ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

কুষ্টিয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে প্রতিপক্ষের মারধর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
কুষ্টিয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে প্রতিপক্ষের মারধর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ

কুষ্টিয়া: আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে পিটিয়েছে প্রতিপক্ষ। এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার পিটিআই সড়কে তার খালার বাসায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।  

পরে পুলিশের গাড়িতে করে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে তিনি খালি গায়ে কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে যান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। এসময় তার সারা মুখে রক্তাক্ত ছিল এবং কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল।  

এ ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে হামলার শিকার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তাঁর ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচার দাবি করেন এবং এ হামলার বিচার না পেলে তাঁর আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান।  

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া শহর ও সরকারি কলেজসহ ছাত্রলীগের ৫টি ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।   

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং যে বাড়িতে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন সেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুরের দিকে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ খাওয়ার জন্য পিটিআই রোডস্থ তাঁর খালায় বাসায় যান। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর, ছাত্রলীগ নেতা অভি, সজল, সজিবসহ তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০জন কর্মী ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে থাকেন। এসময় ভয়ে হাফিজ বাসার টয়লেটের ফলস ছাদে আশ্রয় নেন। প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা সেখানে উঠে টেনে নামিয়ে তাঁকে পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে যান।  

পিটিআই রোডে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির বাসার সামনে নিয়ে এসেও পুলিশের সামনেই তাঁকে জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। এমনকি পুলিশ ভ্যানে তোলার পরও তাকে মারধর করা হয়। ঘটনার সময় জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের থামাতে দেখা যায়।  

পরে চ্যালেঞ্জকে উদ্ধার করে পুলিশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জকে নেওয়া হলে চিকিৎসা না নিয়েই তিনি চলে আসেন। এ সময় তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।  

এদিকে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তরের জানান, পিটিআই রোডের একটি বাড়িতে মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকাবস্থায় স্থানীয় জনতা হাফিজকে আটক করে এবং গণপিটুনি দেয়।  

ওই বাড়ির মালিক এক নারী বলেন, চ্যালেঞ্জ আমাদের আত্মীয়। দুপুরের দিকে তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠিসোটা হাতে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরে টয়লেটের ফলস ছাদে পালানো অবস্থা থেকে চ্যালেঞ্জকে নামিয়ে মারতে মারতে নিয়ে যায়।  

গুরুতর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যায়। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক আমাকে পিছু নেয়। আমি পিটিআই রোডে আমার খালার বাসায় গেলে সেখানে গিয়ে আক্রমণ করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার দোষ? 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘটনার বিস্তারিত কোনো কিছু এখনো জানি না।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আজগর আলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকাশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দুঃখজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।  

প্রসঙ্গত এর আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ’র বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রী কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। এ ঘটনা সে সময় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।