ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা সরকারের নেই: কর্নেল অলি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা সরকারের নেই: কর্নেল অলি এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল অলি আহমদ: ফাইল ফটো

ঢাকা: বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা সরকারের নেই মন্তব্য করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল অলি আহমদ বলেছেন, শেখ হাসিনা অবৈধ পন্থায় জোর করে ১৪ বছর দেশ শাসন করছেন। এখন আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যুব সমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

 

এলডিপি নেতা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলবো দয়া করে এখন ক্ষান্ত হন, প্রতিশোধের রাজনীতি চিরদিনের জন্য পরিহার করে সব প্রকার ক্ষমতার লোভ-লালসা পরিহার করে, মনুষ্যত্বের খাতিরে এবং সর্বোপরি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যতদ্রুত সম্ভব সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিষ্ঠাবান এবং দেশের মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের গঠিত একটি জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন। এটাই হবে রাজনৈতিক পরিপক্বতা এবং বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখতে হবে, দেওয়ালে মাথা ঠুকলে দেওয়াল ফাটে না, ফাটে মাথা।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথ এলডিপির দলীয় কার্যালয়ে বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থির পরিস্থিতিতে করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্নেল অলি বলেন, বর্তমান নিশিরাতের বিনা ভোটে, প্রশাসন দ্বারা নির্বাচিত অবৈধ সরকারের- সীমাহীন অদক্ষতা, লাগামহীন দুর্নীতি, জবাবদিহিহীনতা, সুশাসনের অভাব, মানবাধিকার লংঘন, সর্বত্র দলীয়করণ, বিচারহীনতা, এক দলীয় শাসন, খুন, গুমসহ সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসকরণ এবং নিত্য পণ্যের দ্রব্য মূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি এবং সর্বোপরি বেকার সমস্যার কারণে সরকার ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় বিএনপির ৭-৮ জন নেতাকে রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকশত নতুন মিথ্যা মামলা করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য আসামি করা হয়েছে। পুলিশের নির্যাতনের কারণে অনেকে নিজ গৃহে ঘুমাতে পারে না। কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ এবং তাদের নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য, অবৈধ সরকারকে নগ্নভাবে অবৈধ কর্মকাণ্ডে সাহায্য করে যাচ্ছে। সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। যে বা যারা অতীতে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তাদের কিন্তু শেষ পরিণতি সুখকর হয়নি। সরকার তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় খুব দ্রুত অর্থনৈতিক ধ্বংস এবং সংঘাতের দিকে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকারকে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। তাদের পক্ষে বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং অন্যদিকে রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হবে কিনা জানি না।

কর্নেল অলি আরও বলেন, গত ১২ বৎসর যাবৎ গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখার জন্য নিশি রাতের সরকার উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো প্রকল্প হাতে নেয়নি। বর্তমানে মেগা প্রকল্পের সংখ্যা ২০টি। যা ১৮ কোটি মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দায়ী বলা যায়। বর্তমানে সরকারের ঋণ ১৪০ বিলিয়ন ডলার। যা আগামী ৫ মাস পর থেকে পরিশোধ আরম্ভ হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে উৎপাদন ছাড়াই বিরাট অংকের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। যেমন- কয়েক মাস পর থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুদ বাবদ ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। সরকার সমর্থিত কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের জন্য প্রতিমাসে কয়েকশত মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়। শুধুমাত্র মেগা প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৭০ বিলিয়ন ডলার। ডলারের অভাবে নিয়মিত আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ভারত থেকে নাচ গান করার জন্য ডলার খরচ করে নোরা ফাতেহিতে আনা হয়েছে।

রাশিয়া, চীন এবং জাপান থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ৪৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অহেতুক সময় বৃদ্ধি, অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে ক্রমাগতভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া শুধুমাত্র আমদানির জন্য প্রতি মাসে গড়ে সাত বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে। এছাড়াও ২০২৩ এবং ২০২৪ সাল থেকে ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। অথচ রিজার্ভে এ টাকার কোনো সংস্থান নেই। সরকারি অফিসগুলোতে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি। সর্বোপরি মনুষ্যত্ব বিলোপ পেয়েছে। অর্ধমীদের কাজ থেকে ভালো কিছু আশা করাটা বোকামী। দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের কারণে সমাজের অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে বর্তমান সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। দেশ বিদেশের কেউ এ সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারেছে না। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই বর্তমান সরকারের পক্ষে এ সংকট থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না বলেও এ সময় মন্তব্য করেন কর্নেল অলি।

সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর নেয়ামূল বশির, ডক্টর আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাড. এসএম মোর্শেদ, অ্যাড. খায়রুল কবির পাঠান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।