ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হেফাজত

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হেফাজত

ঢাকা: নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নেই তৎপর হেফাজতে ইসলাম। এর অংশ হিসেবেই মাঠে নেমে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে তাণ্ডব চালিয়েছে সংগঠনটি।

কওমি মাদ্রাসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা সংগঠন হেফাজত সরকারের নারীনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। তারা শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির হুমকি দেয়।

এরপর হেফাজত শাহবাগের ছাত্রজনতার প্রতিবাদী আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে নামে। গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নেওয়া জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে। ওই সময় হেফাজত জামায়াত নেতাদের পক্ষ নিতেই মূলত গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে নামে। এরপর ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে রাজধানীতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি।

২০১৩ সালের ৫ মে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে রাজধানীতে ব্যাপক ভাঙচুর ও বিভিন্ন ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। আর এ সব কর্মকাণ্ড হেফাজতের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করছেন, হেফাজতের নেতারা তাদের সংগঠনকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই তারা পরিচালিত করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে। দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর দায়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দলটির এখন কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে গেছে। অরাজনৈতিক সংগঠনের আড়ালে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন এই হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে। এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই ইতোমধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, জামায়াতও যেহেতু সরাসরি নিজেদের ব্যানারে মাঠে নামতে পারছে না, তাই হেফাজতকে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। জামায়াতের বিভিন্ন কৌশলকেই কাজে লাগাচ্ছে হেফাজত। এছাড়া বিএনপির দিক থেকেও হেফাজতের ইন্ধন রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন সময় কর্মসূচি দিয়েও তারা আন্দোলন দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু নিজেরা আন্দোলন দাঁড় করাতে পাারছে না তাই সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ও দেশকে অস্থিতিশীল করার হেফজতের তাণ্ডব ও তৎপরতাকে বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গত ২৬ মার্চ থেকে পর পর তিন দিন হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালায় তার ভিডিও ফুটেজ দেখে সরকার ইতোমধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। কিন্তু বিএনপি প্রকাশ্যেই এই গ্রেফতার অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে এবং গ্রেফতারকৃতদের সরাসরি মুক্তি দাবি করছে। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে এর ঘটনায় হেফাজতকে বিএনপি সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলো। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গেও হেফাজতের সরাসরি সখ্য রয়েছে এবং বিএনপির এজেন্ডাও বাস্তবায়নে হেফাজত কাজ করছে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

এদিকে সরকার তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান শুরু করার পর গত ২৫ এপ্রিল রাতে আকস্মিকভাবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আবার একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয় যাতে বিলুপ্ত কমিটির আমিরকেই প্রধান এবং ওই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা ছিলেন তাদের সদস্য করা হয়েছে। এটা হেফাজতের এক ধরনের কৌশল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

তাদের মতে, কমিটি পরিবর্তনে হেফাজতের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসবে না। হেফাজত যে সাম্প্রদায়িক ও ধ্বংসাত্মক নীতি অনুসরণ করে প্রয়োজন সেই সাম্প্রদায়িক ও ধ্বংসাত্মক নীতির পরিবর্তন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ২৬ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে বলেন, হেফাজতে ইসলাম তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করছে, তবে শুধু বিলুপ্ত করলেই হবে না সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রাজনীতিও বিলুপ্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
এসকে/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।