ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

গোলাম আযমের নাগরিকত্বের রায় জামায়াতের একমাত্র ভরসা

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০
গোলাম আযমের নাগরিকত্বের রায় জামায়াতের একমাত্র ভরসা

ঢাকা: গোলাম আযমের নাগরিকত্বের ইতিবাচক রায়কে ভরসা হিসেবে দেখছে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চরম ভোগান্তিতে পড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সূত্র মতে, বেশির ভাগ জামায়াত নেতা মনে করেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও যুদ্ধোত্তর সময় পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চষে বেড়ানা গোলাম আযম যেভাবে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, ঠিক একইভাবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া জামায়াত নেতারাও নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে আসবেন।



এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়া ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে গোলাম আযমের সরব উপস্থিতি জামায়াত নেতাদের ওই বিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খান, রাজশাহীর আতাউর রহমান, খুলনার গোলাম পরওয়ার যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন।

শীর্ষ এ ৮ নেতা ছাড়াও জামায়াতের দাবি অনুযায়ী, সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীর সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে।

গ্রেপ্তারের এ ধারায় স্বাধীনতা বিরোধী আন্দোলনের মূল নায়ক গোলাম আযম সর্বাগ্রে গ্রেফতার হচ্ছেন-এমনটি ভেবেছিলেন অনেকে।

কিন্তু সকলের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতোই রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ঘোরাফেরা করছেন তিনি। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

রমজানের শেষের দিকে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জামায়াত আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দেন গোলাম আযম। পাশে পান মিত্রশক্তি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।

এরপর অগ্রিম প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইদুল ফিতরের দিন নিজ বাড়ির আঙ্গিনার মসজিদে খুতবা পাঠ করেছেন জামায়াতের সাবেক এ আমীর ।

সর্বশেষ, ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিসহ কূটনীতিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামাতের এক শীর্ষ নেতা জানান, ‘বয়সের ভারে ন্যুব্জ জামায়াতের সাবেক আমীর  গোলাম আযম দলীয় নেতাকর্মীদের মনে সাহস যোগাতেই অঘোষিত বন্দিদশা থেকে মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে আসছেন। ’

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এমটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি ভিডিও ফুটেজ ও কয়েকটি পেপার কাটিং দেখিয়ে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে যেমন যুদ্ধাপরাধী প্রমাণ করা যায়নি; তেমনি জামায়াতের বন্দি নেতাদেরও যুদ্ধাপরাধী প্রমাণিত করতে পারবে না সরকার। ’  

তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম আযম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যুদ্ধাপরাধের সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। ন্যায় বিচার হলে নিজামী-মুজাহিদদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। ’

প্রসঙ্গত, একাত্তরের বিতর্কিত ভূমিকার পর জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম দীর্ঘকাল দেশের বাইরে অবস্থান করেন। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। এরপর ১৯৭৯ সালে সৌদি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

পরবর্তী সময় ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ে তার কেড়ে নেওয়া নাগরিকত্ব ফিরে পান।

ওই রায়ে তখন বলা হয়েছিল, ‘কতিপয় সংবাদ ভাষ্য ও একটি ছবিতে দেখা যায় যে, আবেদনকারী অধ্যাপক গোলাম আযম, জেনারেল টিক্কা খান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এ ব্যতীত পাকিস্তানি বাহিনী বা তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর বা আল-শামস কর্তৃক কথিত নৃশংসতার সাথে আবেদনকারী প্রত্যভাবে জড়িত ছিলেন এমন কিছু পাওয়া যায় না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।