ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

মহেশখালীতে আ’লীগের কমিটিতে ‘বিএনপি-জামায়াত’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৯
মহেশখালীতে আ’লীগের কমিটিতে ‘বিএনপি-জামায়াত’

কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটির কাউন্সিলে ১৫০ জন কাউন্সিললের মধ্যে অন্তত ৫০ জন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ব্যক্তিকে কাউন্সিলর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। 

 

সেই কাউন্সিলররাই গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে এক রাজাকারপুত্রকে সভাপতি ও বিএনপি পরিবারের সন্তানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

এ ঘটনায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা জানান, দলের ওয়ার্ড কমিটিতে রয়েছেন ৫১ জন সদস্য। এই ৫১ জনের সঙ্গে রাতারাতি আরও ৯৯ জন যোগ করে ১৫০ জনের কাউন্সিলার তালিকা করা হয়েছে। যে তালিকায় রয়েছে একাত্তরের রাজাকার, জামায়াত ও বিএনপি সমর্থিত ৫০/৬০ আওয়ামীলীগবিরোধী লোকজন।

তারা আরও জানান, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যারা আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছেন এরা সবাই বিপুল অর্থ বৈভবের মালিক। এতদিন আওয়ামীলীগবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে এখন নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কৌশলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে বশে এনেছেন। এমনকি টাকা-পয়সার বিনিময়ে কাউন্সিলরদের মন জয় করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ হাতিয়ে নিয়েছেন।

গত ৩০ অক্টোবর কক্সবাজারের মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে রাজাকার শাহাদত কবির ছেলে মকছুদ আলমকে সভাপতি ও বিএনপি পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

হোয়ানক ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূলের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা জালাল আহমদ বাশি অভিযোগ করে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার শাহাদত কবির আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিলেন। কাউন্সিলর তালিকার ৪৮ নম্বর ক্রমিকে সেই রাজাকারের নামও রয়েছে। এছাড়া একাত্তরের রাজাকার শাহাদাতের চার ছেলে ১৫০ জন কাউন্সিলারের তালিকায় তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ৫০/৬০ জনকেই রাতারাতি কাউন্সিলার করা হয়েছে।

হোয়ানক ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ২০১১ সাল থেকে দলের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নির্যাতিত প্রয়াত ডা. ধনঞ্জয় কুমার দে’র ছেলে তুষার কান্তি দে।

তুষার কান্তি দে বলেন, একাত্তরে যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিয়ে আমাদের বাড়িতে লুট করেছিল, আগুনে পুড়িয়ে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছিল সেই কুখ্যাত রাজাকার শাহাদাত কবিরের বাহিনী এবার বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছে।

তিনি বলেন, একাত্তরে যাদের হাতে বাড়িঘর-সহায় সম্পদ হারিয়েছিলাম ২০১৯ সালে এসে এবার তাদের হাতে দলীয় পদবী হারাতে হয়েছে।

মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ২৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ সভাপতি এম আজিজুর  রহমান।

তিনি জানান, দলের দুঃসময়ে যারা বিরোধিতা করেছেন, সুসময়ে এসে এরাই এখন দলে অনুপ্রবেশ করতে ঘুরঘুর করছেন। সুযোগ খুঁজছেন। যা দলের জন্য অশনি সংকেত। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে হোয়ানক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক জফুর আলম।

তারা বলেন, এ অবস্থায় এসে কাউন্সিলারদের বিরুদ্ধে আর অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ নেই।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাতারাতি কাউন্সিলার তালিকা করে ব্যালটের নির্বাচন করা যাবে না। কেননা দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে। কাউন্সিলারদের তালিকা কমিটির কাছে পাঠাতে হবে। তা যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে কাউন্সিল করতে হবে।

তিনি বলেন, বিতর্কিত এ কমিটির বিষয়টি আমরা দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।