যমুনাপাড়ে হলো সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড প্রদান

অনন্যা আশরাফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১১

ঢাকা: ৭ম সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে শুক্রবার যমুনা তীরের পূর্ব পাড়ে বসেছিলো হাজারো শিল্পী-দর্শকের মিলনমেলা। তাই হঠাৎ করেই নির্জন যমুনা পাড় হয়ে উঠেছিল আলো ঝলমল।

অনুষ্ঠানে সঙ্গীতের মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। আর এ পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছিল। এতে অংশ নেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা। সেইসঙ্গে ছিলেন ভারত, ভুটান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার শিল্পীরাও।

মনোমুগ্ধকর এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অবদান রেখেছেন শ্রদ্ধা জানানো হয় তাদের। সম্মাননা জানানো হয় বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার শিল্পীদের।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই থিয়েটার পালাকার মুক্তিযুদ্ধের ওপর এক মনোমুগ্ধকর পথনাটকের আয়োজন করে। এরপরই মঞ্চজুড়ে দেখানো হয় আমাদের অহংকার লাল সবুজ পতাকা।

ধীরে ধীরে মঞ্চ থেকে সে পতাকা সরে যেতেই মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের দুই উপস্থাপক আফজাল হোসেন ও  ফারজানা ব্রাউনিয়া।

জাতীয় সঙ্গীতের কোরাসের সঙ্গে সমবেতভাবে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানোর পরপরই মঞ্চে আসেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের নেতৃত্বে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফেরদৌস আরা, সুবীর নন্দী, অদিতি মহসিন, রিজিয়া পারভিন, এলিটা, কণা, সেরা কণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা।

আসেন আইয়ুব বাচ্চুর নেতৃত্বে ব্যান্ড উচ্চারণ, আর্টসেল ও শূন্য‘র সদস্যরা। তারা গেয়ে শোনান জর্জ হ্যারিসনের ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি।

এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করতে আসেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী সুজেয় শ্যাম, ফকির আলমগীর, রফিকুল আলম, অনুপ ভট্টাচার্য, রূপা খান, মালা খান, উমা খান, তিমির নন্দী, বুলবুল মহলানবিশ ও কল্যাণী ঘোষ। তাদের সম্মিলিত কণ্ঠ গেয়ে ওঠে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ...’।


অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে মঞ্চে আসেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। স্বাগত বক্তব্য শেষে সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরীকে মঞ্চে আহ্বান জানান তিনি।

বক্তব্য শেষে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ খ্যাত আবদুল জব্বারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৭ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের লাইফ টাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।

অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরী।
 
ভুটানের নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনার পর ঘোষণা করা হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীত বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম।

রবীন্দ্র সঙ্গীত বিভাগে ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইফফাত আরা দেওয়ান ও পপুলার অ্যাওয়ার্ড নন্দীতা ইয়াসমিন।

নজরুল সঙ্গীত বিভাগে ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ড. নাশীদ কামাল ও পপুলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তানভীর আলম সজিব। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাদী মহম্মদ, রূপা খান, ফেরদৌসী রহমান, ফেরদৌস আরা ও তিমির নন্দী।

এ সময় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করেন গত বছরের সিটিসেল চ্যানেল আই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিল্পী সজীব, সুমনা বর্ধন, মাহাদী ও সিঁথি।

এরপর পরিবেশিত হয় শ্রীলঙ্কার নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা।

উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিভাগে ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, মালা খান, তৌফিক নেওয়াজ।

এরপর ছায়াছবির দু’টি গানে পারফর্ম করেন নায়ক রাজ রাজ্জাক, অঞ্জনা, ফারুক ও রোজিনা। মরমী সঙ্গীত পরিবেশন করেন কিরণচন্দ্র রায়, সেলিম চৌধুরী, শাহনাজ বেলী, আকরামুল ইসলাম ও ফরিদা পারভীন।
 
এ সময় মঞ্চে আসে নেপালের নৃত্যশিল্পীদের একটি দল। তাদের  নৃত্য পরিবেশনার পর ঘোষণা করা হয় শ্রেষ্ঠ গীতিকার ও শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম।

এ বিভাগে গীতিকারের পুরস্কার পেয়েছেন জুলফিকার রাসেল ও পপুলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রবিউল ইসলাম জীবন।

সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন শফিক তুহিন ও পপুলার চয়েজ পেয়েছেন ইবরার টিপু। তাদেরকে পুরস্কৃত করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুজেয় শ্যাম ও মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও বুলবুল মহলানবিশ ।

এরপর লোকগীতি পরিবেশন করেন মোস্তফা জামান আব্বাসী, আসগর আলীম, চন্দনা মজুমদার।

এ সময় ঘোষণা করা হয় শ্রেষ্ঠ লোক সঙ্গীত ও শ্রেষ্ঠ আধুনিক সঙ্গীত বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম।

এ বিভাগে শ্রেষ্ঠ লোক সঙ্গীতশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন কিরণচন্দ্র রায় ও পপুলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাম কানাই দাস।

শ্রেষ্ঠ আধুনিক সঙ্গীতের পুরস্কার পেয়েছেন আসিফ ইকবাল ও এ বিভাগে পপুলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সুমনা বর্ধন। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ফরিদা পারভীন, ফকির আলমগীর, সৈয়দ আবদুল হাদী ও উমা খান।
 
ভারতের নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন মৌসুমী, ওমর সানী, ফেরদৌস, মিশা সওদাগর, নিপুণ, সজল, মীম। ছায়াছবির চারটি গানে পারফর্ম করেন তারা।

ছায়াছবি ও নবাগত শিল্পী বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ‘জীবনের গহীনে’ ছবিতে ‌‌‌‌‌‌তুমি আমার জীবনের গহীনে আস...গানের জন্য ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও এ বিভাগে পপুলার চয়েজ পেয়েছেন ‘আই লাভ ইউ’ ছবির গানের জন্য বাপ্পা মজুমদার ও কণা।

নবাগত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন নাহীদ সুলতানা ও পপুলার চয়েজ পেয়েছেন নিশিত সূর্য। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নায়করাজ রাজ্জাক, কল্যাণী ঘোষ, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও অনুপ ভট্টাচার্য।
 
অনুষ্ঠানে পপগানের একটি সেগমেন্ট অংশ নেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, কণা, হৃদয় খান ও মিলা।

 এ সময় নাম ঘোষণা করা হয় কাভার ডিজাইন ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বিভাগে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের পুরস্কার পেয়েছেন বাপ্পা মজুমদার ও পপুলার চয়েজ পেয়েছেন সাজ্জাদ আরেফিন।

কভার ডিজাইনে পুরস্কার পেয়েছেন তৌহিন হাসান ও পুপুলার চয়েজ পেয়েছেন সাইফুল ইসলাম তারিফ। তাদেরকে পুরস্কৃত করেন আফজাল হোসেন, মিনু হক, পান্না আজম ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সদস্যরা।

এ সময় মঞ্চে আসেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুবীর নন্দী, শাম্মী আখতার, মো. খুরশীদ আলম, অবিদা সুলতানা ও রিজিয়া পারভীন। তাদের কণ্ঠে ছিল সোনালী অতীতের মিষ্টি কিছু গান পরিবেশন।

ব্যান্ড সঙ্গীতের মুগ্ধকর পরিবেশনায় অংশ নেয় উচ্চারণ, আর্ক, ফেইস টু ফেইস ও আর্টসেল।

এ বিভাগের ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ব্যান্ড দল ডি-ইনিউশন ও পপুলার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ব্যান্ড দল বোহেমিয়ান।

ও মিউজিক ভিডিও এর জন্য ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন নাজমুল সাদাত ও মিউজিক ডিরেক্টর বিভাগে পপুলার চয়েজ পুরস্কার পেয়েছেন গাজী শুভ্র। পুরস্কার তুলে দেন আইয়ুব বাচ্চু, রফিকুল আলম ও ফিরোজ মাহমুদ।

এরপর দলীয় একটি গানে অংশ নেন বালাম, এলিটা, শুভ ও জুহাদ। এ সময় নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, ইবরার টিপু ও সহশিল্পীদের পরিবেশনায় একটি ধ্র“পদী সঙ্গীতের কম্পোজিশন উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে।

এরপর সহস্র শিল্পী সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে...। এ গানের মধ্য দিয়েই জমকালো এ অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।

এর আগে সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠানকে ঘিরে যমুনার পূর্ব পাড়ে অনুষ্ঠানস্থলে চলে দিনব্যাপী বাংলাদেশ মেলা।

বাংলাদেশ মেলায় ছিলো- নানা ধরনের স্টল, সাপ খেলা, নাগরদোলা, যাত্রা, বানর খেলা, হাতি ঘোড়া, বায়োস্কোপ, রণপা, লাঠি খেলা।

খাবারের স্টলগুলোতে ছিলো মুড়ি মুড়কি বাতাসা ইত্যাদি। পুরো মেলাজুড়ে জেলে, তাঁতী, বেদে, কামার-কুমার সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

চারু ও কারু শিল্পীদের প্রদর্শনীসহ ছিলো সার্কাস। মেলার ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে মহান মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

দিনব্যাপী পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক ও স্বাধীন বাংলা বেতারের গান।

৭ম সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শহিদুল আলম সাচ্চু। ক্যামেরায় ধারণকৃত এ অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আইতে আগামী ২ ডিসেম্বর সম্প্রচার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১১


সম্পাদক : জুয়েল মাজহার

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2024 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান