ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিলুপ্ত করলে ভুল হবে: ব্যারিস্টার রফিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১০
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিলুপ্ত করলে ভুল হবে: ব্যারিস্টার রফিক

ঢাকা: ওয়ান-ইলেভেনের জন্য বিএনপির চার প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মওদুদ আহমদ, নাজমুল হুদা ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তবে ওই সময় তাদেরই সর্বাধিক নির্যাতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে এই সত্য উপলব্ধি করার পরামর্শ দিয়েছেন।



শনিবার দৈনিক যুগান্তর আয়োজিত ‘৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার জুনিয়র ব্যারিস্টার আমিনুল হকই খালেদা জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের তালিকা আমার কাছে ছিল। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এসে ওই তালিকা নিয়ে তাতে দাগ দিতেন, কার প্রমোশন হবে আর কার হবে না। আমিনুল হক, মওদুদ আহমদ, নাজমুল হুদা আর সাকা চৌধুরীই ওয়ান-ইলেভেনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। আর দুর্ভাগ্য হলোÑ এ চারজনই ওয়ান-ইলেভেনের সময় সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন। ড. কামাল হোসেন হলেন ওয়ান-ইলেভেনের পরামর্শদাতা। এ নিয়ে অন্যদের গালি দিয়ে লাভ নেই। গালি দিতে হলে এদেরই দিতে হবে। ’

সাবেক এ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংবিধানকে যুগোপযোগী এবং ২০৫০ সালের উপযোগী করতে হবে। এজন্য ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে আসা কখনোই সম্ভব নয়। সবার মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন করলে সংবিধান গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী হবে। ‘

এজন্য তিনি বিশেষজ্ঞ ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়ার জন্য কমিটিকে পরামর্শ দেন।

তিনি সংবিধানের বিশেষ কমিটি গঠন সম্পর্কে বলেন, ‘এ কমিটিতে বিএনপির থাকা প্রয়োজন ছিল। বিএনপির মতামত গৃহীত না হলে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারে। ’

কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“সরকার ’৭২-এর সংবিধান পনুঃপ্রবর্তনের কথা বলছে। এটা করার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। কিন্তু তিনি তো নিজেই ’৭২-এর সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি। বঙ্গবন্ধু নিজে যেখানে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে তিনি দ্বিমত পোষণ করেছেন। আর তাকেই সেই ’৭২-এর সংবিধান পনুঃপ্রবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ”

ব্যারিস্টার রফিক আরও বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপিল করা হয়েছে। কিন্তু আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর করেনি। আপিল বিভাগের উচিত ছিল পঞ্চম সংশোধনীর ক্ষেত্রে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করা। সংবিধানে এরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত থাকা সত্ত্বেও আপিল বিভাগের লিভ না দেওয়া একটা লজ্জার বিষয়। এরকম একটি বিষয় নিয়ে দাঁড়ালেই আপিল বিভাগের লিভ মঞ্জুর করা উচিত। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে লিভ খারিজ করা হয়েছে। তারপর পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে, কোথায় সেই পর্যবেক্ষণ? বিচারপতি হামিদুল হক রিমান্ড সম্পর্কে ২০০০ সালে একটি রায় দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। আপিল বিভাগও হামিদুল হকের রায় বহাল রেখেছে। তিন মাসের মধ্যে এ রায় কার্যকরের কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। কোর্টকে যখন প্রয়োজন, তখন সরকার কোর্টকে ব্যবহার করে, আর যখন প্রয়োজন নেই তখন কোর্টকে বাদ দেওয়া হয়। ’

ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাসকে উপলব্ধিতে আনার পরামর্শ দিয়ে সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে যারাই খেলবেন, তারাই ভবিষ্যতে ‘ভিকটিম’ হবেন। বিশেষ কমিটি শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিলুপ্ত করার জন্য করা হলে ভুল হবে।

‘৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান হতে হবে সবার জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য নয়। ’

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ওয়ান-ইলেভেনের জন্য চার নেতাকে দায়ী করে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বৈঠকে উপস্থিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মুচকি হেসে মাথা নিচু করে বসেছিলেন। এ ব্যাপারে তার তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বৈঠকের প্রধান অতিথি থাকায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বক্তৃতার পালা তার আগেই শেষ হয়।

যুগান্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবি নেতা হায়দার আকবর খান রনো, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবুল মকসুদ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ‘সুজন’ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক সাইফুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।