ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

প্রবাসের অদৃশ্য জামায়াত হিজবুতের দেশবিরোধী তৎপরতা

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১২
প্রবাসের অদৃশ্য জামায়াত হিজবুতের দেশবিরোধী তৎপরতা

ক্যান্সারের মরণঘাতী কোষ নিয়ন্ত্রণে কেমোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে কোষটা কেটে ফেলতে হয়। অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।

অন্য কোনো চিকিৎসায় কাজ হয় না।

জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মরণঘাতী ক্যান্সার। বিভিন্ন নামে-পরিচয়ে এই ক্যান্সার দেখি পাকিস্তান-ভারত-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে জামায়াতের নেটওয়ার্ক প্রমাণ করে জামায়াত কোনো স্থানীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন নয়, জামায়াত ক্ষমতালিপসু এক অর্থনৈতিক বেনিয়া গোষ্ঠী। তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থের সাংগঠনিক কাঠামো সাজানো হয়েছে ’রাজনৈতিক আইওয়াশে’। তাদের মার্কেটিং পলিসির মূল হাতিয়ার ধর্ম। সাধারণের ধর্মভীরুতাকে ’এক্সপ্লয়েট’ করে। আল্লাহ-রসুলের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্লোগানে নিজেদের অর্থনৈতিক আগ্রাসন নিশ্চিত করে। নিজেদের ’খাস’ নেতা-কর্মীদের ইসলামী শাসনের সামান্যতম সুযোগহীন’’ ইহুদি-নাসারার’ পাশ্চাত্য দুনিয়ায় বসবাসের সুযোগ-সুবিধা করে দেয়।

মুসলিম দুনিয়ায় জামায়াতীরা সুদমুক্ত ব্যাংকিংয়ের ধুয়া তুলে কিন্তু অন্যান্য তফশিলী ব্যাংককে কলমানি মার্কেটে মোটা সুদে ধার দেয়। সেন্ট্রাল ব্যাংকের জামানাতের বিপরীতে সুদ তোলে। প্রবাসী  জামায়াতিরা কিন্তু নিজেদের বাড়ি-গাড়ি কিনতে সুদযুক্ত ঋণ নিতে দ্বিধা করে না।

বারটেন্ডাররা সার্বক্ষণিক অতিথিদের মদ্য সরবরাহের মাধ্যমে মাতাল করে তুললেও নিজেরা কখনোই ’ডিউটির সময়’ মদ্যপানে যান না। জামায়াতিরা বারটেন্ডারের আদলে বাংলাদেশসহ নিজেদের টার্গেটেড দেশের ড্রাগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাংলাদেশের ড্রাগ বাণিজ্য ও জাল টাকার নিয়ন্ত্রণ জামায়াতিদের হাতেই। আফগানিস্তানের তালেবান, প্যালেস্টাইনের জঙ্গী হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সশস্ত্র তৎপরতার সাথে জামায়াতিরা সম্পৃক্ত থাকে হোরোইন ও চোরাই অস্ত্রের বাণিজ্যিক স্বার্থে।  অনেকে দাবি করেন আফগান তালেবান আর ফিলিস্তিনের স্বায়ত্বশাসন-স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক ইয়াসির আরাফাতের বিরোধিতাকারী হামাস জামায়াতের আরেক ছদ্মনাম। ফিলিপাইনে জলদস্যুতা, ড্রাগ ও পতিতা বাণিজ্যে সাথে জড়িত থাকা এশিয়ার মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালরা জামায়াতিদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত।

জামায়াতিরা কেবল ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশের উপদ্রব হয়ে ওঠে না, তারা একই দেশে বিভিন্ন নামে আর্বিভূত হয় বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষকে ’কব্জা’ করতে। এক সময় জামায়াতিরা বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জায় নিয়েছিলো। পরে জামায়াতি থাবা বিস্তৃত হয়েছে কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টারের লাভজনক ’সামগ্রিক’ আগ্রাসনে। এখন জামায়াতিদের মনোযোগ ’হুজুগে’ গড়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর বাণিজ্যিক আধিপত্যে। বাণিজ্যিক স্বার্থে একদল গোঁয়ার গোবিন্দকে দিয়ে গড়ে তোলা হয় বাংলা ভাইয়ের মতো স্থানীয় সন্ত্রাস। আরেকদল ’মেধাবী’কে রিক্রুট করে দলীয় অর্থে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লাভজনক বিনিয়োগে তৈরি করা হয় হিজবুত তাহরীর। এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা চিরাচরিত পোষাক ও ভাবনার জামায়াতি অবয়ব নয়। এরা জিনসের প্যান্ট-কোট স্যুট টাইয়ের হলিউড-বলিউডের ছবি দেখা কেতারাদুরস্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আমেরিকা-রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধ ’স্লিপিং’ এজেন্টের মতো হিজবুত তাহরীরের স্লিপিং জামায়াতিরা জেগে ওঠে জামায়াতের ’রাজনৈতিক’ অভিলাষ ও প্রয়োজনে। কিন্তু অদৃশ্য এই হিজবুত তাহরীর। ধরা না পড়া পর্যন্ত হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা ’নির্দলীয় দেশপ্রেমিক জনগণ’ মাত্র !

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে হিজবুত তাহরীরের পোশাকে লুকিয়ে থাকা জামায়াতি স্লিপিং এজেন্টরা জেগে উঠেছে। গেল মাসের শেষ শুক্রবার মেলবোর্নের বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন মসজিদে হিজবুত তাহরীর ’ইসলাম ধর্মরক্ষায়’ ও ভারত-আমেরিকার ’বিধর্মী আগ্রাসনের’ থাবা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে ’হাসিনা সরকারকে উৎখাতের ’দ্বীনি দাওয়াতের’ লিফলেট বিলি বণ্টন করেছে। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরেও আজ শুক্রবারও একই ধরনের লিফলেট বিলি বণ্টন হয়েছে বলে জানা গেছে।  

শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া দ্বিতীয় টুয়েন্টি টুয়েন্টি। ’দেশপ্রেমিক নির্দলীয় বাংলাদেশি’ স্লোগানে হিজবুত তাহরীর টিপাইমূখ বাঁধের বিরোধিতায় ’আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের নামে বর্তমান আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাম্প্রতিক ইতিবাচক তৎপরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অস্ট্রেলিয়ায় খুব উজ্জ্বল নয়। খেলার মাঠে এধরনের প্রচারণা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্নই করবে।

প্রবাসে হয়তো বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের কিছুই করার নেই কিন্তু দেশে জামায়াতি ও তাদের এই ’অদৃশ্য’ রাজনৈতিক ফ্রন্টকে সমূলে উৎখাতের বিকল্প নেই। সব গণতান্ত্রিক বড় দলকে এই ব্যাপারে ঐকমত্য হতে হবে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির স্বার্থেই। জামায়াতি ক্যান্সারের সুচিকিৎসা চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।