ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের ১০ দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের ১০ দাবি

ঢাকা: শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করাসহ পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে ১০ দাবি উত্থাপন করেছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম।

শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। সভাপতিত্ব এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাছির উদ্দীন।

ফোরামের পক্ষ থেকে বৈঠকে নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।

১) ‘বিতর্কিত’ শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক এবং দ্বীনদার শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা।

২) পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয় হতে ‘বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী’ প্রবন্ধসমূহ বাদ দেওয়া। স্কুল ও মাদরাসার সব
পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা।  

৩) মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার, ইসলামিক স্কলার শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা।

৪) শিক্ষকদের স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে।

৫) ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী’ ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা। সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমাল প্রণয়ন করা।

৬) ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্ব-স্ব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এবং পাঠ্য-পুস্তকের নামকরণ নিজ ধর্মের নাম অনুসারে করা।

৭) নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সব ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

৮) শিক্ষার সব ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা।

৯) পুরুষ ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক বেকারত্ব ও খাদ্য ঘাটতির সমাধান এবং অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ‘কৃষি শিক্ষা’ ও ‘গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শিক্ষা সব শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১০) শিক্ষা নিয়ে ‘আপত্তি ও বিতর্কের ঝড়’ সমাধানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও দ্বীনদার ইসলামিক স্কলারদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা।

‘শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা গেলে জাতিকে ধ্বংস করা যায়’
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা থেকে যদি বঞ্চিত রাখা যায় তবে জাতিকে ধ্বংস করা যায়।  

তিনি পাঠ্যক্রমের কিছু বিষয় তুলে ধরে এর সমালোচনা করেন। ফয়জুল করীম বলেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে কৃষি শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। গার্হস্থ্য শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন শিল্প সংস্কৃতির মধ্যে ঢোল-তবলা দেওয়া হয়েছে। এটা শিল্পকলার কাজ, জাতীয় কারিকুলামে এটা হতে পারে না।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম, প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ।  

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দীন খান বলেন, আমরা মনে করি সবার মেধা ও প্রতিভা কখনোই এক হবে না। কিন্তু সরকার, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য ও প্রতিভার বিভিন্নতা বিবেচনা না করে বাধ্যতামূলকভাবে সব ছাত্র-ছাত্রীকে একমুখী মডেলে তৈরি করতে চান। শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১- এ সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো প্রায় প্রতিটি বিষয়ই সবচেয়ে কম মেধাবী ছাত্রের কথা বিবেচনা করে পাঠাপুস্তক প্রণীত হয়েছে যা বিজ্ঞান বইগুলোতে চোখ রাখলেই এর বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাবে। এতে করে আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মেধার বিকাশ করতে পারবে না। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। জাতি হিসেবে আমরা আরও পিছিয়ে পড়বো।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।