ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

আ. লীগই যদি ঠিক করে, তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কী, প্রশ্ন জিএম কাদেরের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
আ. লীগই যদি ঠিক করে, তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কী, প্রশ্ন জিএম কাদেরের

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট দেবে। আমাদেরও কিছু সিট দিবে।

আমাদের বলা হয়, আপনারা আরও সংগঠিত হন, আপনাদের আরও বেশি সিট দেবে।  

তিনি বলেন, কে দেবে? আওয়ামী লীগ দেবে? জনগণ ভোট দেবে না? আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা যদি সিট দিতে পারেন, তাহলে নির্বাচনের দরকার কী? ঘোষণা দিয়ে দিন কে কে পাস করেছে। সাংবাদিকরাও প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগ কোন কোন সিট দেবে আপনাদের। নির্বাচনের অর্থ হলো জনগণ ঠিক করবে কে হবেন তাদের প্রতিনিধি। যদি আওয়ামী লীগই জনপ্রতিনিধি ঠিক করে দেয়, তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কী? 

সোমবার (৫ জুন) দুপুরে নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয় চত্বরে বেলা ঢাকা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ প্লাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ প্লাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত দেশের মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। আইনিভাবে বাকশাল করা হয়েছিল। এখন আইনগতভাবে না করলেও বাকশালের আদলে আওয়ামী লীগ প্লাস তৈরি করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আর তাদের সৌভাগ্য হলে আগামী নির্বাচনের পর বাকশালের নাম হবে আওয়ামী লীগ প্লাস।

তিনি বলেন, সারাদেশ গরমে পুড়ছে, সরকারের খবর নেই। সরকার ভাবছে, দেশের মানুষ মরণের পরে সবাই দোজখে যাবে। তাই দেশের মানুষকে এই গরমে প্র্যাকটিস করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। দেশের মানুষতো বেহেস্তে যাবে। তাদের দোজখের প্র্যাকটিস করাচ্ছেন কেন? যারা আমাদের দোজখের প্র্যাকটিস করাচ্ছেন, তারা ভাবছেন তারাই বেহেস্তে যাবেন। আসলে কি তারা বেহেস্তে যাবেন? 

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করে রেখেছে। তারপরও দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কেন? আসলে তারা আমাদের বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেননি। তারা লুটপাটের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আমাদের দরকার ১৪ হাজার মেগাওয়াট, আর তৈরি করা হয়েছে ২৪ হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম।
 
তিনি বলেন, সরকার এখন গ্যাস কিনতে পারছে না, কয়লা কিনতে পারছে না, তেল কিনতে পারছে না টাকার অভাবে। এ দেশের গরিব মানুষও বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখেনি। তাহলে সরকার কয়লা কিনতে পারবে না কেন? হাসি হাসি মুখে আপনারা বলেন, কয়লা কিনতে আরও দেড় মাস লাগবে। তাহলে আপনারাও আমাদের সঙ্গে আসুন, আপনারাও থাকুন আমাদের সঙ্গে দোজখের আগুনে। সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।

তিনি আরও বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে ঋণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এক হাজার কোটি টাকার স্টিমেটের প্ল্যান্টের জন্য খরচ হয়েছে মাত্র তিনশ কোটি টাকা। প্রকল্পে শাত থেকে আটশ কোটি টাকা ঋণ করে বাকি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই এক শ্রেণীর মানুষ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। দেশের মানুষ যেনো নরকে বাস করছে।  

জি এম কাদের বলেন, রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে। এটি আণবিক শক্তির দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। একই ধরনের কোম্পানি থেকে ভারতেও এমন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনেছে মাত্র ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। আর, আমাদের দেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে। এর মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আবার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। কোনো রকম ভুল ত্রুটি হলে অ্যাটম বোমার মতো বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, যে দেশে দারোয়ানদের অবহেলায় শত শত গার্মেন্টস কর্মীরা আগুনে পুড়ে মারা যায়, সেদেশে এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এখন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে চাহিদার চেয়েও বেশি, তাহলে কেন অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি করে এমন প্রকল্প নেওয়া হলো। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বললে তার নিস্তার নেই। অনেকে আমাকে বলেন, আপনার সৌভাগ্য এখনো আপনি গায়েব হননি।  

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক গল্প বলা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা নেওয়া হয়নি, নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। আসলে বাজেটের টাকায় দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। আমাদের বাজেট তৈরি হয়, ঘাটতি বাজেট। বাজেটের পরিচালন ব্যয় করতে হয় দেশি বা বিদেশি ঋণ দিয়ে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি, অথচ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সুদের হার একশ টাকায় ১ বছরে মাত্র ৫০ পয়সা। এক ধরনের সুদবিহীন ঋণ। পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে বিদেশি ঋণের বাজেটের টাকা। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা ফেরত দিয়েছেন কেন? দুর্নীতি যদি না হতো, তার প্রমাণ দিতেন।  

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু শেষ হয়েছে ৩২ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। পদ্মা সেতু আসলে ঋণের টাকায় তৈরি হয়েছে। তিনগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে পদ্মা সেতুতে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু? কীসের বাহাদুরি? বিশ্ব ব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণ না নিয়ে হয়তো অনেক বেশি সুদের ঋণের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। জনগণের গলায় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো গর্বের প্রকল্প হতে পারে না।  

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নামে ১২ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সরকার। জনগণের সামনে একদিন জবাব দিতেই হবে।  

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, এক বছর আগে জ্বালানিমন্ত্রী বলেছেন আমরা নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি করব, আর এখন বলছেন নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করব। জ্বালানিমন্ত্রী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রী এখন বলছেন, প্রয়োজন হলে পেঁয়াজ আমদানি করবেন। সরকারের এই মন্ত্রীদের জনগণ ক্ষমা করবে না।
 
সম্মেলনে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইসরাফিল খান খোকন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ০৫,২০২৩
এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।