ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবিতে থাকছে নারীর কর্ম নিয়ে বিশেষ অালোচনা

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
আজ তারাবিতে থাকছে নারীর কর্ম নিয়ে বিশেষ অালোচনা

চলতি রমজান মাসের আজ ১৭তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে নারীর কর্ম ও কর্মসংস্থান।

এ বিষয়ে সূরা কাসাসের ২৩-২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যখন সে (মুসা) মাদইয়ান এলাকার কূপের নিকট পৌঁছল তখন দেখল, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পেছনে দু’জন নারী নিজেদের পশুগুলোকে আগলে রাখছে। তিনি (সহানুভূতিশীল হয়ে) বললেন, তোমাদের কী হল? (তোমরা দূরে দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছ না কেন?) তারা (নারীদ্বয়) বলল, রাখালরা না যাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাব না। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। তখন তাদের পশুগুলোকে তিনি পানি পান করালেন। ... (কিছুক্ষণ পর) নারীদ্বয়ের একজন শরমের সঙ্গে তার কাছে এসে বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। তিনি আপনাকে পারশ্রমিক দেবেন। কেননা, আপনি আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন। ’

আলোচ্য আয়াতের মেয়ে দু’জন হলেন আল্লাহর নবী হজরত শোয়াইব (আ.)-এর কন্যা। হজরত মুসা (আ.)-এর জিজ্ঞাসার উত্তরে তারা যা বলেছে তার ভাবার্থ এমন, আমরা আমাদের প্রাণীগুলোকে পানি পান করাব। কিন্তু আমরা পুরুষদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজে বিশ্বাসী নই। আমরা নারীদের স্বতন্ত্র কর্মস্থলে বিশ্বাসী। তাই রাখালদের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় দূরে দাঁড়িয়ে আছি। তদুপরি আমরা বাড়ির বাইরে বের হয়ে কর্ম করতেও আগ্রহী নই। কিন্তু আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। প্রাণীকে পানি পান করানোর মতো সার্মথ্য তার দেহে নেই। প্রাণীকে পান করানোর মতো অন্য কোনো পুরুষও আমাদের পরিবারে নেই।

হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে হজরত শোয়াইব (আ.)-এর কন্যাদ্বয়ের এই কথোপকোথন নারীর কর্মসংস্থান বিষয়ে ইসলামের শ্বাশ্বত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা করে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীকে ঘরের বাইরে যেয়ে কর্ম করতে কোরআন ও হাদিসের কোথাও নিষেধ করা হয়নি। আবার কোরআন ও হাদিসের কোথাও নারীকে আদেশ করা হয়নি যে, হে নারী! তুমি উপার্জন কর, তুমি স্বাবলম্বী হও। ইসলাম নারীর কাঁধে সংসারের কোনো ব্যয়নির্বাহের দায়িত্ব অর্পণ করেননি। এমনকি তার নিজের ব্যয়নির্বাহের দায়িত্বও তার ওপর অর্পণ করা হয়নি। বিয়ে পূর্ব পর্যন্ত নারীর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব পিতার ওপর। বিয়ের পর এ দায়িত্ব স্বামীর ওপর। বার্ধক্যে এ দায়িত্ব চলে যাবে ছেলে-সন্তানের ওপর।


কিন্তু অনেক পরিবারেই অনেক সময় নারীর জন্য এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলে আসবে যে, তার ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনো সক্ষম পুরুষ তার পরিবারে থাকবে না। বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকেই উপার্জন করে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। হয় তো পরিবারে কোনো পুরুষ সদস্য থাকবে না। অথবা থাকলেও কর্মক্ষম থাকবে না। অথবা কর্মক্ষমতা থাকলে চরম দায়িত্বহীন, অলস ও অকর্মণ্য হবে। এ সব পরিস্থিতিতে নারীর বাইরে কর্ম করা ব্যতীত ভিন্ন কোনো উপায় থাকে না। তাই ইসলাম নারীর জন্য বাইরের কর্ম নিষিদ্ধ করেনি। কোনো আয়াত ও হাদিসে বাইরে যেয়ে কর্ম করাকে হারাম করা হয়নি। আলোচ্য আয়াতে দেখা যাচ্ছে, হজরত শোয়াইব (আ.)-এর কন্যাদ্বয়ও নিজেদের ছাগলকে পানি পান করানোর জন্য বাইরে এসেছেন।

নারী বাইরে কর্ম করতে গেলে তার কর্মস্থল কেমন হবে? তার সমাধানও আলোচ্য আয়াতে খুব স্পষ্টভাবেই দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতের আলোকে বু‍ঝা যায়, পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী কর্ম করবে না। ইসলামি চিন্তাবিদরা এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেন, নারীদের জন্য পৃথক কর্মস্থলের ব্যবস্থা করে দেওয়া করণীয়। বিষয়টিকে বাস্তবতার নিরিখে নির্মল ও পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবলেই পরিবর্তন সম্ভব।

আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হয় যে, লজ্জা নারীর ভূষণ। জন্মগতভাবে এ লজ্জা নারীর ইজ্জতের রক্ষাকবচ। পার্থিব জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে নারীকে বিভিন্ন সময় পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু কথার বলার সময় তাকে সতর্ক থাকতে হবে। লজ্জা ও শরমের প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে। এ লজ্জা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার অন্তরায়।

ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা নারীর অন্যতম একটি গুণ। একটি সংসার সুন্দরভাবে, সুখ-শান্তির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংসারের সব কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হতে হয়।

একটি সংসারে প্রধানত দু’ ধরণের কাজ থাকে। কিছু কাজ করতে হয় বাইরে যেয়ে; আর কিছু কাজ করতে হয় ঘরের ভেতরে থেকে। নবী ও সাহাবাদের পারিবারিক জীবনযাপন আমাদের শিক্ষা দেয়, বাইরের কাজগুলো সমাধা করবে সংসারের পুরুষরা। আর ঘরের কাজগুলো সমাধা করবে সংসারের নারীরা। আবার ঘরের কাজে নারীকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা পুরুষের জন্য নবীর সুন্নত বিশেষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘন্টা, জুন ২২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।