ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আরব-আমিরাত

পারস্য উপসাগরে সন্দ্বীপের মাঝিরা

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
পারস্য উপসাগরে সন্দ্বীপের মাঝিরা আরব সাগরের তীরে বাঁধা নৌকা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দোহা, কাতার থেকে: ওয়েস্ট বে ধরে দোহায় পারস্য উপসাগরের তীরে হাঁটলে চোখে পড়বে বেশ কিছু বড় নৌকা। যেগুলোর ওপরে ছামিয়ানা টানানো। ভেতরে সোফার মতো বসার জায়গা রয়েছে। মিউজিয়াম অব ইসলামিক অার্টকে হাতের বামে রেখে এগোলে কয়েকজন এসে বলবেন, 'বোট ড্রাইভ?'

উত্তরে পথচারী বা পর্যটক হ্যাঁ সূচক সম্বোধন করলে হাসি ফোটে নৌকার মাঝি ও তার সহকারীদের। ঘণ্টা ১৫০ রিয়ালে সাগরে ঘুরিয়ে অানেন এ মাঝিরা।

সেক্সি ভিসায় এরা সকলেই অারব সাগরে বাংলাদেশের সন্দ্বীপ উপজেলার মাঝি।

সেক্সি ভিসা? এই নাম দেওয়ার কারণ এরা অাসলে সবাই ফ্রি ভিসায় কাতারে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে, ফ্রি ভিসা বলতে কিন্তু দাফতরিকভাবে কোনো ভিসা নেই। বরং যারা কোম্পানির অধীনে এসে আর নিজেদের কোম্পানির অধীনে চাকরি না পেয়ে বা প্রতারিত হয়ে স্বাধীনভাবে চলছিলো তাদেরকেই বলা হয় ফ্রি ভিসার লোক।
আরব সাগরে ভাসছে নৌকা/ছবি: বাংলানিউজসাগরের এই অংশকে বলা হয় অাল কোর্নিশ। অর্ধবৃত্তাকার সাগরের এই অংশটুকু দোহা শহরকে বিশেষভাবে অাকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর এই সাগরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি নৌকা পর্যটকদেরর নিয়ে ঘণ্টা হিসেবে ঘুরে। চলে যায় সাফুরিয়া বা জিজিরা দ্বীপে। প্রতিটি নৌকা পরিচালনা করেন তিনজন করে মানুষ। ইঞ্জিন নৌকাগুলোতে রয়েছে নাবিক ছাড়াও ২ জন সহকারী। আর এদের বেশিরভাগেরই বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায়।

প্রায় ২০ মিটার দীর্ঘ নৌকাগুলোতে দু'পার্শ্বে লম্বালম্বি করে সোফা বসানো হয়েছে। মাঝখানে বেশ প্রশস্ত জায়গা। বোঝা যায় মানুষের বিনোদনের জন্য এ স্থানটুকু রাখা হয়েছে। রঙ্গিন বাতি দিয়ে সাঁজানো এ নৌকায় রয়েছে কয়েক পেয়ারের সাউন্ড সিস্টেম। রয়েছে দুনিয়ার যে কোনো দেশের গান শুনানোর ব্যবস্থা।

৬ বছর অাগে কাতারে এসেছিলেন সন্দ্বীপের উত্তম দাশ। রোববার (২১ মে) বিকেলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে বাসায় কাজ করতাম। পরে ছেড়ে দিয়ে গত ৪ বছর ধরে এ নৌকার ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। অক্টোবর থেকে ফ্রেব্রুয়ারিতে পর্যটক মৌসুমে অায় হয় বেশ। এই সময়টা একটু ডাল যায়।

তিনি জানান, নৌকাটি একজন কাতারির মালিকানায় রয়েছে। মাসে তাকে ৬ হাজার রিয়াল কফিল দিতে হয়। এছাড়াও তেল ও অন্যান্য মেরামতের খরচ বহন করতে হয়। পর্যটন মৌসুম না হলেও মাস শেষে প্রতিজন এক হাজার থেকে বারশো রিয়াল আয় করেন।
 নৌকার তিন মাঝি/ছবি: বাংলানিউজআরেকজন মাঝি বিজয় রায় বলেন, এখানে নব্বই ভাগ লোকই সন্দ্বীপ থেকে আসা। আর বাকি কয়েকজন মাঝি রয়েছেন নেপাল ও ভারতের।

নৌকার যাত্রী বেশিরভাগই পর্যটক। মিশর ও আরব দেশ ছাড়াও ভারতীয় পর্যটক বেশি। এছাড়াও বাংলাদেশের অনেকেই ঘুরেন এই সাম্পানগুলোতে। ঘণ্টা ১৫০ রিয়াল, অাধাঘণ্টা ৮০ রিয়াল, ১৫ মিনিট ৫০ রিয়াল হিসেবে সাগরে নৌকা ভাসান মাঝিরা। তবে, বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি ঘণ্টা ১৩০ রিয়ালেই ঘুরিয়ে অানেন তারা।

উত্তম বলেন, এখন তারা মোটামুটি সব ভাসাতেই দক্ষ। বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে প্রয়োজনীয় শব্দগুলো শিখে ফেলেন। আরবি, হিন্দি, ইংরেজির মতো ভাষাগুলো অবলীলায় বলে যান।

এখানে দেড়শোর ওপর বাংলাদেশি মাঝি রয়েছেন। তারা প্রায় প্রত্যেকেই সন্দ্বীপ থেকে দোহা এসেছেন। এবং এরা প্রায় সকলেই সনাতন ধর্মাবলম্বী।

২০২২ বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারে বিরাট সংখ্যক পর্যটকদের অাগমণ ঘটবে। তখন নৌকায় সাগর দেখানোর এ ব্যবসা অারো জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন এই মাঝিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
এমএন/ওএইচ/

**
মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।