কক্সবাজার: মাত্র পাঁচ বছরেই বদলে যাবে দেশের একটি জেলার পুরো চিত্র। হাইটেক সিটি ও মাল্টিমোডাল হাব হতে চলা সেই জনপদ কক্সবাজার।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে কলাতলীস্থ একটি তারকা হোটেলে পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে এমন বক্তব্য উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক বাবু উজ্জ্বল কর।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, কক্সবাজারের চিরচেনা এই রূপের অধ্যায়ে যেন নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্প। বিদ্যমান বিমানবন্দরটিকে আধুনিক করে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যেখানে ১০ হাজার ৭০০ ফুট দীর্ঘ রানওয়ের, ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে বঙ্গোপসাগরে। করা হচ্ছে সাগর ছোঁয়া রানওয়ে, ঝিনুকের আদলে টার্মিনাল। স্যান্ড পাইলিং করে তৈরি করা এই রানওয়ে হবে দেশের সর্ববৃহৎ।
সুপরিসর রানওয়েতে হরহামেশাই বোয়িং ৭৭৭ এবং ৭৪৭ এর মতো বড় বিমানে একসঙ্গে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবেন সহস্রাধিক যাত্রী।
তারা বলেন, পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাদে ইন্টারন্যাশনাল রি-ফুয়েলিং পয়েন্ট ও ভিআইপি আকাশযানের পার্কিং থেকেও বড় আয়ের উৎস হবে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট। একইসঙ্গে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য খুরুশকুলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে ১৩৯টি আশ্রয়ণ ভবন। ইতিমধ্যে নির্মিত ২০টি ভবনের ঠাঁই হয়েছে ৬’শ উদ্বাস্তু পরিবারের।
আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, আকাশপথের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো এই জেলায় রেলসংযোগ দেওয়ার কাজও চলছে জোরেশোরেই। দৃশ্যমান এই লাইনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের বুক চিরে একেবারে সোজা মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে রেলের গাড়ি। ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ঝিনুকের আদলে আইকনিক রেলস্টেশন ভবন। যাতে করে আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যাত্রার পাশাপাশি এখানকার মাছ, লবণ ও কৃষিজ পণ্য সহজেই পরিবহন করা যায় সর্বত্র। ২০২৩ সালে চালু হলে আন্তর্জাতিক করিডোরে পরিণত হবে নতুন এই রুটটি।
এছাড়াও পরিকল্পিত পর্যটনের জন্য গোছানো হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়নকে। নীল জলরাশির এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেই পাহাড় ও সাগরে বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। সেখানে থাকবে ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুরিয়ামসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। শুধু পর্যটন নয়, এই জনপদ অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে শিল্প খাতেও সেজে উঠছে আধুনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। থাকবে এলএনজি টার্মিনালও। এছাড়া কক্সবাজারের মাটিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, যা অর্থনৈতিক সক্ষমতায় নতুন দুয়ার হবে দেশের জন্য।
পাশাপাশি, গভীর সমুদ্রে জ্বালানি তেল খালাসে সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হচ্ছে কক্সবাজারেই।
কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেওয়া এমন ১৯১টি প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। একক জেলা বিবেচনায় যার বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাঁচ বছর পর যেন দেশের জন্য বিরল সুযোগ আর সম্ভাবনার কথাগুলো উঠে আসে আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ থেকে।
উক্ত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২,২০২২
এসবি/এসআইএস