নতুনভাবে মহানগর হিসেবে পরিচয় পাওয়া নারায়ণগঞ্জ তিন-চারটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ক্ষমতার পালাবদলে তারাই ঘুরেফিরে আসছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারা সর্বদাই বেগবান রেখেছে চার শতাব্দী পার হয়ে আসা ঐতিহ্যবাহী নারায়াণগঞ্জ। শীতলক্ষ্যার পাড়ে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকেই নারায়াণগঞ্জ বাংলাদেশ সমৃদ্ধ করে আসছে। একসময় সোনালী আঁশের (পাঁট) দেশ বলে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের সুনাম ছিল। আর আজ গার্মেন্টস শিল্পের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করতে মহানগরের বড় অবদান রয়েছে। যুগ যুগ ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারায়াণগঞ্জের অবস্থা খুবই ভাল। পাট, গার্মেন্টস, হোসিয়ারি, সুতা, রঙসহ অন্যসব পণ্য বাণিজ্যেও এ শহর অনন্য।
তিন দিকে নদী, উত্তরে রাজধানী ঢাকা। এক সময় নদীবন্দর হিসেবে নারায়াণগঞ্জ ছিল ট্রানজিট পয়েন্ট। এখান থেকে সারাদেশ তো বটেই কলকাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এ শিল্প শহরের। প্রথমদিকে, শহরটি খুব বড় ছিল না। অপরিসরে রাস্তা, স্বল্প যানবাহন, শহরের মধ্যে জলাশয়, সুন্দর বাড়িঘর, স্কুল, খেলার মাঠ নিয়ে শহরটি একটা শ্রীভাব ছিল।
একসময় এ জেলার পরিধি বড় ছিল, তখন নরসিংদী জেলা নারায়াণগঞ্জের সঙ্গে একীভূত ছিল। আগে যারা নারায়াণগঞ্জ দেখেছেন তারা হয়তো এখন এ শহরকে চিনতেই পারবেন না। তরুণ-তরুণীর মুঠোফোনে বাজছে নানারকম রিং টোন। সদৃশ্য বিপণিগুলো মুখরিত, বিভিন্ন ক্যাফে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। সোনামনিদের শিক্ষার জন্য অনেক ভালো স্কুল হয়েছে। তবুও নারায়াণগঞ্জের এই বেহাল অবস্থা?
নারায়াণগঞ্জে একটি পার্ক নেই। শিশু-কিশোরদের বিনোদন ও খেলার জন্য নেই কোনো মাঠ! প্রাতভ্রমণের জন্য নেই কোনো উপযুক্ত স্থান! প্রথম শ্রেণির কোনো হাসপাতাল নেই! রোগীদের বাধ্য হয়ে ঢাকা যেতে হয়। আর ঢাকা ও নারায়াণগঞ্জের যানজট নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে! একটি আধুনিক শহরের জন্য ভালো কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল, ভালো ডাক বাংলা অপরিহার্য। এসবের কোনো কিছুই নেই এই শহরে।
মেল ট্রেন, যাত্রী ও ফেরিওয়ালাদের বিচিত্র হাঁকডাকে নারায়াণগঞ্জকে একসময় ভিন্ন মাত্রা দিতো। আজ সে সব হারিয়ে গেছে। একসময় বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখাটা খুবই জনপ্রিয় ছিল। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হংস থিয়েটার গেছে কালের গর্ভে। সেখানে এখন বহুতল মার্কেট। বিক্রি হয়ে গেছে নিউ ডায়মন্ড (বাণী হল)। শীতলক্ষ্যা সেতু নিয়ে বন্দরবাসীর সঙ্গে বরাবরই ওয়াদা ভঙ্গ করা হয়েছে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার জন্য শীতলক্ষ্যা সেতুকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে সবাই।
এই নারায়াণগঞ্জ মহানগরকে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিরিয়ে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্বের। কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে নারায়াণগঞ্জকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করে, যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারলে নারায়াণগঞ্জ হয়ে উঠবে একটি আধুনিক মহানগর।
লেখক: কানাডা প্রবাসী, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর