ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

রেজা-নুরের দল নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২১
রেজা-নুরের দল নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি

ঢাকা: সম্প্রতি গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ‘গণ অধিকার পরিষদ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে  ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

এ অবস্থায় দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্র সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনই নতুন এই দল সম্পর্কে তেমন কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। তারা বলছেন, দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র কয়েকদিন। আরও কিছুদিন পরে বোঝা যাবে তাদের গন্তব্য কোথায়।

জানতে চাইলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান দু’জনেই বাংলানিউজের সঙ্গে একই মন্তব্য করেন।   তারা বলেন, যে কেউ দল করতে পারেন। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু বললে সেটা মহাসচিব বলবেন। আমাদের ব্যক্তিগতভাবে বক্তব্য হলো, রাজনৈতিক দল যে কেউ করতে পারেন। এটা সাংবিধানিক অধিকার। তারাও করেছেন। দেখা যাক তারা কী করেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, নতুন যে কেউ গণতন্ত্রের সংগ্রামের পথে আসুক, ভোটাধিকার উদ্ধারের সংগ্রামে আসুক, তাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। কারণ বিএনপি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফেরত দিয়েছে। সুতরাং বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাসের কারণেই যারা এই পথে আসবে তাদের সবাইকে স্বাগত। তাদের এই যে যাত্রা শুরু হয়েছে, এটা যেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পক্ষে থাকে। দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পথে যেন তারা এগিয়ে যায়। তাহলে আমরা তাদের সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

গুজব রয়েছে রেজা-নুরের দল বর্তমান সরকারেরই সাজানো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা শিশু জন্ম নেওয়ার পরপরই সে বিজ্ঞানী হবে, না দার্শনিক হবে, না পণ্ডিত হবে, না মূর্খ হবে- সে বিষয়ে মন্তব্য করা আমার মনে হয় তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। আরও কিছু সময় দেখে নেই, তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করলে বোধ হয় ভালো হবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, নতুন একটা দল আত্মপ্রকাশ করেছে, তাদের স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি এরা গণতান্ত্রিক পথেই হাঁটবে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আগামীদিনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে অংশ নেবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে আমরা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি না। এরই মধ্যে নতুন একটি দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এদিকে স্বৈরাচারী সরকার আবার একটি পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে।   আশা করি সরকারের সেই পাতানো ফাঁদে তারা পা দেবে না।

রেজা-কিবরিয়া-নুরুল হক নুর সরকারের লোক এমন গুজব সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, না আমরা এমনটা মনে করি না। ডাকসুর নির্বাচনে নুরুল হক নুর জয়ী হয়েছিল। তখন দেখেছি তিনি গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে কথা বলেছেন। রেজা কিবরিয়ারও একটা ব্যক্তিত্ব আছে। আমার মনে হয় না, তারা পথভ্রষ্ঠ হবেন। সামান্য কিছু লোভে সরকারকে ওয়াক ওভার দিতে তারা কাজ করবে, এমনটা আমরা মনে করি না।  

আগামী নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর ক্ষমতায় যাওয়ার কথা বলেছেন, আপনি কী মনে করেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে এরা দুজন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলেই পাস করবে- এটা হলো এক দিক। আর হাসিনা যদি থাকে তাহলে ক্ষমতায় কে যাবে? শেখ হাসিনা যদি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন করার কথা ভাবতো, তাহলে কয়েকদিন আগে হিন্দুদের ওপরে যে অঘটন ঘটালো সেটা ঘটাতো না। এটার উদ্দেশ্য হলো, আগামীতে আরেকটি পাতানো নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য বিরোধীদলকে একদম নিঃশেষ করে দিতে সরকার এটা ঘটিয়েছে। আর এ ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এতে কী বোঝা যায়? সুষ্ঠু নির্বাচন কি হবে? তবে আমার মনে হয় না যে রেজা-নুর সরকারের সঙ্গে পাতানো নির্বাচন করে নিজেদের অপমৃত্যুর ব্যবস্থা করবে।

২০ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলানিউজকে বলেন, সংবিধানে দেশের সব নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার ও সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে। প্রত্যেকেই রাজনীতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি নতুন দলের জন্ম হয়েছে, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশাকরি বর্তমানে দেশে রাজনীতির যে শূন্যতা রয়েছে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। তারা তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের তরুণদের জন্য ভূমিকা রাখবে। রাজনীতিতে উত্থান পতন আছে, সফলতা ব্যর্থতা আছে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে জন্ম নিয়েছে, আবার বিলুপ্ত হয়েছে। এটা সময় বলে দেবে যে তারা কতটা সফল অথবা ব্যর্থ। তাদের সূচনায় সফলতা কামনা করি। আমরা আশা করবো বর্তমানে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা যে ধ্বংস হয়ে গেছে, এটা উত্তোরণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের সেই দাবি আদায়ে তারা ভূমিকা রাখবে।

জোটের শরীক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাড. সৈয়দ এহসানুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, দলটি একেবারেই নতুন, এখনও পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছে। যেভাবে আমরা ভেবেছিলাম সেভাবে তারা আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। এ দলে এখন পর্যন্ত নুরুল হক নুর, আর রেজা কিবরিয়া ছাড়া তেমন কেউ নেই। একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই বললেই চলে। নুরেরও নাই, তিনি হঠাৎ করে ভিপি হয়েছিলেন। ছাত্রদের অধিকারের ইস্যুভিত্তিক একটা আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি লাইম লাইটে এসেছেন। এক সময় তিনি ছাত্রলীগ করতেন, এটা তিনি নিজে সব সময় স্বীকার করেন। তার পরিবারের সবাই ছাত্রলীগ করতো। আমি এখনও তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চাই। ভবিষ্যতই বলে দেবে তারা জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করবে, নাকি অন্য কারও প্রত্যাশা পূরণ করবে?

তারাতো ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়, আপনি কী মনে করেন, পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, আমি জানি না, তবে আপনারা যদি লক্ষ্য করে থাকেন, যারাই কোনো একটা ভিন্ন উদ্দেশে, কারও পারপাস সার্ভ করার জন্য ইদানিং রাজনীতি করতে চাচ্ছে, তারাই ৩০০ আসনের কথা বলছে। এমপি হতে পারবে, বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন ৩০০ উপযুক্ত লোক খুঁজে পাওয়া রেজা-নুরের জন্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না, এটা দূরাশা। এই দলও আগামীতে থাকে কি না সেটা দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২১
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।