ক্রেতা-বিক্রেতার সাপ্তাহিক সেতুবন্ধন এখানে। বিক্রেতা বিক্রি করছেন আর ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় জিনিসটুকু কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ক্রয় করে নিচ্ছেন।
চারদিকে মানুষের ভিড়। তবে শুধু মানুষই নয়; একইসঙ্গে রয়েছে হাঁস, মুরগি, কবুতর, খাসি, ভেড়াসহ নানান গৃহপালিত প্রাণী। এটিই বিক্রেতা-ক্রেতার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি বিশেষ স্থান ভৈরবগঞ্জ বাজার। তবে সবাই ভৈরববাজার হিসেবেই এ স্থানটিকে চিহ্নিত করে থাকেন। এই স্থানটি মৌলভীবাজার জেলা শহর আর শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রায় মাঝামাঝিতে অবস্থিত।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারের জেলা শহরের পথের বাম পাশেই এই বাজারটি অবস্থান। পাকা সড়ক থেকেই দেখা যায় প্রচুর মানুষের সমাগম। এই বাজারে যেতে হলে পাকা সড়ক থেকে নিচে নেমে হেঁটে আসতে হবে। মানুষের মাথার হিসেবে এখানের তাৎক্ষণিক জনসংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সৌখিন মানুষে ভিড় গেলেই থাকে। শুধু সৌখিন মানুষ নয়, রয়েছে ব্যবসায়ী মানুষরাও। হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগল, খাসি, ভেড়া প্রভৃতি গৃহপালিত জিনিসের বিরাট পসরা সাজিয়ে রাখেন বিক্রেতারা। তবে এই বিক্রেতারা পেশাগত বিক্রেতা নন। শৌখিন বিক্রেতা। তাদের ঘরের প্রয়োজনের বাড়তি জিনিসটুকু এই ভৈরবগঞ্জ বাজারের হাটে বিক্রি করলে অতিরিক্ত দুটো টাকা ইনকামের সুযোগ থাকে। এতে বেশি পরিচিতি পেয়ে গেছে এই বাজারটি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি শত বছরের পুরোনো। চা-বাগান, হাইল হাওর, সমতলের গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে এটি সম্প্রসারিত হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটির অবস্থান ভালো। তাই এখানে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার খাসি, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ বিভিন্ন ধরনের পোষা প্রাণী বিক্রি হয়ে থাকে। শুধু আশপাশের গ্রাম নয়। শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা এই হাটে ভিড় করেন। এই বাজারটি চলে সন্ধ্যার পর্যন্ত।
ভৈরবগঞ্জ বাজারের হাঁস বিক্রেতা আইয়ুব আলী বলেন, বহু বছর ধরে এই বাজারটি চালু রয়েছে। সবার মতো আমিও মাঝেমাঝে ঘরের দুই-চার হাঁস এখানে এনে বিক্রি করি। ভালো দাম পাই। প্রতিটি হাঁসের দাম আকার অনুসারে চার-পাঁচশ’ টাকা থেকে সাত-আটশ টাকা হয়ে থাকে।
ভৈরববাজার থেকে মোরগ কিনতে আসা রমিজ মিয়া বলেন, শহরের বাজার থেকে এখানে দাম কিছুটা সস্তা। আমি চারটি মোরগ কিনেছি, মোটামুটি বড় সাইজের। দাম পড়েছে ২৫শ টাকা।
ইজারাদার লিটন আহমেদ বলেন, হাটটির বয়স একশ বছরের বেশি হবে। তবে ২০ বছর আগে থেকে হাটটি হাঁস, মোরগ, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাদের পোষা হাঁস, মোরগ, ছাগল নিয়ে এই হাটে আসেন। পাইকারেরাও অনেক ধরনের প্রাণী নিয়ে আসেন।
প্রতি শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে হাট শুরু হয়, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হাট চলে। আগে বাজারের একদিকে সড়কের পাশে এই হাট বসত। বর্তমানে বাজারের উত্তর পাশে ব্যক্তিগত জমি ইজারা নিয়ে হাটকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বিবিবি/এএটি