ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ মে ২০২৪, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

আগারগাঁওজুড়ে চলছে কাউন্সিলরের ভাইয়ের কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২২
আগারগাঁওজুড়ে চলছে কাউন্সিলরের ভাইয়ের কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব

ঢাকা: রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (আগারগাঁও এলাকার) ফোরকান হোসেনসহ তার দুই ভাই সিরাজুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামানের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।

সূত্র জানায়, কাউন্সিল ফোরকান হোসেন, সিরাজ, আসাদুজ্জামান আসাদ তারা তিনজন মিলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

চাঁদা তোলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে তাদের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করানো হয় কিশোর গ্যাং দিয়ে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার আসাদ নিজেই। জয়নাল ও কালু নামের এক ব্যক্তি ফোরকানের ভাই আসাদের হয়ে বিএনপি বস্তি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে তারা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন।  

সূত্র আরো জানায়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল ও আশেপাশের হাসপাতালের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকেও চাঁদা নেওয়া হয়। চাঁদা না দিলে প্রকাশ্যে গাড়ির মালিক ও ড্রাইভারের ওপরে হামলা করা হয়। আগারগাঁও এলাকার সব হাসপাতাল এ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বড় বড় সরকারি অফিস এ এলাকায় হওয়ায় এখন চক্রটি টেন্ডার বাণিজ্যের দখল নিতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে। আসাদ শেরে বাংলা নগর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। তাদের সামনে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

এছাড়া কাউন্সিল ফোরকান হোসেন ও তার ছোট ভাই আসাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগও রয়েছে।

স্থানীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২৮ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক ওমর ফারুকসহ ৮ সদস্যের একটি দল অভিযোগের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অভিযান পরিচালনা করেন।

দুদকের সহকারী উপপরিচালক (জনসংযোগ) আরিফ সাদেক জানান, অভিযোগের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। কাগজপত্র না দেখে এখন অভিযোগর যাচাই-বাছাইয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিলরদের ভাই আসাদ কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন। তাদের আধিপত্যে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে আগারগাঁও এলাকা। কাউন্সিলরের দুইভাই সিরাজুল ইসলাম ও আসাদ অনেকটা প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজি ও আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

স্থানীয় ও নেতাকর্মীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, তাদের অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি স্থানীয় নেতাকর্মীও। শেরে বাংলা নগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের স্বামী ও ২৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতিকে মারধর করা হয়। শেরে বাংলা নগর যুব মহিলা লীগের সম্পাদককের স্বামীকে মারধরের ঘটনায় ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বরে আগারগাঁও থানায় একটি মামলা হয় (মামলা নং ৪২)।

এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, আগারগাঁও এলাকার পরিবেশ দিনদিন খারাপ হয়ে উঠছে। এলাকার কাউন্সিলর জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। কিন্তু এই এলাকার চিত্র উল্টো। তার ভাইয়েরা এলাকায় রাজত্ব কায়েম করে যা মনে চায় তাই করে যাচ্ছেন। মামলা তুলে নিতে আমাকে নানাভাবে চাপ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া জানা যায়, আগারগাঁও বিএনপি বস্তি এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ঢালী নামে একজন গাড়ি চালক মামলা করেন। তার বড় ভাই মো. আবুল ঢালীর কব্জি কেটে নেওয়া হয়। আবুল ঢালী নিজেও গাড়িচালক। ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট করা মামলাটি (মামলা নং ২২) বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

২০১৮ সালের ২ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা নিয়ে টায়ার কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হন তিনি।

ওই ঘটনায় আগারগাঁও বিএনপি বাজারের কাশেমের ছেলে শাহ আলম কালু, তার ভাই আল আমিন, জয়নাল, নুরে আলম এবং একই এলাকার স্বাধীন ও চাঁন মিয়া তাকে মারধর করেন।

এ সময় কালুর হাতে থাকা চাপাতির আঘাতে আবুল ঢালীর কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তার কাছ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।

এমন ঘটনার পরও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। উচ্চ আদালত জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের কাউন্সিলর ফোরকানের ভাই আসাদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

অভিযুক্ত শেরে বাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, আগারগাঁও এলাকায় আমার কোনো কিশোর গ্যাং নেই।

লিমন, সুজন, রুবেল, মনির হোসেন, এরা আপনার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদ বলেন, এরা আমার সঙ্গে থাকে। ওরা ছোট, কীভাবে ওরা কিশোর গ্যাং হয়? আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত নই। আমার নামে কোনো মামলা বা জিডিও হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোনো খারাপ কাজে আমি কখনো জড়িত না। সব সময় আামি এলাকার লোকজনের সেবা করে আসছি। এই এলাকা ছিল মাদকের আখড়া, আমি কাউন্সিলর হওয়ায় পরে মাদক বন্ধ করেছি। যারা এসব কথা বলছেন, মিথ্যা কথা বলেছেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, কোনো জায়গা দখল করা হয়নি। রাস্তার জায়গায় রাস্তা আছে। ওই জায়গা আমার ছোট ভাই কিনেছে। আমার ভাইয়ের আগারগাঁওয়ে কোনো কিশোর গ্যাং নেই।  

শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার জানা মতে আগারগাঁওয়ে কোনো কিশোর গ্যাং নেই। যদি থেকে থাকে তথ্য দিন। ব্যবস্থা নেব। ওই দুই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
এমএমআই/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।