ঢাকা, সোমবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

এবার বাড়িতে মিললো লুটের আড়াইলাখ ঘনফুট পাথর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৯, আগস্ট ১৬, ২০২৫
এবার বাড়িতে মিললো লুটের আড়াইলাখ ঘনফুট পাথর বাড়িতে মিললো লুটের পাথর

সিলেট: এবার বসতবাড়ি থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে প্রশাসন। শহর সংলগ্ন সদর উপজেলার ধোপাগুল মহালদিক এলাকার একটি বাড়িতে স্তূপ করে রাখা ছিল বিপুল পরিমাণ পাথর।

‘অভিযানের ভয়ে লুটের পাথর মাটিচাপা, উদ্ধার করছে প্রশাসন’ বাংলানিউজে সংবাদের পর শনিবার (১৬ আগস্ট) ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল ও বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। ওই সময় সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিলের আড়ালে বাড়িতে মজুদ রাখা আড়াই লাখ ঘনফুট সাদাপাথর এবং জাফলং এলাকা থেকে লুট হওয়া পাথর জব্দ করা হয়। গত কয়েকদিনে সর্বাধিক পাথর মিলেছে ধোপাগুলে।

সিলেট সদরের ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াতের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাস্কফোর্স অভিযান চালায়।

তিনি বলেন, ধোপাগুলের মহালধিক গ্রামে বসতবাড়ি ও আশপাশে এবং ক্রশার মিলে বালুমাটি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় অন্তত আড়াই লাখ ঘনফুট পাথরের সন্ধান মেলে। সেগুলো পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাথর লুটপাট বন্ধে অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

অভিযানে, পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকতারাও ছিলেন।

একইদিনে গোয়াইনঘাটের ফতেপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি থেকে আরও ২ হাজার ৫শ’ ঘনফুট সাদা পাথর জব্দ করা হয়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

এর আগে, গত সপ্তাহে টানা কয়েকদিন প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর, ১৩ আগস্ট থেকে লুট ঠেকাতে ও পাথর উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে নামে প্রশাসন। গত দুই দিনে এক লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কোম্পানীগঞ্জ থানায় প্রায় দুই হাজার অজ্ঞাত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর। মামলার পর, শুক্রবার রাতে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও, লুট হওয়া পাথরের কোনো পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি প্রশাসন।

এরআগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর, কালাইরাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পাথর পুনরায় সাদাপাথরে নিয়ে ফেলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় ব্যাপক লুটপাট শুরু হয়।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা, প্রশাসনের লোকজন এখানে জড়িত ছিলেন। ধলাই নদীর উৎসমুখে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ পাথর দিনের বেলা প্রকাশ্যে নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হয়। শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়েছে, এমনকি নদীতীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে পাথরলুটে জড়িত স্থানীয় পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সাতদিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপন এবং লুটে জড়িতদের তালিকা আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপকণ্ঠ সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল স্টোন ক্রাসার জোনের বিভিন্ন স্থানে স্তরে স্তরে রাখা হয়েছে সাদা পাথর। খুব কম সংখ্যক পাথরের স্তূপ দৃশ্যমান রয়েছে। আর বেশিরভাগ সাদাপাথর রাখা হয়েছে মাটিচাপা দিয়ে। অনেকে বালু দিয়েও সাদা পাথর ঢেকে রেখেছেন। ঢেকে রাখার চেষ্টাকৃত অনেক পাথর আবার দৃশ্যমান।

স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি দুই উপদেষ্টার সিলেট সফর পরবর্তী প্রশাসন অভিযান চালিয়ে স্টোন ক্রাসারগুলোর বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যে কারণে লুটপাটকৃত পাথর ব্যবসায়ীরা কিনে আনলেও সেগুলো ভাঙাতে পারেননি। তাই অভিযানের ভয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের চিত্র দেখা গেছে। সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে বড় বড় পাথর চুরি হওয়া স্থানগুলোতে বিশালাকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত শত শত স্থান খোদাই করে পাথর লুট করা হয়েছে।

স্থানীয় সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ীদের মতে, প্রায় ৮০ শতাংশ লুট করা হয়েছে। যে কারণে কমেছে পর্যটক। ওইদির কালাইরাগ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে স্তূপাকারে জব্দকৃত সাদাপাথর নৌকা এনে ভোলাগঞ্জ ১০ নং সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে বেশিরভাগ পাথর ও বালু ছাতক হয়ে নদীপথে দেশের বিভিন্নস্থানে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতকে সুরমা নদীর দুই তীরে মজুত করা হয় সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, ধলাই নদী, পিয়াইন নদী থেকে উত্তোলিত বালু-পাথর। আর এখান থেকেই ভলগেট, কার্গো দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এনইউ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।