পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে টাকার বিনিময়ে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিটের (ভিডব্লিউবি) চাল বিতরণ করার অভিযোগে ১১ ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার (২৬ মে) রাতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে তাদের আটক করে থানায় নেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

এর আগে ওই ১১ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি ভিডব্লিউবির চাল বিতরণে প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে অবৈধভাবে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিকেলে এ ঘটনায় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন তারা। ঘটনার পর থেকে উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।  

বিষয়টি জানতে পেরে সেনাবাহিনীর বোদা উপজেলা সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোট এক লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা।  

আটক ইউপি সদস্যরা হলেন- বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম, আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য শেফালী রাণী, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।

এদিকে রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আটকের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন সেনাবাহিনীর বোদা সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ভিডাব্লিউবির চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আদায় করা এক লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়। পরে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ১১ জনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের দুস্থ নারীদের সাহায্যার্থে সরকারিভাবে ভিডাব্লিউবি কার্ডের আওতায় ২৫৮টি পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসের মোট ১৫০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এসময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০-৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ওই ইউপি সদস্যরা। পরে সুবিধাভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ১১ ইউপি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

স্থানীয় বাসিন্দা উপকারভোগী দুলাল রহমান ও উপকারভোগী বকুলের শ্বশুর আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছ থেকেও টানা পাঁচ মাসের চাল দেওয়ার নামে ৫০০ টাকা করে নিছে। টাকা না দিলে চাল পাবো না বলছে। তাই আমরা টাকা দিছি।

হাসিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি সদস্যরা এ চাল বিতরণের জন্য স্থানীয় সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলেন। আসলে চরম একটা অন্যায় কাজ করেছেন তারা। যেখানে সরকার এ চালে টাকা নিচ্ছে না, উল্টো তারা নিচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের কঠিন বিচার হওয়া দরকার।

শাহিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এর মধ্যে আজ এটা হয়েছে এবং প্রকাশ পেয়েছে বলে তারা আটক হয়েছেন। অনিয়মের কারণে আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে বলতে চাই, যেহেতু ১১ জন সদস্য আটক হয়েছেন, তাই তাদের বিচার কার্যক্রম চলা অবস্থায় আমাদের পরিষদের ও ইউনিয়নের সেবা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য যেন প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে।

এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়অ হবে। তারা একটি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এর মাধ্যমে দেশে একটি নজির স্থাপন হবে।

এসআই