ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন

ঢাকা: ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদের আনন্দ নেই বিএনপি নেতাদের। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে থাকলেও নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না।

করোনা মহামারির কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মনে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে।  বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন পর মুক্তি পেয়েও করোনার কারণে বাসায় অনেকটা বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথী ও তার দুই মেয়েও ঈদ করবেন লন্ডনে।

প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু গত দুই বছর যাবত চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় তা হয়নি। এবারও করোনার কারণে খালেদা জিয়ার বাসায় অথবা অন্য কোনো স্থানে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না। তবে ঈদের নামাজের পরপরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে বাসায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও নির্ভর করছে নেত্রীর ইচ্ছার ওপরে। নেত্রী যদি তাদের বাসায় দেখা করার সুযোগ দেন তাহলে হয়তো দেখা হতে পারেন।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন সন্ধ্যায় আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মহাসচিবসহ ম্যাডামের সঙ্গে যেভাবে সাক্ষাৎ করেছিলাম এবার ঈদেও সেরকম সাক্ষাতের সুযোগ হতে পারে। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া অন্য কারও সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ হবে না।

জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে প্রতিবার ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতেন। এবার করোনার কারণে অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন না। অনেকে করোনার ভয়ে ঢাকার বাসায় গরু কোরবানিও করছেন না।  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাতেই ঈদ করবেন। তিনি উত্তরার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। গুলশানের নিজ বাসায় তিনি গরু কোরবানি করবেন বলে জানান। ইতোমধ্যে গরু ক্রয় করা হয়েছে।  

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত মার্চ মাস থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছি। চার মাস পুরো হয়ে গেলো। ঈদের নামাজেও বাইরে যাবো না।  

সময় কীভাবে কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বই লিখছি। ইতোমধ্যে দু’টি বই লেখা শেষ করে ফেলেছি। দিনে আট ঘণ্টা বই নিয়েই ব্যস্ত থাকি। গরু ক্রয় করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এখানে নয় গ্রামে গরু কোরবানি হবে।  বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) গরু ক্রয় করা হয়েছে।

এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ করবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।  

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ভারতে আছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। সালাহউদ্দিন জামিনে থাকলেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ভারতেই ঈদ করতে হচ্ছে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বাসায় আছি। ঈদের দিন কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঢাকার বাসায় গরু কোরবানি করবো না।

দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, মীর নাসির উদ্দিন ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু ঢাকায় ঈদ করবেন।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আমেদ, রিয়াজ রহমান, সুকোমল বড়ুয়া, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, তাহসীনা রুশদীর লুনা ঢাকায় ঈদ করবেন।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে ঈদ করবেন।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম করোনার কারণে আমেরিকায় আটকা পড়েছেন। তিনি সেখানে ঈদ করবেন।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকায় ঈদ করবেন।  যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ঈদ কাটবে কারাগারে ও যুগ্ম মহাসচিব  মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালে ঈদ করবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন নিজ এলাকা গাজীপুরে, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকায় ঈদ করবেন।  শামীমুর রহমান চট্টগ্রামে, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাটে ঈদ করবেন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিক সিকদার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আকতার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন নিজ এলাকা বগুড়ার শেরপুরে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নিজ এলাকা নরসিংদীতে ঈদ করবেন।

বিএনপি দলীয় এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ঢাকায়, যুগ্ম-মহাসচিব হারুন অর রশীদ এমপি চাপাইনবাবগঞ্জে নিজ এলাকায় ঈদ করবেন বলে তিনি বাংলানিউজকে জানান।  

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গরু ক্রয় করা হয়েছে। তবে তার স্ত্রী বিএনপির নেত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ঢাকায় ন্যাম ভবনে আছেন বলে জানান হারুন অর রশীদ।    

দলের এমপি মোশারফ হোসেন, জাহিদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার ঢাকায় ঈদ করবেন।  

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় নিজ নিজ বাসায় ঈদ উদযাপন করবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে শুধু আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। মহাসচিবসহ অন্য সবাই ঢাকায় ঈদ করবেন।  

খালেদা জিয়ার ঈদ কীভাবে কাটবে জানতে চাইলে শায়রুল কবির বলেন, ম্যাডাম তার ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজ বাসায় ঈদ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
এমএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad