ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

মানুষের পাশে থাকতে চান সাকিব

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১০
মানুষের পাশে থাকতে চান সাকিব

ঢাকা: দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এখন পরিচিত। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার স্বপ্ন দেখেন আন্তর্জাতিক সংস্থার দূত হয়ে মানবতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার।

মানুষের পাশে থেকে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে চান। রোববার বাংলানিউজকে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলছিলেন, সুযোগ পেলে ক্রিকেটের পাশাপাশি দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করবেন।

প্রশ্ন: ছোট বেলার সঙ্গে তারকা সাকিবের মিল কোথায়?

সাকিব: মিল খুব একটা নেই। আগে খুবই সাধারণ ছিলাম। এখন মানুষের কাছে পরিচিত। বিষয়টিকে বেশ উপভোগ করি। অবশ্য আমার চলা ফেরায় কোন পরিবর্তন আসেনি। আগের মতো সাদামাটা জীবন যাপন আমার পছন্দ এবং সেভাবেই চলাফেরা করি।  

প্রশ্ন: আপনি এখন বিশ্বক্রিকেটে একটা বড় জায়গায় অবস্থান করছেন। এমনটা কখনো ভেবেছিলেন?

সাকিব: সত্যি বলতে খেলাটা মজা লাগে তাই খেলি। কখনোই ভাবিনি জাতীয় দলে খেলতে পারবো। ‘এ’ দলে খেলার পরই মনে হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ আছে।

প্রশ্ন: দেশের গন্ডি পেরিয়ে আপনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ করছেন সে বিষয়ে কিছু বলবেন?

সাকিব: অবশ্যই ভালো লাগে। গর্ব হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি অনেককে উদ্বুদ্ধ করতে পারবো আমার মাধ্যমে। আমি দু’একজনের আদর্শ (রোল মডেল) হতে পারি এই জিনিসটা বেশ লাগে।

প্রশ্ন: একজন রোল মডেল হিসেবে সমাজের জন্য কী ধরণের কাজ করার ইচ্ছে আছে?

সাকিব: বাংলাদেশে নানাবিধ সমস্যা আছে। অনেক বিষয়ে কাজ করা যায়। আমি চেষ্টা করি ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষকে সাহায্য করতে। যেমন কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য সাহায্য করা। এতিম খানা বা স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা আমার পক্ষে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এখন ক্রিকেট খেলছি। ভবিষ্যতে নিশ্চয় চার থেকে পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবো। এরপর সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়াবো। তখন হয়তো বড় পরিসরে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকবে।  

প্রশ্ন: জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোন সংগঠনের দূত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন?

সাকিব: অবশ্যই। এরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে নিজের এবং দেশের জন্য বড় সম্মানের। এরই মধ্যে বিসিবি ও ইউনেস্কোর  মধ্যে একটা চুক্তি হওয়ার কথা ছিলো। চুক্তিটি হয়েছে কি না জানি না। হয়ে গেলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো। খুবই খুশি হবো যে মানুষের জন্য বার্তা পৌঁছে দিতে পারছি।

প্রশ্ন: ফিফা যেমন বিশ্বকাপের স্লোগান রেখেছিলো সবার জন্য শিক্ষা। দেশের মানুষকে শিক্ষা বিষয়ে সচেতন করতে আপনারা কিভাবে কাজ করতে পারেন?

সাকিব: শিক্ষা থাকলে মাঠে খেলোয়াড়দের আচরণ অন্যরকম হয়। আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবাই খেলতে পারে। জীবনের সব জায়গাতেই শিক্ষা অতিগুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার অভাবেই বোধহয় কমন সেন্সগুলো আমরা যথাযথ স্থানে প্রয়োগ করতে পারি না। অতএব পড়ালেখা করা খুবই জরুরী।

প্রশ্ন: সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য কী ধরণের কাজ করতে পারেন। খেলার প্রতি কী আগ্রহী করে তুলতে পারেন?

সাকিব: আমি এবং জয় ভাই (আরিফুর রহমান জয়) একবার সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ভবঘুরে ফুটপাথের ছেলেগুলোকে নিয়ে একটি চ্যারিটি ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিলো। আমরা দু’জনই সুবিধা বঞ্চিত ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। আমার মনে হয় সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু কিশোরদের দিকে বেশি বেশি নজর দেওয়া উচিৎ। খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা গেলে প্রত্যেকের মানসিক বিকাশ ভালো হবে। হয়তো স্বপ্ন দেখবে ‘আমিও একদিন বড় ক্রিকেটার বা ফুটবলার হবো’। খারাপ কাজগুলোও করবে না। নিয়মিত চ্যারিটি অনুষ্ঠান হলে তাতে অংশ নিতে আমার কোন সমস্যা নেই। বরং ভালো লাগবে।

প্রশ্ন: মাগুরা জেলার মানুষ আপনাকে নিয়ে গর্ব করে। গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন?

সাকিব: মাগুরার মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় আছে। বেশিরভাগই ক্রিকেট কেন্দ্রীক। তবে খেলার পরে একটা শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারলে ভালো হবে। মাগুরার অনেক মানুষ আছে যাদের তিন বেলা খাবার জোগাড় হয় না। থাকার জায়গা নেই। আমার প্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ কাজ পেলে অন্তত কিছুটা উপকার হবে। এছাড়া একটি ক্রিকেট একাডেমি করার ইচ্ছে আছে। সেটা অবশ্যই আমার গ্রামের বাড়িতে। যেখানে থাকা খাওয়া এবং প্রপার ট্রেনিং হবে। যা বাংলাদেশে এখনো নেই।

প্রশ্ন: অনেক নামিদামী ক্রিকেটারই দাতব্য সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনি কি কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান?

সাকিব: অবশ্যই হতে চাই। সত্যি কথা বলতে এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে আমার ভালো লাগে। সামাজিক এবং মানবিক কাজগুলোকে উপভোগ করি। যদিও এখন পর্যন্ত দু’একবারই এধরণে কাজ করতে পেরেছি। একজন মানুষ হিসেবে আমি অন্যের পাশে থাকতে চাই। দাতব্য কাজের দূত হয়ে মানুষের উপকার করতে পারলে খুবই খুশি হবো।

বাংলানিউজ: সাকিব আপনাকে ধন্যবাদ।

সাকিব: আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘন্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।