ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সরকার গোপন করছে: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সরকার গোপন করছে: ফখরুল

ঢাকা: করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সরকার গোপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেন তথ্য গোপন করলো? এর একটাই উদ্দেশ্য, গোটাজাতিকে অন্ধকারে রেখে তাদের অবৈধ শাসন পাকাপোক্ত রাখতে চায়। আমরা মনে করি, সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করেছে।

এই অপরাধের জন্য তাদেরকে অবশ্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

শনিবার (২১ মার্চ) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর ব্রিফিং করে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনগণের সাথে সম্পূর্ণরূপে প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করেছে। তারা মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা শুধুমাত্র আইইডিসিআরের মাধ্যমে তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন অনলাইন, পরিচিত চিকিৎসকদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি যে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

তিনি বলেন, যেসব দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি, সেসব দেশ থেকে যারা আসছেন তাদেরকে পরীক্ষা করা জরুরি ছিল। বিমানবন্দর, স্থল বন্দর, সমুদ্র বন্দর দিয়ে যারা এলেন সেই যাত্রীদের পরীক্ষা বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে অপ্রতুল ছিল। কারণ একটিমাত্র স্কানিং মেশিন ছিল ঢাকা বিমানবন্দরে। চট্টগ্রামে আছে বলে জানা নেই। ইতোমধ্যে রিপোর্ট এসেছে গত ৫৫ দিনে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার বিদেশি দেশে এসেছে। এরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এদের মাধ্যমে এটা ছড়িয়ে পড়ার অবস্থা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের ওপরে মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে লক্ষাধিক। এটা এমন একটা ভাইরাস যে গোটা পৃথিবী অসহায় বোধ করছে। গোটা পৃথিবীর নেতা-রাজারা পর্যন্ত অসহায় বোধ করছেন। যে ট্রাম্প কয়েকদিন আগেও অনেক অবজ্ঞার সুরে কথাবার্থা বলেছেন। তাকে গোটা জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুনলাম, সবাই সাবধান হও। আমরা ফাইট করব। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশ। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে তাতে একটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এটা যদি বন্ধ করা না যায় তাহলে সমাজে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েব। আমরা এখানে সরকারের সীমাহীন অবহেলা দায়িত্বহীনতা দেখতে পারছি। জনগণের প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব কতটুকু তা মন্ত্রীদের কথাবার্তাই বোঝা যায়।

তিনি বলেন, এই চরম দুঃসময়ে পরীক্ষার মাত্র একটি জায়গা। আমরা মনে করি, কমপক্ষে প্রতিটি জেলায় পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। আর ঢাকায় যেহেতু জনসংখ্যা অনেক বেশি তাই ঢাকায় প্রত্যেকটি হাসপাতালে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা চিকিৎসা করবেন তাদের উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।

পরীক্ষার কিট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিট উদ্ভাবন করায় তাকে আমাদের সভায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তারা যেন দ্রুত এই কিট উৎপাদন করতে পারে সেজন্য সরকারকে সহায়তা করার আহবান জানাচ্ছি।

করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত দু-তিন দিনে দু’জন মারা গেছে আর ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতেই ঢাকা শহরের লোকজন কমে গেছে। আমি আজকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখলাম, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের লোকজন। গার্মেন্টর এর বহু অর্ডার বাতিল হয়েছে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস এর মালিকেরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। আমরা মনে করি, এই নিম্ন আয়ের মানুষদের সরকারের তরফ থেকে ভাতা প্রদান করা উচিত। একদিন আয় করতে না পারলে তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা আশঙ্কা করছি সরকার যদি কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ না করে, আর একমাস এভাবে চলে তাহলে সাধারণ মানুষ খাবার পাবে না। তার ওপরে জিনিসপত্র, চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে এটাকে বৈশ্বিক বিপর্যয় মনে করি। সেজন্য আমরা দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি আসুন আমরা আতঙ্কিত না হয়ে মোকাবিলা করি। এই মোকাবিলা করতে গিয়ে যা যা করা দরকার করি। ব্যবসায়ীদের বলব, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করবেন না। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ান।

ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা এত করে বললাম এটা বন্ধ করেন। তারা করলো না। আজকে কী হয়েছে শতকরা ২ ভাগ ভোট পড়েছে।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপি দলের বৈঠকে স্কাইপের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে মহাসচিবসহ উপস্থিত ছিলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
এমএইচ/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।