ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিচলিত আ. লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিচলিত আ. লীগ

ঢাকা: দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর দুর্নীতি, অপকর্মের কারণে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। তাদের বেপরোয়া আচারণে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন, গত বছর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদিও গত বছর যেভাবে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিলো তা বেশ কয়েক মাস হলো সেভাবে দৃশ্যমান নয়।

তবে এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেও দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর বেপরোয়া আচরণ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেফতার হওয়া শাহেদ করিম দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। ঘটনার পর আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দলের উপকমিটিতে নেই। শাহেদের পর নকল মাস্ক সরবরাহ করে ধরা পড়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক উপকমিটির সদস্য শারমিন জাহান।  

শারমিন জাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেন। নকল মাস্ক সরবরাহের দায়ে বিএসএমএমইউয়ের মামলায় গত ২৪ জুলাই তিনি গ্রেফতার হন। শামিন ছাত্র লীগের সাবেক নেত্রী ও আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।  

এর আগে গত বছর শুদ্ধি অভিযানে দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগসহ কয়েকটি সংগঠনের কয়েক জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা নিজেকে অনেকটাই আত্মগোপন করে রেখেছেন। এর পরও দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ ধরণের আচরণে বিচলিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসায় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলের লোকেরাও মনে করছে কিছু পেতে হলে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে কিছু পাওয়া যাবে না। তারা আওয়ামী লীগে আসছে আওয়ামী লীগ করতে নয়, কিছু ধান্দা করতে। এরা আওয়ামী লীগে এসে দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট করছে আর দোষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের।

ওই নেতারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই লোকগুলোও সরে যাবে। তারা আবার নিজেদের দলে ফিরে যাবে। সেখানে গিয়ে নেতা হয়ে যাবে। কারণ তখন তাদের অনেক টাকা হাতে থাকবে। সাহেদরা এই উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগে আসে।

ওই নেতারা আরও জানান, অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি বা একবারেই শাস্তি না হওয়ায় দলের মধ্যেও কোনো কোনো নেতাকর্মীর ভয় কমে গেছে। তারা ভাবছে ধরা পড়লে কী হবে, বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ধরাধরি করে ও বিভিন্নভাবে পার পেয়ে যাওয়া যাবে, এটা হাচ্ছেও। এক শ’ জনে হয়তো দুই তিন জনের শাস্তি হচ্ছে। এ কারণে লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, অপকর্মকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায়। এ কারণে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল থেকে বিভিন্ন কৌশলে লোকজন আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছে। একটা উদ্দেশ্যে নিয়ে দলে ঢুকে দুর্নীতি, অপকর্ম করছে, নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছে। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের। ক্ষমতায় না থাকলে এরা ফিরে যাবে। শাহেদরা এভাবেই এসেছে। সরকার এদের ধরছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আর দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা যেনো ভয়ও পেতে চাচ্ছে না।

এদিকে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যদের একের পর এক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঘটনায় উপকমিটির ওপর ক্ষোভ বাড়ছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। দলের দায়িত্বশীল নেতারা যাচাই-বাছাই না করে নিজের গ্রুপ ভারি করার জন্য ঢালাওভাবে যাকে তাকে উপকমিটির সদস্য করেছেন বিভিন্ন সময়। আর এই কেন্দ্রীয় উপকমিটির নাম ভাঙিয়ে ধান্দাবাজরা বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।  

আগামী দিনে দলের উপকমিটির কার্যক্রম এবং সদস্য সংখ্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করছেন কেউ কেউ। অনেকে এই কমিটির প্রয়োজনীয়তা বা এর সদস্য সংখা নিয়েও ভাবছেন। এসব কমিটির সদস্য সংখ্যায় বেশি হওয়ায় দলের অনেকেই তাদের চিনতে পারেন না। এর ফলে উপকমিটির নাম ভাঙানো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো উপকমিটির এখন অনুমোদন নেই। এই কমিটির নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী না। আমি পার্টির আগামী সভায় পার্টি ফোরামে প্রস্তাব দেব উপকমিটি স্থগিত করার। উপকমিটি যদি রাখতেই হয়, তবে সীমিত সংখ্যক সদস্য করা হবে যা ৫/৭ জনের বেশি নয়, যাতে কেউ অপকর্ম করলে চিহ্নিত করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।