ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘১৮ কোটি মানুষের জন্য খালেদা জিয়াকে দরকার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
‘১৮ কোটি মানুষের জন্য খালেদা জিয়াকে দরকার’ ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সমস্যা কোথায়, এ প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বুঝি না, আমাদের মাথায় আসে না সমস্যাটা কোথায়। আপনারা আইনের কথা বলছেন, আইনকে ভুল দেখাচ্ছেন।

আপনারা যদি দেশের শান্তি চান, স্থিতিশীলতা চান, গণতন্ত্রকে ফিরিয় আনতে চান তাহলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকেই দরকার হবে। অন্যথায় কেউ এখানে শান্তি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্যই খালেদা জিয়াকে দরকার।

রোববার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বলতে চাই খালেদা জিয়াকে আমাদের দরকার। বিএনপির জন্য নয়, খালেদা জিয়াকে দরকার এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য। এই একজন মাত্র নেত্রী আছেন। যিনি এই দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। একজন মাত্র নেত্রী আছেন যিনি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। সেজন্য আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ। প্রতিদিন চিকিৎসকরা তার জীবন রক্ষার জন্যে পরিশ্রম করছেন। কেন তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে শর্ত সাপেক্ষে কেন আটক রাখা হয়েছে। কারণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একমাত্র নেত্রী, যিনি এই বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করছেন। তিনি ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য এই দেশের পথে পথে ঘুরেছেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।

প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাত, সব ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নিয়ে কী দুর্নীতিটা করেছে সবাই দেখেছেন। (সামনে মেট্রোরেলের কাজ চলছে সেদিকে হাত উচিয়ে) এই যে মেট্রো রেল বানাচ্ছে, গত দশ বছর ঢাকা শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট কেটেছে, কিন্তু মেট্রোরেল এখনও হচ্ছে না। ব্যয় ১০ গুণ বাড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর কথা বলে, পদ্মা সেতু ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার। এখন সেটা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, কালকে একটা পত্রিকায় দেখলাম ভাঙা থেকে মাওয়া। সেখানে প্রতি এক কিলোমিটার রাস্তা বানাতে খরচ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। চিন্তা করেন, আমেরিকা-জার্মানিতেও এত খরচ হয় না। এই কারণে তারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তাহলে এদের এই দুর্নীতি, গণবিরোধী সমস্ত কাজ, জনগণের অধিকার দেশনেত্রী আদায় করবেন। তার পেছনে মানুষ হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো আসবে। সেজন্য তারা তাকে মুক্তি দিতে চান না। চিকিৎসা করতে দিতে চান না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার আইন দেখায়, ৪০১ ধারা। মোস্তাফিজ (সমাবেশের সভাপতি) বলেছে, আইন মানি না। আমি আইন মানি, ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, সরকার, সরকার, শুধুমাত্র সরকারই পারে দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। আ স ম আব্দুর রব সাহেব সেদিন বলেছেন, তিনি যখন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে তাকে রাষ্ট্রীয় খরচে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা নাসিম সাহেব জেলে ছিলেন, তাকে জেল থেকে সরাসরি সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফের সাজা হয়ে জেলে ছিলেন, সেখান থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল। আর আজকে ৪০১ ধারার কথা বলছেন। ৪০১ ধারাতেই আছে, আপনি চাইলে পাঠাতে পারেন। কিন্তু মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আইনের কথা বলছেন।

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাধারণ নাগরিক নন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সাহসী সৈনিক। ’৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তারপরে তিনি গণতন্ত্র, উন্নয়নের জন্য লড়াই করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আগামী ৩০ নভেম্বর বিএনপি আহুত সমাবেশে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।  

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের পরিচলনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইন,  স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার, আসাদুজ্জামান নেসার, আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, আজহারুল হক মুকুল, এবিএম পারভেজ রেজা, লিটন মাহমুদ, শাহাবুদ্দিন মুন্না, ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, কাদের হালিমী, ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল আলম, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, মোস্তাফিজুর রহমান মনির, আরিফুর রহমান আরিফ, আজগর হায়াত লিমন, মোখলেছুর রহমান, তকদির হোসেন স্বপন, আশ্রাফ উদ্দিন রুবেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এমএইচ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।