ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রাশিয়ায়

মোহাম্মদ হামিদুল হক, রাশিয়া থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রাশিয়ায়

রাশিয়া থেকে: উন্নত, নির্বিঘ্ন উচ্চশিক্ষার জন্য পছন্দের দেশ হতে পারে রাশিয়া। তুলনামূলক কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে এখানে।

জীবনযাত্রার উন্নত মান হলেও খরচ কম। ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

জেনে নেওয়া যাক রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার টুকিটাকি:
ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী রাশিয়ায় শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় সেপ্টেম্বরের শুরুতে। রাশিয়ান ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায় এখানে। ইংরেজি মাধ্যমের জন্য আইইএলটিএস-এ স্কোর করতে হবে ৬ দশমিক ৫ অথবা করা থাকতে হবে সমমানের টোফেল।

কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম অপেক্ষা রাশিয়ান মাধ্যমে পড়ালেখা করতে পারলে সুবিধা পাওয়া যাবে বেশি। কেননা রাশিয়ায় ইংরেজির ব্যবহার কম। এদেশের মানুষ নিতান্ত না পারতে ইংরেজি বলে। সুতরাং, রাশিয়ান ভাষায় পড়ার জন্য প্রথমে প্রস্তুতিমূলক একবছরের কোর্স শেষ করতে হয়। এসময় রাশিয়ান ভাষা, রাশিয়ান ভাষায় পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও অন্যান্য বিষয়ে পড়ানো হবে।

রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির টিউশন ফি বিষয়, শহর-নগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন। বাংলাদেশি টাকায় দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মধ্যে। চাইলে টিউশন ফি রাশিয়ায় এসেও পরিশোধ করা যায়। আরেকটি সুবিধা, রাশিয়ায় পড়তে গেলে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয় না। ব্লক অ্যাকাউন্ট বা অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। বছরে চার ধাপে ফি দেওয়ার সুযোগ আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাত খরচ বাবদ কিছু বৃত্তি দেওয়া হয়, তা দিয়ে চলে যায় টুকিটাকি খরচ।
জীবনযাত্রার খরচও অন্য দেশের তুলনায় এখানে কম। মাসে হাজার পাঁচেক টাকা হলেও চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বল্পমূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা আছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবাসের ব্যবস্থা করা হয়।

তবে ভর্তি প্রক্রিয়া এখানে একটু সময়সাপেক্ষ। ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিজে নিজেই করা সম্ভব। কোনো এজেন্সির কাছে গেলেই বিপদ। খসাবে বিপুল অংকের টাকা। নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে কারও সহযোগিতা ছাড়া নিজেই সব করতে পারবেন।

প্রথমে আপনার সব সার্টিফিকেট ও মার্কশিট সত্যায়িত করতে হবে শিক্ষাবোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। তারপর তা অনুবাদ করতে হবে রাশিয়ান ভাষায়। অনুবাদ করা কপিগুলো রাশিয়ান দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হবে। পরবর্তী ধাপে আপনার পাসপোর্ট ও ইংরেজি জন্ম সনদও রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। শেষ ধাপে সমস্ত কাগজপত্র নূন্যতম চার সেট ফটোকপি করে নোটারী করতে হবে। মেডিকেল সার্টিফিকেটও প্রয়োজন। যাতে আপনার এইচআইভিসহ জটিল কিছু রোগব্যাধি নেই প্রমাণের জন্য।

এবার আপনার সমস্ত কাগজপত্র মোটামোটি তৈরি হয়ে গেছে।

আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করে পছন্দের বিষয় সম্পর্কে জেনে ইমেইল করবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের ডিনকে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন ডিন ও তার সহযোগী থাকে। আপনি ইমেইলের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ইমেইল অ্যাড্রেস পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাডমিশনের ভিতর থেকে আন্তর্জাতিক বিভাগের ডিনের নাম, ফোন ও ইমেইল অ্যাড্রেস পেয়ে যাবেন। এখন ইমেইল করে নিজে নিজে সম্পন্ন করবেন ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজ।

ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার নামে একটি অফার লেটার পাঠাবে। অফার লেটার পেতে ৪০-৬০ দিন সময় লাগতে পারে। ধৈর্য হারাবেন না। অফার লেটার পাওয়ার পর রাশিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করবেন নিয়ম অনুসারে। সব কিছু ঠিক থাকলে ভিসা পাওয়া কোনো ঝামেলা নয়।

নিয়মানুসারে সহজেই ভিসা পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে এক বছরের টিউশন ফি পরিশোধ করাই উত্তম। তাহলে আর কোনো বাধাই রইলো না।

আরও কিছু জানার প্রয়োজন হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন বাংলাদেশে রাশিয়ান সরকারের নিজেস্ব প্রতিষ্ঠান ‘রাশিয়ান বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ’ রোড নম্বর ১০, ধানমন্ডি, ঢাকা। বিনামূল্যে আপনাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে তারা। প্রতি বছর রাশিয়ান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তিও দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ হামিদুল হক
শিক্ষার্থী জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া।
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।