ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

রোজা হোক ছয়টি গুণসম্পন্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
রোজা হোক ছয়টি গুণসম্পন্ন রোজা হোক ছয়টি গুণসম্পন্ন

হাদিসের ভাষ্যমতে রোজা মুমিনের ঢাল। জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধের ঢাল। পবিত্র কোরআনে শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কারণ সে প্রতিনিয়ত গভীর সব যড়ষন্ত্রের মাধ্যমে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিতে বদ্ধপরিকর। শয়তানকে পরাভূত করে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যেতে শয়তানের সঙ্গে মানুষের লড়াই একটি সাধারণ ব্যাপার।

এতে কেউ হারে, কেউ জিতে যায়।

শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রতিহত এবং নিজের নফসকে দমন করার জন্য পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা অন্যতম। রোজার মাধ্যমে নফস দমিত হয়। শয়তান হয় পরাভূত।  

শয়তানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত মুমিনের ঢাল রোজা। এই ঢাল যেন অক্ষুন্ন থাকে ইসলামিক স্কলাররা সে নিমিত্ত ছয়টি গুণের কথা বলেছেন। রোজাদাররা এই গুণগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারলে তার রোজা হবে নির্মল, নিষ্কলুষ। তা দ্বারা শয়তানের চক্রান্তকে নিমিষেই প্রতিহত করা সম্ভব হবে।  

এক. নজরের হেফাজত বা চোখের যথাযথ ব্যবহার। অপাত্রে দৃষ্টিদান থেকে বিরত থাকা এর মূল উদ্দেশ্যে। হাদিসের ভাষ্যমতে, বদনজর শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর। তা দিয়ে সে মানুষকে ঘায়েল করে। নজরের হেফাজত করলে ঈমানের স্বাদ লাভ করা যায়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অন্য নারীর প্রতি কুদৃষ্টি ইবলিশের বিষাক্ত তীরতুল্য। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে তা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে ঈমানের মিষ্টতা দান করেন। ’ -ইতিলাকুল কুলুব: ২৭৩

দুই. জবানের হেফাজত। নিজের মুখ দিয়ে অন্য কাউকে কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়া অন্যতম মহৎ গুণ। অন্য কাউকে গালি দেওয়া, অশ্লীল কথা বলা, পরনিন্দা বা গীবত করা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এমনকি মুখ ভেংচি কেটে কারও মনে আঘাত করাও এর আওতাধীন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার হাত এবং জবানের অনিষ্ট থেকে মুসলিম মুক্ত থাকে সেই প্রকৃত মুসলিম। ’ -মুসনাদে আহমাদ: ৬৫১৫

তিন. কানের হেফাজত। ইচ্ছাপূর্বক নিষিদ্ধ শব্দতরঙ্গ শ্রবণ থেকে নিজের কানকে পবিত্র রাখা এর উদ্দেশ্য। গীবত কিংবা পরনিন্দাও এর আওতাভুক্ত। পরনিন্দা করা যেমন গোনাহ, ঠিক তেমনি তা শোনাও পাপ। সূরা মায়িদার বেয়াল্লিশ নম্বর আয়াতে মিথ্যা কথা শোনার অসারতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  

চার. উল্লিখিত অঙ্গগুলোসহ শরীরের অন্যসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর হেফাজত করা। শরীরের যাবতীয় অঙ্গগুলোকে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালনা করা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুশীলন করা। একটি মাস যদি এই অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আশা করা যায় যে; বাকি এগারো মাসও এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
 
পাঁচ. অতি ভোজন পরিহার করা। নফসকে দমন করার জন্য রোজা অন্যতম হাতিয়ার। শুধু রোজা কেন বছরের কোনো সময়ই অতি ভোজন কল্যাণকর নয়। শরীরের জন্যও নয়, আত্মার জন্যও নয়। পরিমিত আহার সুস্থতার চাকিকাঠি। প্রয়োজনীয় আহারের বাইরে যা কিছু হয় তাই অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। আর স্বভাবতই অপচয় একটি বর্জনীয় কর্ম। পবিত্র কোরআনে অপব্যয়কারীকে শয়তানের সহোদর আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ছয়. রোজা কবুল হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে অন্তরে ভয় জাগ্রত রেখে আল্লাহর রহমতের কামনা করা। কোনো মানুষ শুধু নিজের আমলের দ্বারা জান্নাতের উপযুক্ত হতে পারে না। এ জন্য চাই মহান রবের অপার দয়া-অনুগ্রহ। আবার শুধু তার দয়ার আশায় আমল বন্ধ করে দিলেও তার নির্দেশ অমান্য হয়। কারণ তিনি আমলের নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাই আমল করার সঙ্গে সঙ্গে তার রহমতের আশা করে যেতে হবে।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাউকে তার আমল মুক্তি দেবে না। ’ সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করেন, আপনাকেও না? উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না। তবে আল্লাহতায়ালা নিজ মাগফিরাত ও রহমত দিয়ে আমাকে আচ্ছাদন করে নেবেন। ’ -মুসনাদে আহমাদ: ৭২০৩

লেখক: মুহাদ্দিস, ইমাম ও প্রবন্ধকার

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।