ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সরকার শিথিল হলে করোনা পরিস্থিতি জটিলতর হবে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
সরকার শিথিল হলে করোনা পরিস্থিতি জটিলতর হবে ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: করোনা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে না এলেও ঢিলেঢালা ও শিথিল অবস্থান নিয়েছে সরকার। সরকারের এই অবস্থান পরিস্থিতি জটিলতর করে তুলতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছিল তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। কমিয়ে আনা হয়েছে নমুনা পরীক্ষা। ফিস নির্ধারণ করায় অধিকাংশ মানুষের করোনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি জানাতে প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে অনলাইন ব্রিফিং করা হতো সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সবশেষ তথ্য সম্পর্কে মানুষ অবগত হয়েছে এবং এতে সতর্কতার তাগিদ কাজ করেছে।

অন্যদিকে করোনা চিকিৎসার হাসপাতালও কমিয়ে আনছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনার প্রকোপ কমে আসছে। আমরা অনেকগুলো হাসপাতাল নন-কোভিড করে দিচ্ছি এ মাসের শেষে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা সংক্রমণের এখনো ঊর্ধ্বগতি রয়েছে এবং করোনা রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালে সিট পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা থেকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপের হিসাবে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি এবং সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) জরিপ অনুযায়ী শুধু ঢাকাতেই ১৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। আর সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৭১ হাজার ৮৮১ জন আক্রান্ত।

এই পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে অর্থাৎ ব্যাপক পর্যায়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এবং সব কিছু ঢিলেঢালা ও আরও শিথিল করে দেওয়া হলে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনো কমেনি। একটা সময়ের মধ্যে কমে যাবে এটাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছি। ঝুঁকি থেকে বের হতে পারছি না। মানুষ আর সর্তক থাকছে না। সরকারও মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন বাংলানিউজকে বলেন, মনে হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আক্রান্তের মাত্রা বেড়ে গেছে। আক্রান্ত কোন পর্যায়ে আছে সেটা বোঝার জন্য যে পরিমাণ পরীক্ষা দরকার সেটা হচ্ছে না। সরকারের তথ্য আর সরকারেরই প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্যের মধ্যে পার্থক্য অনেক। সরকারও ঢিলেঢালা অবস্থানে। মনে হচ্ছে সরকার মানুষকে একটা বার্তা পৌঁছে দিয়েছে— যা হয় হোক। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি জটিলতর অবস্থায় প্রবেশ করবে, যার জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হবে।

আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখনো সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে আছে। ঈদের পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের বড় বড় শহরসহ ৩০টি জেলায় সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি। এটা আরও বেড়ে যাবে। হাসপাতালে সিট খালি রয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী সিট পাচ্ছে না এটাও আছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংটা অন্তত সপ্তাহে দুই দিন করা দরকার। সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে। হাল ছেড়ে দিলে বিপদে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।