ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

ডিসেম্বরে সম্মেলন

কে হচ্ছেন আ. লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
কে হচ্ছেন আ. লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?

ঢাকা: পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। তবে এই সম্মেলনের চলমান কার্যক্রমে মধ্যে সব কিছু ছাড়িয়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ।

এই পদে পরিবর্তন হবে কি না, যদি হয় তাহলে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন- এটিই এখন নেতাকর্মীদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।  

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দলটি। এর আগে জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সব মেয়াদ উত্তীর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর সম্মেলনের কাজ চলছে। গত ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ অর্থাৎ ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে কারণে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের (কেন্দ্রীয় কমিটি) নির্ধারিত ৩ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষে ডিসেম্বরেই সম্মেলনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এই সম্মেলনের এখনও ৮ মাস বাকি আছে। তবে সম্মেলনের আবহাওয়া তৈরির পরই গত কিছু দিন ধরে নতুন নেতৃত্ব বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে দলের সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনা আবারও সভাপতি হবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। তাকে সভাপতি পদে পুনঃনির্বাাচনের বিষয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ইস্পাত কঠিন ঐক্য। আর এ কারণে তিনিই আবার সভাপতি এটা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আছে। তবে সাধারণ সম্পাদকের আলোচনা এখন দলের গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণসহ রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যেও গড়িয়েছে।  

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধারণা এবার সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী) পর পর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (প্রয়াত) টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর পরিবর্তন আসে। তার আগে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েক বছর আওযামী লীগের জাতীয় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তখন আব্দুল জলিল (প্রয়াত) দুই মেয়াদের সমপরিমাণ সময় দায়িত্ব পালন করেন। সে কারণে অতীত পর্যবেক্ষণ থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা এই পদে পরিবর্তন  হবেই বলে ধরে নিয়েছেন। তবে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন-তা নিয়েই বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধারণা প্রকাশ করছেন। এর মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে দলের বেশ কিছু নেতার নাম উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদ শেষে আগামী বছর ডিসেম্বরে অথবা পরের বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে যিনি সাধারণ সম্পাদক হবেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে তাকে পরবর্তী নির্বাচনে দলের বিজয়ের পক্ষে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে হবে। সামনের নির্বাচনকে দলের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই নির্বাচন রাজনৈতিক সংকটমুক্ত হবে সেই নিশ্চয়তাও তারা দিতে পারছেন না। এই নির্বাচন বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সমম্বয় করে চলতে হতে পারে। সাধারণ সম্পাদকের যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।

এই সম্মেলনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের বেশ কয়েক জন নেতার নাম সামনে এসেছে এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে এসব নাম আলোচিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আলোচিত নেতারাও কাজের মধ্য দিয়ে তাদের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত ১০ জনেরও বেশি নেতার নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এর আগেও তিনি আলোচনায় ছিলেন। এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রাহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও বেশ আলোচনায় রয়েছে। গত সম্মেলনেও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম বেশ আলোচিত ছিল। দলীয় কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম। এছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী লিটনও আলোচনায় আছেন। তবে তিনি পরবর্তীতে জাতীয় সংসদেই আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন।  

আওয়ামী লীগের গত সম্মেলনে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমান মন্ত্রী সভার বেশ কয়েক জন সদস্যকে রাখা হয়নি, যারা গত কমিটিতে ছিলেন। সরকার এবং দলকে স্বতন্ত্র রাখতে এবারও মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা নেতার সংখ্যা সীমিতই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন কি সাধারণ সম্পাদকও মন্ত্রীসভার বাইরে থেকে নেওয়া হতে পারে, এমন কথাও শোনা যায়। তবে দলের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দলের পক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় থাকা নেতাকেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের চার বারের ক্ষমতার মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (প্রয়াত), ওবায়দুল কাদের প্রত্যেকেই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং আছেন। সেই দিক থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যকেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

তবে যাদের নাম আলোচনায় আসছে তারা নিজেদেরকে এই পদের প্রার্থী দাবি করতে চান না। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে তারা জানান। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবদিক বিবেচনা করে যাকে মনোনীত করবেন, তিনিই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন বলে তারা মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ চারটি সম্মেলন পর্যবেক্ষণ করলেও দেখা যায় সভাপতি নির্বাচনের পর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একজনের নাম কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তাব ও সমর্থন করার পর আর কোনো নামের পক্ষে প্রস্তাব আসেনি। যে নামটি প্রস্তাবে আসে সেটির প্রতি দলের সভাপতির সমর্থন রয়েছে বলেই বিবেচনায় নিয়ে আর কোনো নাম প্রস্তাব হয় না। তখন উপস্থিত কাউন্সিলররা সর্বসন্মতিক্রমে তাকেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। সে কারণে আগামীতেও একই প্রক্রিয়াতেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে বলেও ওই নেতারা জানান।
আগামী সম্মেলন এবং সাধারণ সম্পাদক বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তাই আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ে আগামী ডিসেম্বর মাসেই সম্মেলন হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনিসহ যাদের নাম আলোচনায় আসছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান জানান, গঠনতন্ত্রিক ক্ষমতা বলে দলের প্রধান (শেখ হাসিনা) এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। অতীত থেকে সেটা হয়ে আসছে। নাম আলোচনায় আসতেই পারে, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত সময় এ বছর ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা সম্মেলনের কাজ করছি। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানো, আরও শক্তিশালী করার কাজ চলছে। এই কাজের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন একটি। এর মধ্য দিয়ে সে সব জায়গায় নেতৃত্বের পরিবর্তন আসছে, জনপ্রিয়, ত্যাগী, সাহসী, নিষ্ঠাবানরাই নেতৃত্বে আসছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বস্তরেই নতুন নেতৃত্ব আসে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হবে কি না বা কে আসবেন সেটা নেত্রীর(শেখ হাসিনা) মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিলেই ঠিক হবে। নাম আলোচনায় আসবে কিন্তু সিদ্ধান্ত তো হয় কাউন্সিলে।

বাংলাদেশ সময়:১১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
এসকে/এমএমজেড  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।