ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নির্বাচনী সহিংসতা থামাতে পারছে না আ.লীগ 

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২১
নির্বাচনী সহিংসতা থামাতে পারছে না আ.লীগ 

ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আগে থেকে কঠোর অবস্থান ও বিভিন্ন সাংগঠনিক পদক্ষেপের কথা বলা হলেও নির্বাচনী পরিস্থিতি ক্রমেই সংহিংস হয়ে উঠছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমুল পর্যায়ের এই বিশৃঙ্খলা তাদের বিব্রত করছে। এক দিকে দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ির ফলে দলের মধ্যেই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। পাশাপপাশি এই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলো সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ায় এবং একের পর এক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে চলেছে।

দলের মধ্যে এত প্রার্থী হওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার সুযোগ নিতে চাইছে অনেকে। তারা মনে করছে, দাঁড়ালেই নির্বাচিত হয়ে যাবে। সবাই নিজেকে যোগ্য মনে করছে। একবার চেয়ারম্যান হতে পারলে পরবর্তীতে এমপি হওয়ার পথ তৈরি হবে। ব্যক্তি স্বার্থের কাছে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। এসব কারণে প্রার্থী সংখ্যা বেশি এবং আধিপত্য বিস্তারে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।  

আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ গ্রহণ না করায় অধিকাংশ স্থানে দল থেকেই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে আওয়ামী লীগেরই দুই-তিনজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে।  

জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫ শতাধীক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী বেশি হওয়ার কারণে সহিংসতা বেশি হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

আওযামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের সংসদীয় বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থী বেশি হওয়ার কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। একটি জায়াগায় ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল, সেখান থেকে একজনকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অনেকেই চেয়ারম্যান হতে চায়, তারা দাঁড়িয়ে গেছে। এবার চেয়ারম্যান হবে, পরে এমপি হবে এটা তাদের প্রত্যাশা। এখন অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, তাদের সমর্থকরা বলে দাঁড়াও হয়ে যাবা, আর দাঁড়িয়ে পড়ে। আসলে কেউ কর্মী থাকতে চাচ্ছে না, সবাই নেতা হতে চায়।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইউপির সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন বা দলীয় প্রতীকের বিষয় নেই। তারপরও সদস্য পদে আওয়ামী লীগের যারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন, তাদের মধ্যেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।  

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় ৪০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি এবং ২৮ নভেম্বর ১০০৭টি ইউপিতে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) নরসসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।  

এর আগে ২৮ অক্টোবর নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নে দুই প্রুপের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন।

১৫ অক্টোবর মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। ২৬ অক্টোবর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হন।  

এর আগে ১৭ অক্টোবর কাপ্তাই সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর ও সিলেট একজন করে নিহত হয়েছেন। আরও কয়েকটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন স্থানে এসব সংঘর্ষে কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অধিকাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের নেতারাই প্রার্থী হয়েছেন।  

এবারের ইউপি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুওদ্ধ যারা প্রার্থী হবেন অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা বিদ্রোহী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের আগামীতে কোনো নির্বাচনেই দলের মনোনয়ন না দেওয়া এবং দলীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের মতো কোনো পদও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

আবার কিছু জায়াগায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলের হুঁশিয়ারি ও দল থেকে বহিস্কার করা হলেও বিদ্রোহীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরে দাঁড়াননি। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন বিদ্রোহীদের বসিয়ে দিতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্রোহীরা কারও কথা শুনছেন না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে না আসায় অনেকেই সুযোগ নিতে চায়। এ কারণেই কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না। ব্যক্তি স্বার্থ কারও কারও মধ্যে কাজ করে। আমরা চেষ্টা করছি, যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে। সবাই যাতে দলের সিদ্ধান্ত মানে, সে জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
এসকে/জেএইচটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।