ঢাকা, রবিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

বৃষ্টি-জোয়ারে প্লাবিত উপকূলের নিম্নাঞ্চল, ভাঙছে বাঁধ

কান্ট্রি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৯, মে ৩০, ২০২৫
বৃষ্টি-জোয়ারে প্লাবিত উপকূলের নিম্নাঞ্চল, ভাঙছে বাঁধ কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার বহু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: স্থল গভীর নিম্নচাপ ধীরে ধীরে দুর্বল হলেও এর প্রভাবে এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।

তাই সব নদীবন্দরে তোলা হয়েছে সতর্কতা সংকেত। সমুদ্রবন্দরের তিন নম্বর সংকেতও বহাল রয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত গভীর স্থল নিম্নচাপটি উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে স্থল নিম্নচাপ আকারে আজ সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করেছে। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন জেলা উপজেলার খবর:

রাজধানী: রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় ঢাকার বিভিন্ন সড়ক।  

কুমিল্লা: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কুমিল্লায় বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার (৩০ মে) বিকেল ৩টা পর্যন্ত (২৪ ঘণ্টায়) ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে শহর ও শহরতলীর বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, পুলিশ লাইন, রেসকোর্স, টমছমব্রিজসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, যান চলাচল সীমিত ও মানুষ গৃহবন্দী।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানান, গাছ ও খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

এদিকে শনিবার (৩১ মে) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বহু ভবনের নিচতলা ও প্রবেশপথ প্লাবিত হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি সেচ কাজ চলছে এবং পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে রওনা হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় জোয়ারের পানির তোরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পানিবন্দি রয়েছে।  

বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারে পানি ভেতরে ঢুকলেও ভাটায় এখনও নামেনি পানি। উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের হলতা নদীর মানিকখালী অংশে বাঁধ ভেঙে যায়।  

এদিকে গত দুদিন ধরে পাথরঘাটায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন্ পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়ায় গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপকূল জুড়ে রয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী সংলগ্ন বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে।  

উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার থেকেই পাথরঘাটায় বৃষ্টি ও জোয়ারের তোরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নাচনাপাড়া হলতা নদীর বেড়িবাঁধ মানিকখালী অংশ ভেঙে ছয়টি গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- মানিকখালী, নাচনাপাড়া, জ্ঞানপাড়া, উত্তর কাঠালতলী, কেরামতপুর ও পুটিমারা।

মানিকখালী গ্রামের আব্দুল জলিল ও আতিকুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল রাত থেকে রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে আছি।  

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত ৮ আগস্ট মানিকখালি গ্রামের কিছু মানুষ বেড়িবাঁধের কিছু অংশ পানির সংকট নিরসনের জন্য কেটে ফেলেন। পরে স্থানীয় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। উপজেলা কাকচিড়া ইউনিয়নের রাজু মিয়া নামের এক ঠিকাদার মেরামতের কাজ পেয়ে মাটির কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মেরামত বন্ধ রাখা হয়। ফলে পানির চাপে আবার ভেঙে যায় বাঁধ।  

নাচনাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন পান্না বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিন নুর বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে বার্তা এসেছে, তাতে বেড়িবাঁধ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে জলোচ্ছ্বাস যদি বেশি হয় এবং তা যদি বেড়িবাঁধ উপচে পরে তাহলে তো ঝুঁকি আছেই। পাথরঘাটায় প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর শুনেছি। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই তারা এসে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।  তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। শুকনো খাবারের প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে।  

নোয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।

এতে উপকূলীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ও চরহাজারী ইউনিয়ন, চরএলাহী ও হাতিয়ার নলচিরা, নিঝুম দ্বীপসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় পরিস্থিতি দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) সকালে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। নদ-নদীর পানিও বেড়ে গেছে। জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার কয়েকটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর। ডুবে গেছে ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল। হাতিয়ার মেঘনা নদীতে এমভি প্রাহিম নামে একটি পণ্যবাহী ট্রলার চার কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ডুবে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণ।

এছাড়া হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত জোয়ারের অতিরিক্ত পানির ভয়ে।

স্থানীয়রা জানান, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নিঝুম দ্বীপে শুক্রবার সকালেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় তৃতীয় দিনের মতো হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুম দ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিচু অঞ্চলের বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুম দ্বীপ। এতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

অপরদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। এছাড়া সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল না বিদ্যুৎ।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ জানান, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

এদিকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার (২৮ মে) সকাল ১০টা থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ভোলা: নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি।

মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মনপুরা, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত ২০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

অন্যদিকে পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। জোয়ারে ভেসে নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক গবাদি পশু।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল।

অন্যদিকে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ভোলা ডিসি আজাদ জাহান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মাদারীপুর: শুক্রবার (৩০ মে) মাদারীপুরের সর্বত্র গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইছে। স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকেই উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মাদারীপুরেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টির প্রভাবে জেলার বিভিন্ন স্থান এবং নিচু এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  

জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষেরাও পড়েছেন বিপাকে। এছাড়া হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিও  কম রয়েছে। এদিকে ঝোড়ো বাতাস বইতে থাকায় উত্তাল রয়েছে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী। নদীতে প্রবল ঢেউ থাকায় স্থানীয় জেলেরা বৃহস্পতিবার থেকেই নিরাপদ স্থানে রয়েছে। পদ্মার তীরবর্তী এলাকার জেলেরা নদী থেকে জাল গুটিয়ে ফিরে এসেছেন গতকালই।

শিবচরের চরজানাজাত এলাকার একাধিক জেলে বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেও পদ্মা উত্তাল। বাতাস থাকায় ঢেউ বেড়েছে। ঢেউয়ের কারণে মাঝ পদ্মায় মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন জেলেরা।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষ্যে স্থানীয় পশুর হাটে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।  

মো.ফারুক নামে এক খামারি বলেন, বৃষ্টির কারণে গরু হাটে নিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে গরু বাইরে বের করাও ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু ঈদ এখনও সপ্তাহখানেক বাকি আছে। বৃষ্টিতে ভিজলে গরু অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মাদারীপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের ঝড়ের প্রভাব মাদারীপুরে সরাসরি না পরলেও ঝোড়ো বাতাসের শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া শনিবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টির হতে পারে।  

মাদারীপুর আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আব্দুর রহিম সান্টু বলেন, শুক্রবার সারা দিনই বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত জেলায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টাও জেলায় ১৬০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বর্ষণে অন্তত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় পানি প্রবেশ করে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক বসতঘর ও অবকাঠামো।

শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালী ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন স্বাক্ষরিত এসওএস ফরমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে প্রেরিত একটি প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তথ্যে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের মতো রূপ না নিলেও এবারকার স্থল গভীর নিম্নচাপ পটুয়াখালীতে ফেলে গেছে ব্যাপক ক্ষতির ছাপ।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার আটটটি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় আনুমানিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ জন। এতে এক হাজার ২৭৭টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত ও ৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।

তবে জেলায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকার জরুরি ত্রাণ সহায়তা দাবি করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা নিম্নচাপটি বর্তমানে সাতক্ষীরা অঞ্চলে স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে। তবে এর প্রভাবে পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৯.০৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে।

এদিকে, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার বহু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, ঘের ও কৃষিজমি। অনেক জায়গায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে উঁচু বাঁধ বা স্কুলে ঠাঁই নিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেক বাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় দুর্যোগের চাপ সহ্য করতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় না হয়েও এমন ক্ষয়ক্ষতি তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।

স্থানীয়রা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘূর্ণিঝড় যেমন ‘সিত্রাং’, ‘মোখা’ বা ‘বুলবুল’-এর তুলনায় এবারের গভীর নিম্নচাপে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ—এই নিম্নচাপ স্থলভাগে উঠে দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকায় এবং অমাবস্যার জোয়ারের সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চমাত্রার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, অনেক বাঁধ দুর্বল ও অপর্যাপ্ত থাকায় ক্ষতি বহুগুণে বেড়েছে।

এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জরুরি খাদ্য বা চিকিৎসাসেবা না লাগলেও, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে প্রশাসন। পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও আর্থিক সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা দেলোয়ার হোসেন।

এসআই/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।