ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সাবেক বিএনপি নেতাও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২২
সাবেক বিএনপি নেতাও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আট/১০ জন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ চাচ্ছেন। তবে কে আসবেন নেতৃত্বে, তা  শনিবার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনেই জানা যাবে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর পরে  আগামী ৮ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে এ রাজনৈতিক দলটি। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে কর্মব্যস্থতাও বেড়েছে কয়েক গুণ।

উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ছয়টির সম্মেলন আগেই হয়েছে। বাকি কমলাবাড়ি এবং দুর্গাপুর ইউনিয়নের পুরোনো কমিটিই এ সম্মেলনের কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে সম্মেলন হলেও এ ছয়টি ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে এসব ইউনিয়নেও ঘোষিত নতুন পদ ছাড়া অন্য পদের পুরোনো কমিটির নেতারাই কাউন্সিলর হবেন।  

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন এ সম্মেলনে।  

সম্মেলনে নির্বাচন না কি সিলেকশনে নেতা নির্বাচিত হবেন। তা নিয়ে রয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। এরপরও থেমে নেই পদপ্রত্যাশীরা। তারা বিভিন্ন সিনিয়র নেতাদের পেছনে ঘুরছেন সমর্থনের আশায়।  

দলীয় নেতাকর্মী ও সম্ভব্য কাউন্সিলররা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বেশ কয়েকজন সভাপতি ও সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অনুপ্রবেশকারীসহ প্রবীণ এবং যুবক, ছাত্রনেতাও রয়েছেন।

সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ২০০৯  সালের উপজেলা বিএনপির সভাপতি ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ৯ ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, প্রয়াত সভাপতি শওকত আলীর ভাতিজা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম মানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম প্রধান ও জেলা পরিষদের সদস্য সেলিম হায়দার।

সম্পাদক পদে গুঞ্জন উঠেছে বর্তমান সম্পাদক সাপ্টিবাড়ি ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক রফিকুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এপিএস) মিজানুর রহমান মিজান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি ও সাবেক ছাত্রনেতা ভাদাই ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপই একই পদের জন্য বিকল্প হিসেবে একাধিক প্রার্থী প্রস্তুত করে প্যানেল দিচ্ছেন। দুই গ্রুপের মধ্যে একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক সিরাজুল হক।  

নেতাকর্মীরা জানান, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। তবে তিনি বিগত ২০০৯ সালে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের আগে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে বিশ্বস্ততা অর্জনে সফল হতে পারেননি তিনি।

সাবেক সম্পাদক সারপুকুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধানও সভাপতি পদপ্রত্যাশী। প্রবীণ আওয়ামী নেতা হিসেবে তার বেশ নাম ডাক রয়েছে। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকলেও তার নাম শোনা যাচ্ছে পছন্দের তালিকায়। এ তালিকায় রয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসও। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ সামছুল ইসলাম সুরুজের ছেলে। একই সঙ্গে বাবাহারা সন্তান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে ছাত্রজীবন সমাপ্ত করেন। সেদিক থেকে ফারুকও এগিয়ে রয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আস্থাভাজন বর্তমান সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক রফিকুল আলম অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। তার বিকল্প হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস মিজানুর রহমান মিজানের নামও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। অপরদিকে সিরাজুল হকের গ্রুপে এগিয়ে রয়েছেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি। সেক্ষেত্রে এ গ্রুপে বিকল্প হিসেবে থাকতে পারেন ভাদাই ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর।

আগামী ৮ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে আদিতমারী জিএস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ শেষের দিকে। মহাসড়ক জুড়ে হচ্ছে তোরণ। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছেয়ে গেছে বিলবোর্ড, ব্যানার আর ফেস্টুনে।

দলটির দুই গ্রুপের অন্তঃদ্বন্দ্বের কারণে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা। ইউপি সম্মেলনে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্র ধরে উপজেলা সম্মেলনে আবার সংঘাতে জড়াতে পারে দুই গ্রুপ-এমনটা আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তবে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিগত ইউনিয়ন সম্মেলনগুলোতে দুই গ্রুপের যে দ্বন্দ্ব আমরা দেখেছি, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা সম্মেলনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সদা প্রস্তুত রয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।