ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। তাই সতর্ক সংশ্লিষ্ট সব নিরাপত্তা সংস্থা।

প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে এসএসএফের নিরাপত্তাবলয়নিশ্ছিদ্র করে তোলা হয়েছে । এছাড়া সর্বক্ষণ কড়া নজরদারি রাখছে র‌্যাব।

 পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা জোরদার করতে ও দেশব্যাপী সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

সরকারপক্ষ মনে করছে, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্রই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও নাশকতার হুমকি তৈরি করছে। তাদের পেছনে বিএনপির ইন্ধন থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে তারা।

সরকারপক্ষ আরও মনে করছে, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনেও সরকারবিরোধীরা সক্রিয়।


শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই তাকে হত্যার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। গত চার দলীয়-জোট আমলে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর তার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণাকালেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হাসিনা।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানায়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। এরপর গত জুন ও জুলাই মাসে অন্তত তিনটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাকে হত্যার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তোলেন।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন একাধিকবার অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোটই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে চায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.দীপু মনি গত ১২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান। একই সঙ্গে সব ধরণের নাশকতা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলারও ঘোষণা দেন তিনি।

সর্বশেষ, গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর খোদ প্রধানমন্ত্রী তাকেসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যের নিরাপত্তা -হুমকি ও দেশজুড়ে নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে  সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তার নিরাপত্তায় আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ইস্যুতে অবশ্য কিছুটা ভিন্ন ভাবনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি যারা সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদের নিরাপত্তার হুমকি থাকাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের দেশের কিছু নেতার এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। ’

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কারা হুমকি তৈরি করছে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যদি এরকম হুমকি এসে থাকে তাহলে এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ’

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষায় কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে সরাসরি জবাব  এড়িয়ে যান আব্দুস সালাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা কবে কি বলেছেন তা বলতে পারবো না। সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে কখনো আলোচনা হয়নি। তবে বিষয়টি আমি পত্র-পত্রিকা পড়ে জেনেছি। যারা দায়িত্বে আছেন তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ’

বাস্তব অবস্থা যা-ই হোক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও হাসিনাভক্তদের উদ্বেগ বাড়ছেই।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি চক্র শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি ধ্বংস করাই ওই চক্রের উদ্দেশ্য। ’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে তারাই ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। এখন তারাই শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী এ চক্র দেশ, জাতি, জনগণ ও ধর্মের শক্র। এরা সংখ্যায় কত তা বড় কথা নয়, তারা সুসংগঠিত ও বিপথগামী। তারা সহজ সরল তরুণ-যুবক ও মাদ্রাসা ছাত্রদের নগদ অর্থ ও জিহাদের ভ্রান্ত লোভ দেখিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। এরা ধর্মের নামে ইসলামের ক্ষতি করছে। ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনও মানুষ খুন করতে পারে না। ’

আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৮ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তার নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতায় দেশ ও জনগণ উপকৃত। তিনি কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। এতে যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে তারাই তাকে (হাসিনা) হত্যা করতে চাইছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণ। দেশের প্রধান শক্তি ও হাতিয়ার জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।