ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

সালতামামি

সুপ্রিমকোর্ট-১

আলোচনায় ওষুধ-পানি-মশা-পণ্য-নদী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:১৪, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
আলোচনায় ওষুধ-পানি-মশা-পণ্য-নদী

ঢাকা: মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস, নিম্নমানের পণ্য প্রত্যাহার, বায়ুদূষণ রোধ, মশা নিধন কিংবা ওয়াসা থেকে বিশুদ্ধ পানি চেয়েও চলতি বছর উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নাগরিকরা। যে বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে সংবিধানে রক্ষিত অধিকার অনুসারে নাগরিকদের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে এসব বিষয়ে নাগরিকদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এসব আবেদনের পর প্রয়োজনীয় শুধু আদেশই নয়, নদী রক্ষায়ও যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

এছাড়া উচ্চ আদালতও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মশক নিধনে আদেশ দিয়েছিলেন।  

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ
গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।

এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন ১৭ জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।

পরে আদালত সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ‍নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
সে অনুসারে সময়ে সময়ে কোটি কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসের কথা আদালতকে জানিয়েছে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করেছে।

এ রিট মামলাটি এখনও বিচারাধীন।  

পানি
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নামা উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন।

ওই কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে অবশ্য ওয়াসা বলেছে- ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে আমরা ওয়ান বাই ওয়ান কারেক্টিফিকেশনে গেছে।

এ রিট মামলাটিও বিচারাধীন।  

৫২ পণ্য
গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।

এর আদালত অবিলম্বে বাজার থেকে ৫২ পণ্য অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আইনানুসারে ব্যবস্থা (জব্দ বা ধ্বংস) নিতে বলেছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়।  

মশা নিধন
৪ জুলাই এক স্বপ্রণোদিত এক আদেশে ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়ে দিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশের ধারবাহিকতায় দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ও স্থানীয় সরকারের সচিবকে হাইকোর্ট ডেকেছিলেন।

পরে ১২ নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করার নির্দেশ দেন। কমিটির অপর সদস্য হিসেবে থাকবেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, যার পদমর্যাদা হবে ন্যূনতম যুগ্ম সচিবের সমান।

এই কমিটি চলতি বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশা নির্মূলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করবে।

নদী
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইট অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৬ সালের রিটে জারি করা রুলের ওপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ওই ঐতিহাসিক রায় দেন।

১ জুলাই ওই রায় প্রকাশিত হয়। রায় থেকে উদ্ধৃত করে ওইদিন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, পরিবেশ ও জলবায়ুসহ নদ-নদী ইত্যাদি জাতীয় সম্পত্তি। তাই এসব দখল ও দূষণকারীদের দেশের ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ছয় মাসের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতকে জানাতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তারা সব ধরনের ব্যাংকঋণের অযোগ্য মর্মে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রায়ে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে তুরাগসহ দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিলের আইনগত অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।