ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

ক্ষমা করবেন সুপার হিরো, কিছু কথা ছিল

মাহবুব মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২
ক্ষমা করবেন সুপার হিরো, কিছু কথা ছিল

এক.
শুরুতেই বলে নিই, অনেকের মতো আমার কাছেও আপনার লেখা অনেক ভালো লাগে। তথাকথিত আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা এবং কাঠিন্যতা থেকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে থাকার মতো হাস্যরস আপনার লেখায় খুঁজে পাই।

যদিও লেখকের নিজস্ব স্টাইলের কারণে মাঝে মাঝে এক ঘেঁয়েমি লেগে যায়। তারপরেও ভালো লাগে। তবে সত্যি কথা কি, যারা আপনাকে নোবেল পাইয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল, আমি তাদের দলে ছিলাম না কখনো। আমার বিবেচনায় হয়তো দাবিটা যৌক্তিক মনে হয়নি। আপনার লেখায় তা‍ৎক্ষণিক আনন্দ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ লেখাতেই জীবনের গভীর অর্ন্তদৃষ্টি খুঁজে পাইনি। তবুও যারা চেষ্টা চালিয়েছে নোবেল পাইয়ে দেওয়ার জন্য, ধন্যবাদ তাদের। ওটা যার যার ব্যাপার। দাবি অনেকে তুলতেই পারে, দোষনীয় নয়। ইদানিং একটি দৈনিকে মাঝে মাঝেই আপনার সাবলীল লেখা দেখা যাচ্ছে, যেগুলো গল্প কিংবা উপন্যাস নয়। লেখায় বিভিন্নভাবে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করছেন ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অর্থায়নের জন্য। এরকম উদ্যোগ এটাই প্রথম নয়। বহু আগে থেকেই কারো রোগে মৃত্যু হলে তার সন্তান কিংবা নিকট আত্নীয়দের সেই বিশেষ রোগের চিকি‍ৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার নজীর আছে। কিংবা বাবার স্বপ্ন পূরণে স্কুল, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাও হয়েছে প্রচুর। যাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার হয়ে স্বল্প পরিসরে সেটা পূরণের চেষ্টা করেছেন। কিংবা শিক্ষক হয়ে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশ ছেড়ে বিদেশেও এ রকমটি হতে বহু দেখেছি। পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইমরান খানের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার খবর কে না রাখে। আসলে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ গরীব রাষ্ট্রে জন্ম হবার কারণে ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দেখতে দেখতে সমাজের জন্য কিছু একটা করার তাড়না বোধ করে। সেই তাড়না থেকেই ছোট বেলায় অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বড় হলে সে নিজ গ্রামে একটা স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবে। মানবিক সব চিন্তা ভাবনা। তবে আর সবার সাথে আপনার পার্থক্য হলো আপনি ইতিমধ্যে একটা স্কুল করে দেখিয়েছেন। বেশিরভাগ শৈশবের স্বপ্নবাদী মানুষেরা বড় হলে সামর্থ্য থাকে না। যাদেরওবা সামর্থ্য থাকে তারা বিত্তশালী হবার পরে লোভী হয়ে পড়ে। শৈশবের স্বপ্নকে তাড়িয়ে নতুন স্বপ্ন টাকা বানানোর নেশায় পেয়ে বসে।

স্বপ্নের শুরুগুলো গরীবের সেবা দিয়েই হয়। কিন্তু ওইটুকুই। কাজ শুরু হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গরীবের কোন পাত্তা থাকে না। ভয়টা সেখানেই। আপনি যেহেতু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অর্থায়নে জনসম্পৃক্ততার কথা ভাবছেন এবং সেই মোতাবেক প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাই কিছু বিষয় আপনার খোলাসা করে বলা  উচিত। পাড়ার ক্লাবের মতো চাঁদা সবাই দেবে কিন্তু সেই টাকা খাটাবে কোথায় সিদ্ধান্ত নেবে ক্লাবের ষণ্ডামার্কা লোকগুলো, সে রকম স্বৈরচারী এবং অগণতান্ত্রিক আচরণ আপনার কাছ থেকে আশা করি না। দেশের রাজনীতে যেমন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনগণের অংশগ্রহণ নেই- সকলেই চায় দেশের তুলনায় ছোট এই উদ্যোগ থেকে আমরা কিছু ভালো অভ্যাস রপ্ত করি।

জনগণের টাকা যেহেতু নিচ্ছেন, সেহেতু এটা নিশ্চয়ই ব্যবসায়িরক কোন হাসপাতাল হবে না। এর মালিক জনগণ। একটু বলবেন কি, সেই মালিক জনগণ, বিশেষ করে হত দরিদ্র মালিকগুলোর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় কি ভূমিকা থাকবে? চিকি‍ৎসার বেলায় নীতিমালা কি হবে? ‘স্বাস্থ্যসেবায় সবার সমান সুযোগ থাকবে’, এ ধরনের গতানুগতিক কথা শুনতে চাই না। নির্দিষ্ট করে জানতে চাই, সেটা কিভাবে নিশ্চিত করবেন। এ্যাপোলো কিংবা অধুনা প্রতিষ্ঠিত ব্যয়বহুল হাসপাতালগুলোতেও সবার যাবার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে সেই সুযোগ সবাই পায় না। ঠিক এই জায়গাটাতে আপনার মুন্সিয়ানাটা কি হবে, সেই পরিকল্পনাটা জানতে চাই।

একটি পত্রিকায় আপনি লিখেছেন, ‘আমার পরিকল্পনা হলো, তিনজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে প্রথম ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের জন্য অর্থ ভিক্ষা নেওয়া হবে। এদের ছবি তুলবেন নাসির আলী মামুন। স্কেচ করবেন ও ইন্টারভিউ নেবেন মাসুক হেলাল। তারপর আমরা যাব বাংলাদেশের তিন শীর্ষ ধনী মানুষের কাছে। ভিক্ষুকেরা দান করেছে শুনে তারা লজ্জায় পড়ে কী করেন, আমার দেখার ইচ্ছা। ’

খুব সুন্দর কথা। কিন্তু ওই ভিক্ষুকের ক্যান্সার হলে ওই হাসপাতালে যাবার সামর্থ্য থাকবে তো? গরীবদের নিয়ে আপনার আগে অনেক বিখ্যাত মানুষ, অনেক মিঠা মিঠা কথা বলে অনেক কিছু বাগিয়ে নিয়েছেন। তারা বিখ্যাত হয়েছেন, তাদের অর্জন হয়েছে; কিন্তু সেই গরীবের কোন পরিবর্তন কিংবা সুফল তাতে আসেনি। ভিক্ষুকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করবেন, কথাটা শুনে যে কারো চোখে আবেগের অশ্রু চলে আসতে পারে। এই আবেগকে পুঁজি করবেন না প্লিজ!

সোজাসাপ্টা জানতে চাইছি, জনগণের কাছে টাকা চাইছেন যখন, আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে কিভাবে এবং কোথায় সেই টাকা খরচ করতে চান। বড় বড় হাসপাতাল কিংবা বড় বড় স্কুল কলেজ টাকা থাকলেই কিংবা ডোনেশন থাকলেই করা যায়। কিন্তু যেটা করা যায় না সেটা হলো, গরীবের অংশগ্রহণ এবং সেবা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে আপনার লেখা সেই তিনজন দাতা ভিক্ষুকের সেই হাসপাতালে চিকি‍ৎসার কি হবে? বড়লোকদের জন্য তেমন কিছু না করলেও চলবে। কারণ তারা রোগে পড়লে বাংলাদেশে অনেক দামী এমনটি ফাইভ স্টার হাসপাতাল আছে যেখানে চিকি‍ৎসা নিতে পারবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়েও করতে পারবে। কিন্তু হতদরিদ্র কিংবা মধ্যবিত্ত যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেই সমস্ত মানুষের চিকিৎসার সুযোগটা কিভাবে আপনি নিশ্চিত করেন সেটা জানার প্রত্যাশায় থাকলাম।

নিজের টাকায় পুরোটা করলে কিছু বলার ছিল না। যেহেতু অর্থ সংস্থানের জন্য আপনি গণপ্রচারণা চালাচ্ছেন, তাই ওপরের বিষয়গুলো জনগণের জানার অধিকার আছে। বিষয়গুলো সাদামাটা না ভেবে একটু টেকসই ব্যবস্থাপনার আলোকে ভাবাটা জরুরি। বারডেম হাসপাতালের কথা কার না মনে আছে। শুরুটা ভালোই ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর তার হাল কি হয়েছে সেটা কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দরকার নেই। এখনো সেখানে অনেক ভালো দৃষ্টান্ত আছে যেগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। অর্থ সংগ্রহের প্রচারণার শুরুতেই ওপরের বিষয়গুলো জনগণকে পরিস্কার করা ভালো।

আপনার চাঁদা তোলার কৌশলটা লেখার গুণে অভিনব মনে হলেও বেশ পুরনো। কৌশলটা একই সাথে বেশ কার্যকরী। কিন্তু শালীনতার উর্ধ্বে নয়। হুজুররা মসজিদে ঠিক একই কৌশল অবলম্বন করেন। নামাজ শেষে কিংবা নামাজের আগে কে কতো চাঁদা দেবেন হাত তোলেন বলতেই কোন একজন প্রথমে হাত তুললেই সাথে সাথে চক্ষু লজ্জায় অনেকেই হাত তুলতে বাধ্য হন। শেষমেষ গরীবের দুর্বল হাত সেখানে ধনীর মোটা হাতের কাছে চাপা পড়ে যায়। আপনিও ঠিক একই কায়দায় এগুচ্ছেন। ভিক্ষুকের দান দেখিয়ে লজ্জায় ফেলে বড় লোকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। দেখবেন শেষমেষ এইসব টাকাওয়ালা কুমীরেরা যেন সব কিছুতে গেড়ে না বসে। তখন তিনজন ধনীকে লজ্জায় ফেলতে গিয়ে নিজেই লজ্জায় পড়ে যাবেন।

দুই.
জানুয়ারির ২৯ তারিখে (২০১২) প্রথম আলোয় আপনার লেখা পড়ে মনে হলো, আপনার মনে হিরো হবার বাসনা কাজ করছে। যদিও ধারণা দিয়েছেন, সবাইকে সাথে নিয়ে হিরো হবেন। কিন্তু ইতিহাস বলে, সহযোগীরা কখনো হিরো হয় না। এমনকি নামটাও থাকে না। যাকগে, লেখার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অনেক বাংলাদেশির হৃদয়ে হিরো হয়েই আছেন। কিন্তু আপনি চাচ্ছেন সুপার হিরো হতে। ক্যান্সার হাসপাতাল করে যদি সেটা হতে পারেন, আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সেই হিরোকে আমরা হিরো হিসেবেই পেতে চাই। এন্টি হিরোর ভূমিকায় দেখলে জনগণের মন ভেঙে যাবে। ভবিষ্যতে সত্যিকার হিরোকে মানুষ সন্দেহমাখা দৃষ্টি নিয়ে দূরে ঠেলে দেবে।

সুপার হিরো হতে গিয়ে যেন সুপার ইগো না পেয়ে বসে। মানুষ বড় হলে কিংবা তাকে নিয়ে মানুষের হৈচৈ করা দেখে অনেকের মধ্যে কিছুটা অহংকার চলে আসে। ‘কি হনুরে’ ভাবটা তখন তার সর্বনাশের পথ তৈরী করে দেয়। সুপার হিরো হতে গিয়ে তাই অনেকেই আশেপাশের হিরোদের কতল করা শুরু করে। আপনার ভিতরেও দুঃখজনকভাবে সেই ‘হিরো কতল’ করা লক্ষণটাই দেখা যাচ্ছে।
কিভাবে? আপনার ‘সুপার হিরো’ লেখা থেকে হুবহু তুলে দিচ্ছি—

‘পৃথিবীর কোথাও আমি ছাত্রদের এবং শিক্ষকদের রাজনৈতিক দল করতে দেখিনি। এই অর্থহীন মূর্খামি বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। এই মূর্খদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ড. আহমদ শরীফ এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অতি শ্রদ্ধেয় দু’জন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাদা দলে ইলেকশন করেছি। এখন নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। মূর্খ মনে হয়। আমাদের ক্যানসার ইনস্টিটিউটে মূর্খদের প্রবেশাধিকার নেই। ’

এখানে প্রকারান্তরে যুক্তিছাড়া আপনি দু’জন সম্নানিত ব্যক্তিকে মূর্খ বলে খাটো করার চেষ্টা করেছেন যেটা একেবারেই অনুচিত।

ধীরে ধীরে আরো লক্ষ্য করছি, আপনি একদল অন্ধভক্ত বা চাটুকার দ্বারা পরিবেষ্টিত হতে চলেছেন। আপনাকে নোবেল পাইয়ে দেবার প্রচারণার সঙ্গে যারাই দ্বিমত প্রকাশ করেছে, এক শ্রেণীর অন্ধ সমর্থকরা তাদের খুবই মন্দভাবে জবাব দিয়েছে। এমন উগ্রতা দেখতে পাই লাল সালুর মজিদের চ্যালা চামুণ্ডাদের ভিতরে কিংবা আমাদের নেতা নেত্রীর অতি উগ্র সমর্থকদের মধ্যে।

কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্টকে এখানকার আদিবাসীরা আক্রমণ করে বসে। ভাবুনতো এমনটি যদি আমাদের দেশে কোন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, পাতি মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী বা নেতা, এমনকি পাড়ার বখাটে কোন নেতার ওপরে করা হতো কোন অনুষ্ঠানে, তাহলে কি অবস্থা হতো সেই আক্রমণকারীদের? মেরে একদম পাউডার বানিয়ে ছাড়ত। সে রকম কিছুই হয়নি এখানে।

একেই বলে সহিষ্ণুতা এবং মতামতের সহঅবস্থান। বাংলাদেশে এখন যেটা বড় বড় নেতা নেত্রীদের বেলায় হতো যে তাদের সমালোচনাকারীদের বরদাশত করা হয় না, এমনটি পূর্বে হতো লাল সালুর মজিদদের বেলায়। মাজারে লাল সালু দিয়ে ঢেকে দিয়ে মজিদদের বদ কর্মকে একই সংগে ঢেকে দেওয়া হতো পবিত্রতার মিথ তৈরি করে। সেই একই কাতারে বর্তমানে এক শ্রেণীর অন্ধ সমর্থক আপনাদের মতো সমাজের বরেণ্য মানুষদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যারা সমালোচনা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এরা এক ধরনের সম্মানের মিথ তৈরি করে আপনাদের সমালোচনার পথকে রুদ্ধ করে রাখতে চায়। পার্থক্য কোথায় সেই মজিদদের চ্যালা কিংবা বর্তমানের অন্ধ, উগ্র রাজৗনতিক সমর্থকদের সাথে আপনাদের মতো লোকদের ভক্ত গোষ্ঠীর মধ্যে? কোন পার্থক্য নেই।

মানুষ হিসেবে আপনি, আমি যে রকম ঠিক একই রকম ট্রিটমেন্ট পাবার অধিকার আছে ফার্মগেটের ওভার ব্রিজের ওপরে বসে যে ভিক্ষা করছে সেই ভিক্ষুকের। কিন্তু আমরা রাজা উজির থেকে শুরু করে একজন সাধারণ মানুষের সমালোচনা করা গেলেও আপনাদের মতো কিছু সুশীল বুদ্ধিজীবীদের সেটা করা যাবে না। কেন? অথচ হরহামেশা আপনারা লেখার মাধ্যমে অন্যের সমালোচনা করেই চলেছেন। যৌক্তিক এবং বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রতিটা মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু ত্রুটি থাকেই। যেটা কেউ ধরিয়ে দিলে সেই ব্যক্তির সত ইচ্ছা থাকলে সে নিজেকে শুধরে নেয়। এই যেমন কিছুদিন আগে খবরে দেখলাম, আপনাকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি করা হয়েছে। কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। শর্তটা কি? আপনি সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন না। মানেটা কি দাঁড়ালো? আপনি সরকারের সব গণবিরোধী কর্মের সংগে আপোস করেছেন। নিজেকে একট পদে দেখতে গিয়ে আপনি আপোস করেছেন।

আমাদের দেশে যেমন রাজনীতিবিদদের অনেক সম্পদ থাকার পরেও ক্ষমতায় গিয়ে অধিক সম্পদের লোভ সামলাতে পারে না। দুর্নিতির পথে পা বাড়ায়। ঠিক তেমনি একজন লেখক হিসেবে আপনার অনেক সম্মান এবং পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও আপনি অধিক সম্মান এবং বৈশ্বিক পরিচিতির জন্য একটা লোভ করে বসেছেন। এটা এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি নয় কি? আপনার সম্মান এবং মেধাকে সরকার নিজের ইমেজ রক্ষার কাজে লাগালো। আর আপনিও নিজেকে আরেকটু উ‍ঁচুতে নেবার লোভে তাদেরকে সেই সুযোগটা করে দিলেন। সুপার হিরো হতে গিয়ে দয়া করে জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন আপোস করবেন না প্লিজ।

আপনি লেখায় বলেছেন, টাকা তুলতে বাংলার এক প্রান্ত থেকে পরিবারসহ অন্য প্রান্তে ছুটে যাবেন। আমরা জানি, পথের দু’ধারে যারা দাঁড়িয়ে থাকবে তাদের বেশিরভাগই হবে গরীব, মধ্যবিত্ত। যারা আপনার ভক্ত। আমাদের বড় বড় দলের নেতা নেত্রীদের জনসভা কিংবা রোড মার্চেও এই হত দরিদ্ররাই থাকে। হাজার হাজার লোক দেখে আপনি এবং আপনার পরিবার গর্বিত হবেন। পথের ক্লান্তি মুছে যাবে গর্বের উচ্ছ্বাসে। সারা জীবন গল্প বলার মতো একটা গর্বিত প্লটও পেয়ে যাবেন। যুগে যুগে গরীবেরা স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেককে সুপার হিরো বানিয়েছে। কিন্তু গরীবের স্বপ্ন সব সময় অধরাই থেকে গেছে।

এবার দেখি ইচ্ছা প্রকাশকারী, সুপার হিরো হতে চাওয়া, জনাব হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জন্য কি
করেন!!!!

[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।