ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

দুবাইয়ে বৈশাখী মেলা

উদয় হাকিম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১২
দুবাইয়ে বৈশাখী মেলা

দুবাই থেকে ফিরে: নলেজ ভিলেজ। যদিও এটি কোনো ভিলেজ বা গ্রাম নয়।

আধুনিক একটি শহর। বিশ্ববিদ্যালয়-শহর। বিশ্বের নামি-দামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে আনা হয়েছে এক কম্পাউন্ডে। তাই এরকম নাম।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মূল শহর থেকে অনেকটা দক্ষিণে এই নলেজ ভিলেজ। এখানেই হয়ে গেলো দুবাইপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে বৈশাখী মেলা।

৫ এপ্রিল। শুক্রবার। নলেজ ভিলেজে এ যেন শুধু বৈশাখী মেলা নয়, বাংলাদেশিদের মিলন মেলা। মেলাপ্রাঙ্গণে ঢুকতেই চোখে পড়ে বাঙ্গালিয়ানা আলপনা। মূল প্রবেশপথেই ঠাঁই পেয়েছে ঢেঁকি, কুলা, পালকি, রিকশা, দেশি ফল ইত্যাদি। ছোট্ট পরিসরের মেলাপ্রাঙ্গণ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।

পুরো গাছ তুলে আনা সম্ভব নয়। তাই আম-কাঁঠালের বন তৈরি হয়েছে ছবি দিয়ে। স্টলগুলোতে ছিলো নানা ধরনের বাংলা খাবার। পিঠা। শাড়ি। চোখে পড়লো রুশ ললনা ক্রিস্তিনার ঝালমুড়ির স্টল।

ক্রিস্টিন জানালো, সে ঝালমুড়ি খেতে খুব পছন্দ করে। তাই বাংলাদেশের এক বন্ধুর সহায়তায় এই স্টল। বিক্রি কেমন? জিজ্ঞেস করতেই হাসি। তার মানে পয়সার চেয়ে মজাটাই আসল।

একপাশে দেখা গেলো শিশু-কিশোরদের। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। সায়মা নামে এক কিশোরী আঁকছিলো একমনে। তার ক্যানভাসে ফুটে উঠছিলো সবুজ জমিনে লাল সূর্য। শাশ্বত-চিরায়ত বাংলা।

মূল মঞ্চে তখন নৃত্য-গীত। আরব্য আর বাংলা নৃত্যের মূর্ছনায় পুরো মেলাপ্রাঙ্গন বিমোহিত। প্রবাসী ছেলে-মেয়েরা যে কত ভালো নাচতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এরপর এলো যেমন খুশি তেমন সাজো পর্ব। এপর্বে নওশা ও পানওয়ালার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে ছোট্ট দুই শিশু।

প্রবাসীদের এই আয়োজনে মূল স্পন্সর ছিলো ওয়ালটন। পুরস্কার প্রদান পর্বে অতিথি ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসাল জেনারেল জাফর আহমেদ, দুবাই চিড়িয়াখানার প্রধান কর্মকর্তা ড. রেজা আলী, দুবাইয়ে ওয়ালটনের প্রধান ডিস্ট্রিবিউটর মাহমুদ মামুন, ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিংয়ের প্রধান লোকমান হোসেন আকাশ প্রমূখ।

ড. রেজা আলী বলেন, ``যত দূরেই থাকি না কেন, আমাদের অন্তরে সবসময় বাংলাদেশ। আর তাই বৈশাখী মেলায় না এসে পারি না। এটা শুধু বৈশাখী মেলা নয়, দেশের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও। ``

দেখে ভালো লাগলো- আশপাশের সবাই বাংলায় কথা বলছেন। বাংলা খাবার খাচ্ছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

মনে পড়লো মান্না দে’র গানের কথা ‘প্রিয় যবে দূরে চলে যায়/ সে যে আরো প্রিয় হয় জানি/ কতদিন দেখিনি তোমায়/ তবু মনে পড়ে তব মুখও খানি’। প্রিয় বাংলাদেশ দূরে থাকলেও প্রবাসীদের কাছে সে যে আরো প্রিয়!

ব্রাজিলের কার্নিভ্যাল আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দিব্য চোখে দেখতে পাই- সেদিন বেশি দূরে নেই; আমাদের পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী উৎসব একদিন বিশ্বজনীন হয়ে উঠবে।

দুবাইকে বলা হয় মরুভূমির গোলাপ। সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি হালে সংস্কৃতিরও কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই আধুনিক শহরটি এখন নানা কৃষ্টি-কালচারের আধার হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের এই মরুশহরেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরা। অন্যান্য সংস্কৃতির ভিড়ে নিজেদের জায়গা ঠিকই পাকাপোক্ত করছেন বাংলাদেশি এবং বাংলাভাষাভাষীরা।

মেলা শেষ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। একজন মানুষ যেখানেই থাকুন- মা আর মাটির আহবান কেই বা ফেরাতে পারেন! বাঙ্গালিরাতো আরো বেশি আবেগপ্রবণ। কারণ আমাদের সবার হৃদয়ে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ১৫ এপ্রিল, ২০১২

 সম্পাদনা: আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট  এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad