ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বাংলাদেশের সঙ্গে আবেগ জড়িত: আলীম দার

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০
বাংলাদেশের সঙ্গে আবেগ জড়িত: আলীম দার

ঢাকা: সাধারণ পোশাকে চেনার উপায় ছিলো না। অনেকে চিনতেও পারেননি।

তবুও উৎসুক জনতার চোখ এড়াতে পাছিলেন না আলীম দার। আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার ঢাকায় এসেছেন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার একদিনের ক্রিকেট সিরিজে দায়িত্ব পালন করতে।

সেই সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলে এসেছেন। উইকেট পরখ করে দেখা। টুকটাক খোঁজখবর নেওয়ার পর সঙ্গী আম্পায়ার নাদির শাহ এবং টিভি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখছিলেন।

পেশাটি দারুণ উপভোগ করেন টানা দুইবার আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার আলীম। বলেন,“খানিকটা আগেই বাংলাদেশের আম্পায়ারদের সঙ্গে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেমন করে এতটা পথ এসেছি। আইসিসির বর্ষসেরা হওয়ার রহস্য। ”

প্রতিটি ম্যাচে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। সেরা হওয়ার নেশায় সংগ্রাম করেন। একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করেন মাঠে অথবা টিভি আম্পায়ার হিসেবে। তার প্রেম-ভালোবাসা সবই এখন আম্পায়ারিংকে ঘিরে,“পেশাটাকে যদি উপভোগ করতে নাই পারি তবে সফল হতে পারবো না। আম্পায়ারিং আমার কাছে অনেক কিছু। ভুল হবে, সাফল্য আসবে। এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকতে হবে। ”

পাকিস্তানি এই আন্তর্জাতিক আম্পায়ারের মতে,“পেশা হিসেবে আম্পায়ারিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা বাড়ছে। অনেকেই এখন আম্পায়ার হতে আগ্রহী। অনেক ক্রিকেটারই আম্পায়ার হচ্ছেন। আম্পয়ারিংয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। টেকনোলজি ব্যবহারের সুবিধা আছে। অতএব আম্পায়ারিং এখন মজার পেশা। ”

অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা আম্পায়ারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্ষসেরার মুকুট জিতেছেন আলীম দার। একজন এশিয়ান হিসেবে গর্বিত মানুষ মনে করেন নিজেকে। “আমার জন্য খুবই গর্বের। একমাত্র এশিয়ান আম্পায়ার হিসেবে বর্ষসেরা হতে পেরেছি। ”

ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাতি কুড়াতে পারেননি আলীম দার। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ১১.৭৩। তবে বোলিংয়ে সাফল্য আছে এই লেগ স্পিনারের। পাঞ্জাবের ঝাংয়ে ১৯৬৮ সালের ৬ জুন জন্ম নেওয়া আলীম দার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট শুরু করেন ১৯৮৭ সালে পাকিস্তান রেলওয়ের হয়ে। এরপর লাহোর সিটি, এলাইড ব্যাংক এবং গুজরানওয়ালের হয়ে খেলেছেন।

খেলা শেষে পেশা হিসেবে বেছে নেন আম্পায়ারিংকে। ২০০০ সালে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে একদিনের ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হয় আলীম দারের। আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার হিসেবে নির্বাচিত হন ২০০২ সালে। দেখতে দেখতে ১২৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৩ সালে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এপর্যন্ত ৬০টি টেস্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ করেছেন ১৭টি। বলছিলেন,“বাংলাদেশ আমার জন্য পয়া একটি দেশ। এখান থেকেই টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে যাত্রা শুরু করি। এই দেশে খেলা পরিচালনা করতে বেশ লাগে। ”

এই মুহূর্তে বিশ্ব সেরা আম্পায়ারকে দায়িত্ব পালনের সময় কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি। “মাঠে সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে ওয়াসিম আকরাম, অনিল কুম্বলে, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং ড্যানিয়েল ভেট্টোরির বোলিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত নিতে। খুবই সতর্ক থাকতে হতো। তারা খুবই ধারাবাহিক। বিশ্বের সেরা বোলার। অনেক চাপ অনুভব করতাম। ”

রিকি পন্টিং, ব্রায়ন লারা, শচীন চেন্ডুলকারের বিপক্ষেও সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন মনে করেন আইসিসির এই আম্পায়ার। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সবচেয়ে কঠিন মানছেন অ্যাশেজকে,“আমার মনে হয়েছে অ্যাশেজে আম্পায়ারিং করা বিশ্বকাপের চেয়ে কঠিন। এছাড়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই চ্যালেঞ্জের। ”

পাকিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে বিতর্ক চলছে। সেই মুহূর্তে প্রশংসায় ভাসছেন আলীম দার। বলেন,“বিতর্ক সবজয়গাতেই আছে। কিন্তু কোন দেশের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ হওয়ার আগে বাঁকা চোখে দেখা উচিৎ নয়। শুধু পাকিস্তান নয় যেকোন দেশের বেলায় এই নিয়ম প্রযোজ্য। ”

বাংলদেশের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি এই আম্পায়ারের। এদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন আলীম দার। তার দৃষ্টিতে,“ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তেমন নয়। অনেক উন্নতি করতে হবে। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘন্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।