ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

অনুপ্রবেশ: আলোচনায় বিয়ানীবাজার আ’লীগ সভাপতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৯
অনুপ্রবেশ: আলোচনায় বিয়ানীবাজার আ’লীগ সভাপতি

সিলেট: সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিব মনিয়া। ষোল বছর ধরে এ পদ সামলাচ্ছেন তিনি। এতদিন বিষয়টি নিয়ে কারও টু শব্দটি শোনা না গেলেও সম্প্রতি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের তালিকা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা চলছে তাকে নিয়ে। উপজেলার আলবদর সদস্য আব্দুল খালিকের ছেলে আব্দুল হাসিব মনিয়াও ওই সংগঠনের সদস্য ছিলেন বলে দাবি অনেকের। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাল উদ্দিন নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী রাজাকার-আলবদরের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ঘটনায় মনিয়াও জড়িত বলে অভিযোগ শোনা যায়। যদিও মনিয়ার দাবি, কিছু বইয়ে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিভিন্ন বই ও নথি ঘেঁটে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার খাসা দিঘিরপাড় এলাকার আব্দুল খালিক ছিলেন আলবদর সদস্য। আর তারই ছেলে আব্দুল হাসিব মনিয়াও ছিলেন আলবদর।

যুদ্ধের সময় মনিয়ার বয়স ২০-২২ বছর। তিনি পাকিস্তানিদের রসদ যোগাতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার-আলবদরদের হাতে খুন হন জামাল উদ্দিন নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে মনিয়াও ছিলেন বলে জানা যায়।
 
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড প্রকাশিত ‘রণাঙ্গনে ৭১’ বইটিতে বিয়ানীবাজার উপজেলার রাজাকারের তালিকায় ২৩৩ নম্বরে আছে আব্দুল হাসিব মনিয়ার নাম। তার আগে তালিকার ২২৩ নম্বরে আছে তার বাবা আব্দুল খালিকের নাম। মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল সম্পাদিত ‘রণাঙ্গনে ৭১’ বইটিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, আব্দুল হাসিব মনিয়া ১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই স্থানীয় স্বাধীন সুন্দরীর পিতা জামাল হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সদস্য।
 
এলাকায় শোনা যায়, স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন মণ্ডুলের জন্য খাবারের টিফিন বহন করে নিয়ে যেতেন মনিয়া। এজন্য এলাকায় তাকে ‘টিফিন কিয়ারী রাজাকার’ বলেও ব্যঙ্গ করেন স্থানীয়রা। কিন্তু এই অভিযোগ-জনশ্রুতি ছাপিয়েই ২০০৪ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন মনিয়া। এরপর দীর্ঘ ষোল বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের চালকের আসনে রয়েছেন তিনি।  

দলীয় সূত্র বলছে, আগামী ১৪ নভেম্বর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। মনিয়া এবারের কাউন্সিলেও সভাপতি হতে চান। তার বিপরীতে সভাপতি পদে প্রার্থী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।    
 
মনিয়ার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, একজন রাজাকার ১৬ বছর ধরে স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে, এটা দুঃখজনক। আব্দুল হাসিব রাজাকার, তার বাপও রাজাকার ছিলেন। তিনি ক্যাপ্টেন মণ্ডুলের জন্য দুপুরে টিফিন নিয়ে যেতেন, এজন্য তাকে এলাকায় টিফিন কিয়ারী রাজাকারও বলা হয়।  
‘রণাঙ্গনে ৭১’ বইয়ে আব্দুল হাসিব মনিয়া ও তার বাবা আব্দুল খালিকের নাম চিহ্নিতসুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ’৭১ সালে তার বাড়ির সামনে জামাল উদ্দিনকে গাছে বেঁধে হত্যা করা হয়। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া মকসুদুল ইসলাম আউয়ালের বাবা উপজেলার মুড়িয়া চান্দগ্রামের কুটুচান্দ মেম্বারও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।    
 
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দলে কোনো অনুপ্রবেশকারী, জামায়াত-বিএনপি ও রাজাকার সন্তানের ঠাঁই হবে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি।
 
আব্দুল হাসিব মনিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তারপরও বিতর্কিত কাউকে সংগঠনে না রাখার বিষয়ে অনড় হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাসিব মনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছি। লোকজন চায় আমি প্রার্থী হই। কেননা ১৯৬৬ সাল থেকে আমি আওয়ামী লীগে আছি। ছয় দফা আন্দোলনের পর থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়। ঊনসত্তর-সত্তরের নির্বাচনে আমি নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। তখন মোটরসাইকেল নিয়ে ভারতে যাই। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় এসে পাঞ্জাবীদের হাতে ধরা খেয়ে সম্পত্তি খুইয়ে পাঁচ মাস গোলাপগঞ্জের শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম। সেখানে থাকাকালে জামাল হত্যার ঘটনা ঘটে। জামাল আমারই কর্মী ছিলেন।
 
আব্দুল হাসিব মনিয়া আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণে মুক্তিবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানাই। এরপর সেখান থেকে বাড়িতে ফিরি। দেশ স্বাধীনের পর সিলেট ও বিয়ানীবাজারে ১০-১২টি বই ছাপা হয়। সেসব বইয়ে আমাকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দেখানো হয়।
 
মনিয়া আরও বলেন, বিগত পৌরসভা নির্বাচনের পর সুব্রত চক্রবর্তীকে ম্যানেজ করে বইয়ে (রাজাকার হিসেবে) আমার নাম দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বই বাতিল এবং দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছি। ওই মামলার ডিক্রি পেলে মানহানি মামলা করবো।  

বইতে নাম আসার পর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে তাকে ‘যুদ্ধাপরাধে জড়িত নয়’ বলেও প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয় জানিয়ে মনিয়া বলেন, নির্বাচন এলেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।