ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

জাতীয় শোক দিবসের ভাবনা ও প্রত্যাশা

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১০
জাতীয় শোক দিবসের ভাবনা ও প্রত্যাশা

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী-জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, সিপিবি সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ তাদের মনের ভাবনা ও এই দিনে তাদের প্রত্যাশার কথা জানান।    বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির কাছে তারা বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার কথা বলেন।

তেমনি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করার বিষয়েও জোর দেন।  

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত: কবীর চৌধুরী

শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকজন খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করেছে। এ বিচার কোনো প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি না হলে অপরাধ প্রতিষ্ঠা পেতো, মানুষ স্বস্তি পেতো না।

তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তা বের হওয়া দরকার। কেউ কেউ প্রত্যক্ষভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলো। আবার কেউ কেউ পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। এদেরও চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত। ’

কবীর চৌধুরী আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারকাজ শুরু করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। এই কাজ সম্পন্ন না করা হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। ’

’৭২ এর সংবিধানের মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে : মনজুর

৭২ এর সংবিধানের মুল ভিত্তি রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি পুনর্প্রতিষ্ঠা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। এ মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সংবিধান থেকে বাদ দেয়া যাবে না।

মনজুরুল আহসান খান জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে এসব কথা বলেন।

মনজুরুল আহসান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে। কয়েকজন বিদেশে পালিয়ে আছে।   তাদেরও অবিলম্বে ফিরিয়ে শস্তি কার্যকর করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে দেশি-বিদেশি যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও মদদ ছিলো স্বাভাবিকভাবেই বিচারের সময় সেটাও উঠে আসার কথা ছিলো। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যপার যে, বিচারের সময় সেই ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনের কোনো চেষ্টা হয়নি।

এজন্য একটি কমিশন করা দরকার, যে কমিশন এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে উদ্ঘাটন করে চিহ্নিতদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে।

শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে রাখলেই হবে না, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ধারাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর চার মূলনীতিকে সংবিধানে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ’৭২-এর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেয়া যাবে না। এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে যেতে চাচ্ছে।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর জামায়াত স্বাভাবিকভাবেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং সরকারের উচিত জামায়াতের অফিস সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া।

কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চান না। রাষ্ট্রীয় মূলনীতির প্রশ্নে এবং আওয়ামী লীগ তাদের দীর্ঘ দিনের নীতি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা বিএনপির অবস্থানে চলে যাচ্ছে।  

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি য্দ্ধুাপরাধের বিচারে সহায়ক হয়েছে: আমু

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার এবং ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় যুদ্ধাপরাধেদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী জাতীয় শোকদিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির কাছে এ মন্তব্য করেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, এ বছর একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ ও জাতীয় শোকদিবস পালন করছে। সেটা হলো ৩৪ বছর প্রতীক্ষার পর জাতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচার পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কেউ ইচ্ছা করলেই যা-খুশি  করতে পারে না, খুন করে কেউ পার পেতে পারে না। কেউই যে আইনের উর্ধ্বে নয়, দেরিতে হলেও তা প্রমাণিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকার তৎপর হয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর হওয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের জন্য সহায়ক হয়েছে। আদালতের সামনেও এটি দেশের  বিচারিক ইতিহাসের এক বড় মাইলফলক হয়ে থাকলো। য্দ্ধুাপরাধীদের বিচারেও এই রায় নানাভাবে  সহায়ক ও দৃষ্টান্তমূলক। এভাবে নৈরাজ্যকর অবস্থা েেক দেশে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

বঙ্গবন্ধু চিরদিন থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে: তোফায়েল

ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে শারিরিকভাবে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বাঙালি জাতি যত দিন টিকে থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য, সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব, প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে এ কথা বলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৫ আগস্ট একটি কালো দিন, বাঙালি জাতির কলঙ্কের দিন। এই দিন ঘাতকরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। যে বঙ্গবন্ধু না হলে আমরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পেতাম না। বাঙালির সেই অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আমাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৭ আগস্ট রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর মোস্তাকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে ও জিল্লুর রহমানকে। সরকারের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি করা হয়, নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু সে অপশক্তি আমাদেরকে রাজি করাতে পারেনি। ১২ দিন নির্যাতন চলে আমার উপর। আমাকে ২০ মাস জেলে রাখা হয়। প্রথমে ময়মনসিংহ জেলে পরে কুষ্টিয়া জেলে পাঠানো হয়। স্মৃতি হাতড়ে এসব কথা বলে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তোফায়েল আহমেদ।  

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শাস্তি হয়েছে, কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে বাঙালি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ঘাতকরা শরিরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ’
 
বাংলাদেশ সময় ১১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।