ঢাকা: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, সবাইকে বলছি, আপনারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন।
বুধবার (২৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল আয়োজিত “তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা” শীর্ষক সমাবেশে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
সমাবেশে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ সবার জন্য মৌলিক কর্মমুখী শিক্ষা, সর্বোচ্চ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বিএনপি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে যারা অসচ্ছল রয়েছে, তাদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড করার উদ্যোগ নিয়েছি। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে তাদের আর্থিক সহায়তার আওতায় আনা হবে। একদিকে তাদের আর্থিক সংকট কাটবে এবং স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হবে। কৃষকদের জন্য ফারমার্স কার্ড প্রণয়ন করা আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই ফারমার্স কার্ডে জমির পরিমাণসহ যাবতীয় তথ্য থাকবে।
সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণই বিএনপির ক্ষমতার মূল উৎস। ক্ষমতায় না থাকলেও বিএনপি জনগণের উন্নয়নের কথা সবসময় চিন্তা করে। যে কোনো দলের কর্মসূচি পালনের জন্য দরকার একটি নির্বাচনী সরকার, আর বিএনপি শুরু থেকেই এই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচিত হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করবে। দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে যদি জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে আমাদের আর পিছিয়ে থাকতে হবে না। এটা কথা বলার রাজনীতি নয়, এখন বাস্তবায়ন ও দৃষ্টান্ত স্থাপনের সময়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভেতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারো কারো মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চান, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান, তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।
তারেক বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। কিন্তু আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, সেই স্বৈরাচারের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি। উত্তর কোরিয়ার সরকার পরিচালনায় একটি কথা আছে ‘গণতন্ত্র সবার আগে’। কিন্তু কথাটি শুধু লেখা মাত্র। তাই বলতে চাই, এমন কিছু করা যাবে না যাতে মানুষের বিশ্বাস বা আস্থার জায়গায় থাকা না যায়। বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা যেন থাকে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
জনগণের প্রতি তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?
জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রতিপক্ষ বানাবেন না, বলেন তারেক রহমান।
বক্তব্যের শেষে তারেক রহমান শ্লোগান দিয়ে বলেন, দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ... সবার আগে বাংলাদেশ।
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে “তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা” শীর্ষক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
টিএ/এমজে