ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

সরকার ও কমিশনের পতন ঘটিয়ে নিবন্ধন নেব: নুর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
সরকার ও কমিশনের পতন ঘটিয়ে নিবন্ধন নেব: নুর

ঢাকা: গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি (একাংশ) নূরুল হক নুর বলেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পতন ঘটিয়েই আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধন নেব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

রোববার (১৬ জুলাই) নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণ অধিকার পরিষদকে নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে নির্বাচন ভবনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

নুর বলেন, আমরা সকাল বেলা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার, সচিব সাহেবকে আমাদের সাংগঠনিক বিষয়ের আপডেট এর চিঠি নিয়ে এখানে সশরীরে হাজির হয়েছি। এর আগে সাধারণত আমরা কোনো চিঠি নিয়ে সশরীরে এখানে আসিনি। আমরা মনে করেছি, নিবন্ধনের কার্যক্রমটা যেহেতু চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের যেই কর্মকর্তারা আছেন, তারা বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা প্রভাবিত।

তিনি বলেন, সিইসির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তার কথাবার্তায় একটু অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে আমাদের কাছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভালো কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করলেও এ পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য করতে পারছেন না। তার হাত-পা বাঁধা। আমরা তার কথাবার্তা ও কার্যক্রমে বুঝতে পেরেছি। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ এবং তারা দলদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ সেটি তারা প্রকাশ করেছে। আমরা বারবার বলেছি, এ মেরুদণ্ডহীন দলদাস কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। যে কারণে বিরোধী দলগুলো এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের ঘোষণা পরিষ্কার যে, নিবন্ধন ও নির্বাচনে সময়ক্ষেপণ করে মূল ফোকাস থেকে দূরে সরে যেতে চাই না। বর্তমানে একদফা আন্দোলন চলছে। একদফা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠণ এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।

তিনি বলেন, আজকে যারা দালালি করেছে, যারা দালালির ভূমিকায় উপস্থাপন করেছে, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আপনাদের অধীনে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভবন নয়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে, দালালির পুরস্কার আপনারা পাবেন। জনগণ আপনাদের রাস্তাঘাটে দেখলে থুথু মারবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমাদের নিবন্ধন না পাওয়া দলীয় কোন্দলের কোনো বিষয় না। প্রত্যেকটা দলের কিছু নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম থাকে এবং আমরা সেটি কমিশনকে সাংগঠনিকভাবে অবহিত করেছি। যেসব দলগুলো মাঠে একটিভ আছে, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় আছে, তাদের নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের শর্ত ছিল ২২টি জেলায় কমিটি থাকতে হবে। আমাদের অলরেডি ৫৩টি জেলায় কমিটি আছে। ইসির শর্ত ছিল ১০০ উপজেলা কমিটি কিন্তু আমাদের ২০০ বেশি উপজেলা কমিটি আছে। তাহলে আমাদের দুর্বলতা কোথায়। তারপরও আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হলো না। আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন চলাকালীন সময়ে গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য ডেকেছিল। মিটিং করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাদেরসহ। যদি আমরা নির্বাচনে যাই এবং তাদের সঙ্গে যদি একমত পোষণ করি তাহলে দলের নিবন্ধনও দেওয়া হবে ও আগামী নির্বাচনে কিছু সিট দিয়ে এমপিও বানানো হবে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করেছি যে, আজকে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নির্বাচন ও বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে যারা ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষমতায় রেখে দেশ ও জাতির সর্বনাশ আমরা করতে পারব না। দলীয় সরকারের অধীনে গণঅধিকার পরিষদ কোনো নির্বাচনে যাবে না।

নিবন্ধন ফিরে পেতে আদালতে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সরকারের নিয়ন্ত্রিত ক্যাঙ্গারো কোর্টে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না। ওখানে মানুষ অবিচারের শিকার হয়। আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করব।

নুর আরও বলেন, দলগুলোর নিবন্ধনে যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক একজন উপসচিব ও অতিরিক্ত জেলা জজ, যিনি আইনকানুন সম্পর্কে ভালো বোঝেন। তার সঙ্গে কথা বলে দেখেন তিনি তদন্ত প্রতিবেদন কি দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের কপিও আমাদের হাতে আছে। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখে দিয়েছেন- গণঅধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারা নিবন্ধনের যোগ্য, এটি তদন্ত কমিটি লিখেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকার ও এজেন্সির পরামর্শে আমরা সরকার বিরোধী তাই আমাদের নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন দেয়নি ভালো। তবে আমরা এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পতন ঘটিয়েই আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধনও নেব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।

রোববার প্রাথমিক বাছাইয়ে ১২টি দলের তদন্তের পর দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। দল দুটি হলো-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।  

সোমবার (১৭ জুলাই) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে কারো কোনো আপত্তি আছে কিনা শুনবে ইসি। এরপর আপত্তি নিষ্পত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সংস্থাটি। এ সিদ্ধান্তের পর অন্য দলগুলোর আদালতে যাওয়া ছাড়া আর নিবন্ধন পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
ইইউডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।