ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

হালাল উপার্জন রোজাসহ সব ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
হালাল উপার্জন রোজাসহ সব ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের বিধিবদ্ধ ইবাদত তথা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত প্রভৃতি কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো- সৎ পথে আয়-উপার্জন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে তোমরা আহার করো।

’ -সূরা বাকারা : ১৬৮

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যেসব পবিত্র বস্তুসামগ্রী রুজি হিসেবে দান করেছি, তা থেকে ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করো। ’ -সূরা বাকারা : ১৭২

রোজাদারকে সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ভেজালমুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে সবকিছুতে নিজেদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে, তা না হলে ইমান-আমলের পরিপূর্ণতা হবে না এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না। তাই প্রত্যেক রোজাদারই যেন খাদ্যদ্রব্যসহ যাবতীয় আয়-ব্যয়, খরচাদি সৎ ও বৈধ পথে অর্জিত অর্থ দ্বারা জীবন যাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। নিজেদের পার্থিব জীবন নির্বাহ সম্পূর্ণ হালাল উপার্জিত অর্থ দ্বারা পরিচালিত করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকরণীয়।

একদা নবী করিম (সা.) মাহে রমজানের রোজার ফজিলত বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা নিজ পরিবারবর্গসহ সন্তুষ্টি সহকারে রমজানের ৩০টি রোজা রেখেছে, হালাল বস্তু দ্বারা ইফতার করেছে, আল্লাহ তাদের ওই প্রকার পুণ্য দান করবেন, যেমন তারা মক্কা ও মদিনা শরিফে রোজা রেখেছে। ’

রোজাদার ব্যক্তি কখনোই অবৈধ অর্থে কোনো প্রকার খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে কামনা করবেন না, অথচ কিছুসংখ্যক ভেজাল ব্যবসায়ীর মধ্যে মানুষকে ঠকিয়ে অনৈতিকভাবে অধিক মুনাফা অর্জনের চিন্তা তাদের নেকআমল বরবাদ করে ফেলে। এদের স্বরূপ উন্মোচন করে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে শরীরের গোশত হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ –বায়হাকি ও আহমাদ

সৎভাবে মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও জীবিকার প্রয়োজন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে চাই পর্যাপ্ত জীবনোপকরণ, যার পরিশ্রমলব্ধ প্রাপ্তি মানুষকে করে উপভোগ্য ও ছন্দময়।

ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো একজন মুসলমান হালাল রিজিক অর্জনের জন্য যেমন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন, তেমনি হারাম বর্জনের জন্যও তিনি সদা সতর্ক থাকবেন। কেননা, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো এক ব্যক্তি দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করে দোয়া করে বলে, ‘হে আল্লাহ! হে আল্লাহ!’ অথচ তার খাদ্য, পানীয় ও পোশাক- সবকিছুই হারাম উপার্জনের। এমনকি সে এ পর্যন্ত হারাম খাদ্য দ্বারাই জীবন ধারণ করেছে। সুতরাং তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ –সহিহ মুসলিম

ইসলামে জীবিকা অন্বেষণের জন্য সৎ পথে প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের জোরালো তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকুলের জীবিকা প্রদান করেন, তবে অক্লান্ত পরিশ্রম, অনেক কষ্ট ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বান্দাকে হালালভাবে বৈধ রুজিরোজগার অর্জন করতে হয়, এটাই ইসলামের বিধান। ইসলামি জীবনব্যবস্থায় জীবনোপকরণ অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাকে ফরজ ইবাদত হিসেবে গণ্য করে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘হালাল রুজি অন্বেষণ করা ফরজের পরেও একটি ফরজ। ’ –বায়হাকি

হালাল উপার্জন তথা জীবিকা নির্বাহের মূলধারাকে ইসলাম সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে দিয়েছে, যাতে আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে মানুষ জীবন আর জীবিকার আবর্তে তার মানবিক গুণাবলি বিসর্জন দিয়ে অমানুষে পরিণত না হয়। যদিও নৈতিক অবক্ষয় ও ইসলামি মূল্যবোধ বিবর্জিত ভোগলিপ্সা মুসলমানদের চরম দুনিয়ামুখী করে তুলেছে।

হাদিস শরিফে বলা হয়েছে যে, ‘মানবজাতির কাছে এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ কামাই-রোজগারের ব্যাপারে হালাল-হারামের কোনো বাছ-বিচার করবে না। ’ –সহিহ বোখারি

তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘হারাম পথে উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয়, তবে আল্লাহ সেই দান কবুল করেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্য সেই সম্পদ ব্যয় করলে এতেও বরকত হয় না। সে ব্যক্তি যদি সেই সম্পদ রেখে মারা যায়, তাহলে তা তার জাহান্নামে যাওয়ার পাথেয় হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায়কে মেটান না, বরং তিনি নেক কাজ দিয়ে অন্যায়কে মিটিয়ে থাকেন। ’ –মিশকাত

সুতরাং একজন রোজাদার সমাজে কোনো ধরনের হারাম উপার্জন বা অবৈধ লেনদেন করবেন না, কাউকে প্রতারণা করবেন না, কারও ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধনের চিন্তাও করবেন না বরং সর্বদা পরোপকারে লিপ্ত থাকবেন এবং পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ মোতাবেক হালাল জীবিকা অর্জন করে জান্নাত লাভের পথ সুগম করবেন। যেমনভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো! জীবিকা উপার্জনে বৈধ উপায়-উপাদান অবলম্বন করো। রিজিক লাভে বিলম্ব তোমাদের যেন অবৈধ পন্থা অবলম্বনের পথে না ঠেলে দেয়। ’ -ইবনে মাজা

বুজুর্গ আলেমদের অভিমত হলো, হালাল খাদ্যদ্রব্য আহার করলে দেহ-মন সজীব হয়ে ওঠে এবং আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। কোনো মানুষ অসৎ পথে অর্জিত অর্থ দ্বারা সুস্বাদু খাবার এবং মূল্যবান জিনিসপত্র ক্রয় ও ব্যবহার করে মানসিক তৃপ্তি পায় না। জাগতিক অর্থ-সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা ও অতিরিক্ত মোহ মানুষকে ঘুষ-দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। হারামভাবে আহরিত সম্পদে আল্লাহর বরকত থাকে না।

অতএব, রোজাদারদের বৈধভাবে আয়-উপার্জন, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান যথাযথ মান্য করে চলা এবং অবৈধ পন্থায় হারাম উপার্জন, সর্বপ্রকার অবৈধ লেনদেন ও অনৈতিক কাজ-কারবার থেকে সর্বাবস্থায় বিরত থাকা উচিত।

আসুন, মাহে রমজানে ইহকালীন ও পারলৌকিক জীবনের ভয়ভীতি, শঙ্কা মাথায় রেখে সব ধরনের হারাম উপার্জন, সুদ-ঘুষসহ অবৈধ লেনদেন, লোভ-লালসা, অন্যায়-অপকর্ম ও যাবতীয় কৃপ্রবৃত্তি থেকে নিজেদের হেফাজত করি এবং নিজেদের জীবন সর্বতোভাবে সুখ-শান্তিময় করার আপ্রাণ চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘন্টা, জুন ১২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।