ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জুন ২০২৪, ০৭ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

আমলানির্ভর ব্যবস্থা ছেড়ে গণমুখী বাজেট তৈরির তাগিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
আমলানির্ভর ব্যবস্থা ছেড়ে গণমুখী বাজেট তৈরির তাগিদ ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: আমলানির্ভর ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গণমুখী বাজেট তৈরি করার তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ।

শুক্রবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘বাজেট ও যুব সমাজের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তাগিদ দেন।

এম এম আকাশ বলেন, জাতীয় বাজেটকে গণবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী করতে হলে তেভাগা পদ্ধতিতে যেতে হবে। তেভাগা মানে হলো প্রথমত উৎপাদনমুখী, দ্বিতীয়ত ভৌত-কাঠামো এবং তৃতীয়ত-সামাজিক উন্নয়ন। এ পদ্ধতিতে আমলানির্ভর ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে। তার জন্য অংশগ্রহণ ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমলাতন্ত্রকে ভেঙে জনগণের শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। অসৎ আমলা, অসৎ রাজনীতিবিদ ও অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বামপন্থি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খান আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নুর সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন।

সেমিনারে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবীব ইমন।

সেমিনার পেপারে বলা হয়, যুবকরাই বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করছেন। উন্নয়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, তা যতই চকচকে হোক না কেন, প্রকারান্তরে তার জোর কম। দেশর কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠীকে কাজের বাইরে রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে তাই বিশাল তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সেমিনার পেপারে শ্রমবাজারের সংকট নিরসনে ‘কর্মসংস্থান কমিশন’ গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, হাফিজ আদনান রিয়াদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা সুমা আক্তার, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবীর স্বপন, বিপ্লবী যুব মৈত্রীর সভাপতি সৈয়দ মাশুক শাহী, বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শুহাইল আহম্মেদ শুভ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।  

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, মানুষের দেওয়া কর অনেকাংশেই সরকারের নিকট পৌঁছায় না, ফলে বাজেটে সরকার অনেক ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। বাজেট দেওয়ার পর বরাদ্দের কোনো পরিবর্তন করা হয় না। কিন্তু বাজেট বরাদ্দের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যে, কোন কোন খাতে বাজেটে বরাদ্দ কাজ করবে না। এই সিন্ডিকেট থেকে বের হতে হবে। শিক্ষা হোক বা কর্মসংস্থান হোক, কোথায় বরাদ্দ কাজে লাগাবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়ের কতভাগ বাস্তবে জনগণের কাজে লাগছে সেটা বের করা জরুরি।  

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা বলেন, বাজেটে গণতান্ত্রিক বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এমন গোপনীয়ভাবে এটা করা হয় যেন সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, সমাজের যুবকদের একটা বিরাট অংশ নিষ্ক্রিয়। এদের মধ্যে মাদকাসক্তির একটা প্রভাব বাড়ছে, যা সমাজের জন্য ভয়াবহ। নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। সরকারি চাকরি এখন শুধু স্থায়ী চাকরি নয়, ক্ষমতা, অবৈধ উপার্জন, বিলাসিতার ক্ষেত্র। কর্মক্ষেত্রের সব জায়গাকে সমসম্মানের করতে পারলে এই নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে বের হয়ে আসা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
আরকেআর/ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।