ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস-তারেক রহমান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২৪, জুন ১৩, ২০২৫
কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস-তারেক রহমান বাঁয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, ডানে তারেক রহমান

ঢাকা: কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের রাজনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি— অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

আজ শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, সংস্কারসহ বহু অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

‘ওয়ান টু ওয়ান’ এই বৈঠকটিকে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাব্য প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এটি একান্ত বৈঠক হিসেবেই নির্ধারিত, তবে শেষ দিকে দুই পক্ষের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে পারেন বলে জানা গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ভিডিও বার্তায় জানান, ‘ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হবে। তবে যদি উনারা মনে করেন, আরও কেউ থাকবেন, সেটি দুই লিডারই ডিসাইড করবেন। ’

বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে আলোচনার শীর্ষে থাকবে আগামী নির্বাচনের সময়সীমা। ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। বিএনপি এই সময়সীমা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে পারে। সূত্র বলছে, এক্ষেত্রে বিএনপি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবি থেকে কিছুটা সরে আসতে পারে।

বিএনপি মনে করে, এপ্রিল মাস ভোটের জন্য উপযোগী সময় নয়। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, এই সময়ে প্রচণ্ড গরম এবং ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এর আগে আছে রোজা ও ঈদ। এ সময় নির্বাচন হলে রোজার মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে।

তাই বিএনপি আশা করছে, সরকার ভোটের সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। তবে সরকার যদি এপ্রিলে অনড় থাকে, তাহলে বিএনপির পক্ষে তা মানা কঠিন হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি হতে পারে উভয় পক্ষের সমঝোতার সময়সীমা। দুই পক্ষের সমঝোতায় হয়তো ফেব্রুয়ারিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা হতে পারে।

বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরকার থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়েও। সরকারের তিনজন উপদেষ্টার বিষয়ে বিএনপি এর আগে আপত্তি জানিয়েছিল। দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি, সরকার ও প্রশাসনে থাকা ‘পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের’ সুবিধাভোগী ও দোসরদের দায়িত্ব থেকে সরানোর বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, সংস্কার প্রসঙ্গ উঠলেও তারেক রহমান নিজ থেকে এই বিষয়টি তুলবেন না। যদি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তারেক রহমানকে এরইমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, সরকারের দিক থেকে বৈঠকে কী কী বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মৌলিক সংস্কার এবং জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার মানুষ হত্যার বিচার ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে।

ফলে নির্বাচন, সংস্কার ও ‘জুলাই ঘোষণা’সহ নানা প্রসঙ্গ ঘিরে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে সব মহলে প্রবল কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক আভাস না মিললেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টিও আলোচনায় উঠতে পারে।

যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকালের ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘এই বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি নেই। উনারা (অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান) যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এই সময়ের যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ’

আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও ‘জুলাই চার্টার’—সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে তিনি জানান। এ বৈঠককে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিএনপির দিক থেকে এই বৈঠককে বর্তমান রাজনৈতিক ট্রানজিশন পিরিয়ডের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠককে সবচেয়ে বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ আখ্যা দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বৈঠকে নতুন একটি দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এটা হবে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক, এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। এই বৈঠক নির্বাচন, সংস্কার ও গণতন্ত্রকে অনাদিকাল পর্যন্ত এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত মঙ্গলবার (১০ জুন) চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। তার সফরের আগেই এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা তুঙ্গে ছিল। তাই আজকের বৈঠককে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম কৌতূহল ও প্রত্যাশা বিরাজ করছে।

যদি বৈঠক ফলপ্রসূ হয়, তাহলে নির্বাচনকালীন দূরত্ব, রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে মতানৈক্য রয়েছে, তা নিরসনের পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে।

এসবিডব্লিউ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।