গোলের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।

সাবস্টিটিউশন ও কোচিং ডিসিশনে বিভ্রান্তি
দ্বিতীয়ার্ধে ইমন হোসেনের আগমন একটি ইতিবাচক দিক হলেও প্রশ্ন থেকেই যায়। কাজেমকে বদলে যদি ইমনকেই খেলানো হতো, তবে শুরু থেকেই কেন এই ছক দেখা যায়নি?

রাকিবকে নিয়ে আরও একটি ট্যাকটিক্যাল বিভ্রান্তি দেখা যায়। কোচ কাবরেরা রাকিবকে তার ‘মেইন স্ট্রাইকার’ বললেও, গোল করেও কেন তাকে রাইট ব্যাকে নামানো হলো? একজন ছন্দে থাকা ফরোয়ার্ডকে রক্ষণে নামানো ছিল স্পষ্ট পরিকল্পনার ব্যর্থতা।

সাবস্টিটিউশনেও দেখা যায় বিশৃঙ্খলা। এক পর্যায়ে হৃদয় ও সাদকে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু মাঠ থেকে বের হবার সময় হামজার অসন্তোষ দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত সাদের পরিবর্তে শাকিল আহাদ তপুকে নামানো হয়। এ সময় প্রায় চার মিনিট খেলা বন্ধ ছিল, যা চলমান অ্যাটাকিং মোমেন্টাম নষ্ট করে দেয়।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: কোচিং প্যানেলে দরকার নতুন ভাবনা
ম্যাচের ফলাফলের বাইরে, দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং কৌশলগত অস্থিরতা চোখে পড়েছে সবার। দেশের ফুটবলে এখন অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে লড়তে সক্ষম। কিন্তু এই টপ লেভেলের খেলোয়াড়দের পরিচালনার জন্য প্রয়োজন টপ লেভেলের কোচ। হাভিয়ের কাবরেরার কৌশলগত সীমাবদ্ধতা ও সিদ্ধান্তের অসামঞ্জস্যতা এই ম্যাচে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

শেষ কথা
ঘরের মাঠে এমন হারের পর প্রশ্ন উঠেছে— এই দলকে সামনে এগিয়ে নিতে কি আদৌ সঠিক নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই? দর্শকের ভালোবাসা, খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও লড়াকু মনোভাব সবই আছে, অভাব শুধু সঠিক পরিকল্পনার। সময় এসেছে নতুন করে ভাবার।

এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।