ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

‘বর্তমান সংবিধানে রাজনৈতিক উন্নতি অসম্ভব’

স্টাফ করেসপন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
‘বর্তমান সংবিধানে রাজনৈতিক উন্নতি অসম্ভব’ গণপরিষদ আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বর্তমান সংবিধান দিয়ে রাজনৈতিক উন্নতি প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।

তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক অগ্রগতি চাই।

মিলিটারি থেকে লোক এসে দেশ শাসন করুক, এটা আমরা কখনো চাই না। এই বাস্তবতার মধ্যে অনেকেই অনুধাবন করছেন—দেশে এখন যে সংবিধান চলছে, তা দিয়ে রাজনৈতিক উন্নতি প্রায় অসম্ভব। তাই সমাজের অনেক চিন্তাশীল মানুষ এখন লিখছেন ও বলছেন, সংবিধান মৌলিকভাবে পরিবর্তন করতে হবে। সামান্য সংশোধনী দিয়ে হবে না। এই ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ‘গণপরিষদ আন্দোলন’ নামের একটি বিষয় ভিত্তিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আবুল কাশেম ফজলুল হক। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গণপরিষদ আন্দোলন। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরকে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী করে ৩৫ জন সমন্বয়কারীর নাম ঘোষণা করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে বারবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও দেশের রাজনীতি ভালোভাবে চলছে না। ১৯৭২ সালে তৈরি করা সংবিধানকে দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো সংবিধান বলে আওয়ামী লীগ ক্রমাগত প্রচার করছে। কিন্তু এই সংবিধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যেভাবে বলা হয়, সেই চেতনার প্রকাশ ১৯৭২ এর সংবিধানে অল্পই ছিল।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধন করতে হলে গণপরিষদ গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে। এগুলো বিচার-বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।

জনগণ রাজনীতি বিমুখ হয়ে গেছে উল্লেখ করে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, গত ৫০ বছরের বেশি সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনগণকে রাজনীতি সম্পর্কে হতাশ করে ফেলেছে। এই অবস্থায় কীভাবে মানুষকে ভেতর থেকে জাগানো যাবে, তা দেখতে হবে। জনগণকে জাগাতে অবশ্যই আন্দোলন লাগবে। পাশাপাশি সেই আন্দোলনে জনগণের সমর্থন লাগবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী চোনায়েদ সাকি বলেন, যে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, এটি ব্যবস্থাগত সংকট। এই ব্যবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে সংবিধান, যা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রেও রয়েছে সংবিধান। অথচ শুরু থেকেই এর মধ্যে বড় আকারের গলদ আছে। আজকে দেশের যত গলদ আছে, সবকিছুর উৎস সেখানে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়ই একটা স্লোগান তুলি—রাষ্ট্রের সংস্কার, সংবিধানের সংস্কার দরকার। এই সংস্কারকে মৌলিক বদলের জায়গা থেকে বোঝা দরকার। এই বদল আনতে ব্যর্থ হলে কোনো সমাধান আসবে না। আর সমাধান না আসায় এবং ক্ষমতা একচেটিয়াকরণের ফলে জনগণের মধ্যে যে বিবাদ তৈরি হচ্ছে, সেটির মীমাংসা হচ্ছে না।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব যদি রক্ষা করতে চাই, জনগণের অধিকার যদি রক্ষা করতে চাই, নিজেদের মর্যাদা যদি রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের পুরো ব্যবস্থা বদলে কাজ করতে হবে। এই উপলব্ধি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যত দ্রুত আসবে, যত দ্রুত আমরা এর পেছনে সমবেত হতে পারবো, তত আমরা বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবো।

অনুষ্ঠানে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশ একটি অনিবার্য সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিরোধী দল যতই শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলি না কেন, রাস্তায় যতই নিরস্ত্র থাকি না কেন, যখন সরকারি দলের গুন্ডাপান্ডা, প্রশাসন আপনাদের ওপর হামলা করবে, কোপাবে, বাড়ি-ঘর ধ্বংস করবে, তখন আত্মরক্ষার জন্য হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া আর উপায় নেই। বর্তমান সরকার আমাদের সেই জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে।

গণপরিষদ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, গণপরিষদ আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল বাশার, এ এ এম ফয়েজ হোসেন, শহীদ রুবেল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।