ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

কানাডা থেকেই হয় মাতৃভাষা দিবসের সূচনা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল,অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১২
কানাডা থেকেই হয় মাতৃভাষা দিবসের সূচনা

কানাডার নিজস্ব কোনো মাতৃভাষা নেই। মাতৃভাষা আর রাষ্ট্রভাষার বিশ্লেষণ ভিন্ন, এক নয়।

*১ কানাডিয়ান রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি এবং   ফ্রেঞ্চ। তবে মজার বিষয়, অর্ধশতাধিক অর্থাৎ ৫৩ টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব মাতৃভাষাকে The Constitution Act of 1982-এ রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি- ফ্রেঞ্চের সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাল্টিকালচারাল কান্ট্রি হিসেবে কানাডায় শতাধিক ভাষা এবং সংস্কৃতি একে অন্যের পাশাপাশি বিরাজ করছে। বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতি এখানে ধারণ করে কানাডা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফলে সকল ভাষার বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে এখানে গড়ে উঠেছে বহুজাতিক সাংস্কৃতিক বন্ধন। সে জন্য অসাম্প্রদায়িকভাবে এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। তার মধ্যে আমাদের বাংলা ভাষা বিশেষভাবে সমাদৃত।

বিশ্বের প্রায় ৭,৮০০ ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচলনে একুশে ফেরুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যথাক্রমে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ও ২০০৮ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা ভাষার গুরুত্ব এবং মর্যাদা বহুলাংশে  বেড়েছে।
প্রথমত এই দিবসের প্রস্তাবকারী এবং উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম কানাডার ভ্যাঙ্কুুভার থেকেই এর বীজ বপন করেছিলেন। তারা বহু কাঠখড়ি পুড়িয়ে ভাষা আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সম্মান ও স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষম হন। যা প্রতিটি বাঙালির জন্য গর্বের, গৌরবের। জাতির জন্য বিরল সম্মান অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার সালাম-রফিকের সংগঠন ‘মাদারস ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’কে ২০০২ সালে একুশে পদক দিয়েছে।
 
এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত রফিকুল ইসলামের স্বপ্ন- বাংলাদেশে একটি মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন। এ নিয়ে তিনি লিখেছেন, প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি যেভাবে মাতৃভাষার গুর“ত্ব উপলব্ধি করতে পারে, পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের সে সুযোগ সীমিত। এ কারণে তার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিতে তার জন্য কি আলো, কি শক্তি লুকিয়ে রয়েছে তা অনুভব করতে পারছে না এবং যথাযথভাবে সেই শক্তি ব্যবহারও করতে পারছে না। ফলে আজকের পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ নিজের মাতৃভাষা তথা আপন আলো এবং নিজস্ব শক্তি থেকে বঞ্চিত থেকে সংকুচিত জীবন অতিবাহিত করছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অমূল্য সম্পদ---মুখের বুলি মাতৃভাষা। আর সে জন্যই বিশ্বে প্রয়োজন একটি মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। যার পাইওনিয়র আমাদের বাংলাদেশ। *২

অবশেষে ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ইনস্টিটিউটির আনুষ্ঠানিক  উদ্বোধন করেছেন। যা এক মাইলফলক।
এদিকে কানাডার বিভিন্ন  প্রদেশ যেমন বৃটিশ কলম্বিয়া, অন্টারিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান-স্বীকৃতি দিয়েছে। ফেডারেল পার্লামেন্টেও বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। সরকারিভাবে পালনের জন্য প্রভিন্সিয়াল সরকার ও সিটি উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ভ্যাঙ্কুভারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে নির্মিত হয়েছে ‘লিঙ্গুয়া আকুয়া। ’

মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে টরন্টো প্রিমিয়ার ড্যান্টল ম্যাগগুইনটি সাপ্তাহিক বেঙ্গলি টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেউ যদি মাতৃভাষাকে ভুলে যায়, সে তখন তার সব কিছু হারিয়ে ফেলে। তাই কানাডা এ ব্যাপারে সচেতন। *
মে ২০০৯-এ টরন্টোস্থ রিচমন্ড হিল এলাকার এমপিপি ড. রেজা মুরাদির প্রস্তাবে প্রাদেশিক সংসদ সর্বসম্মতিভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ড. রেজা বলেন, মাতৃভাষার স্বীকৃতি মানবাধিকারের অংশ। তাই এর গুরুত্ব বহুমাত্রিক।
 এদিকে, কানাডার কুইবেকবাসীরা ফ্রাঞ্চ ভাষার জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলনরত। ১৩ অক্টোবর ১৯৯৫-এ অনুষ্ঠিত হ্যাঁ/না (৪৯.০৯% বনাম ৫১.০১%) ভোটে হেরে যায়।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’... গানটি যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ধারণ করে, তেমনি কানাডার একটি ঘটনা ও গানের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯১৮ সালের ১১ মাসের ১১ তারিখ ১১টার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। যুদ্ধে নিহত নয় মিলিয়ন সৈনিক। তাঁদের স্মরণে কানাডায় প্রতি বছর ১ থেকে ১৫ নভেম্বের পালিত হয়- রিমেমব্রেন্স ডে। আমরা যেমন ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কালো ব্যাজ ধারণ করি, তেমনই- লাল টুকটুকে পপি ফুলকেও প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। তাই ফ্লান্ডার ফিল্ড নামক যুদ্ধক্ষেত্রে অসংখ্য মৃত সৈনিকের লাল রক্ত পপির লাল রঙে ধারণ করা হয়েছে।

ক্যানাডার বিখ্যাত কবি  কর্নেল জন ম্যাক ক্যারি (১৮৭২-১৯১৮) ‘ইন ফ্লান্ডার ফিল্ডস’ নামে একটি কবিতা যুদ্ধে মৃতদের স্মরণে লিখে নিজেও বিখ্যাত হয়ে আছেন। কবিতাটি ৮ ডিসেম্বর ১৯১৫ তে প্রথম ছাপা হয়।

In Flanders fields the poppies blow
      Between the crosses, row on row,
   That mark our place; and in the sky
   The larks, still bravely singing, fly
Scarce heard amid the guns below.

We are the Dead. Short days ago
We lived, felt dawn, saw sunset glow,
   Loved and were loved, and now we lie,
         In Flanders fields.

Take up our quarrel with the foe:
To you from failing hands we throw
   The torch; be yours to hold it high.
   If ye break faith with us who die
We shall not sleep, though poppies grow
         In Flanders fields. *
বাঙালিরা এখন আর ঘরকুনো নয়। ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বে। যেখানে বাঙালি, সেখানেই বাংলা ভাষা, সেখানেই বাংলা সংস্কৃতি। আর সেই সংস্কৃতির অনিবার্য অংশ ২১ শে ফেব্র“য়ারি, শহীদ দিবস এবং শহীদ মিনার। সেই শহীদ মিনার বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে, ভারতে, অস্ট্রেলিয়ায়, মধ্যপ্রাচ্যে, জাপানে, জার্মানে, প্যারিসে। আমার প্রস্তাব, পৃথিবীর সবদেশেই অন্তত একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজন। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগেই প্রবাসে একুশে একাডেমী গঠন করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন শহীদ মিনারের। যেমন সিডনির নির্মল পালেরা তাঁদের মাদার ল্যাংগুয়েজস্ কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল সংগঠনের মাধ্যমে সিডনির অদূরে অ্যাশফিল্ডে স্থাপন করেন আরেক ভাষাসৌধ। বহুজাতিক জাতিসত্তার ভাষা সংরক্ষণের দৃষ্টান্তের জন্য অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার নির্মল পালকে এক বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। *৫
এ সম্পর্কে অজয় দাশগুপ্ত ‘দূর দেশেরও উজ্জ্বল ফেব্র“য়ারি’ শীর্ষক এক লেখায় বলেছেন ‘যা দুনিয়ার ভাষা রক্ষিত, ভাষাহারা, ভাষা বিপাকে থাকা মানুষদের শক্তি যোগাবে। ’*৬

কানাডায় লক্ষাধিক বাঙালির মধ্যে টরন্টোতেই ৬০-৭০ হাজার বাংলাদেশি থাকে বলে অনুমেয়। তারপরও দুঃখজনক হলেও সত্য এখানে এখনো কোনো শহীদ মিনার স্থাপিত হয়নি। অথচ শহরের সাবেক মেয়র ডেভিড মিলার ২০০৫-এ মেট্টো টরন্টোর কনভেনশন সেন্টারে একুশের আলোচনা অনুষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য সিটি কাউন্সিলর মিস জেনেটকে দায়িত্ব দেন। সে জন্য বাঙালিদের পছন্দের একটি জায়গা প্রবাসী বাঙালিরা তাদের প্রথাগত কোন্দলের কারণে আজো নির্ধারণ করতে পারেনি, তৈরি করতে পারিনি একটি ঐক্যবদ্ধ আমব্রেলা অর্গানাইজেশন।

উল্লেখ্য, ২০০৫-এ স্থানীয় ৪টি বাংলা সাপ্তাহিক দেশে-বিদেশে, বাংলা রিপোর্টার, বাংলা কাগজ, বাংলা নিউজ সম্মিলিতভাবে শহীদ মিনারের উদ্যোগ নয়। তারপরও সেই শহীদ মিনার আলোর মুখ দেখেনি। তবে একটি সংগঠন প্রায় এককভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। সেই সংগঠনের নামÑ ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদর ল্যাঙ্গুয়েজ মনুমেন্ট ইমপ্লিমেন্টেশন, ইক। ’ যার কর্ণধার মোহাম্মদ আলী বোখারী। তাঁর কাছে স্কারবরোর ৩৮ নং সিটি কাউন্সিলর গ্ল্যান ডে বারেমেকার ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১০-এ এক চিঠিতে জানিয়েছেন, কনফেডারেশন পার্কে শহীদ মিনার হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ এলড্র মেয়র রোডস্থ এ পার্কটি ঐতিহাসিক কারণেই বিখ্যাত। উক্ত ঠিকানা কাকতলীয়ভাবে ১৯৬৭ সালে কানাডার প্রতিটি প্রদেশের একত্রিত (কনফেডারেশন) হবার সালটি মিলে যায়।

টরন্টোর হাসান মাহমুদ একুশের আন্তর্জাতিকতা নিয়ে একটি গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তা বিশ্ব-একুশে উপলক্ষে ২০০৬ সালে টরন্টো বাংলা টেলিভিশন ও ভয়েস অফ অ্যামেরিকা থেকে প্রচারিত হয়েছে। গানটি হলোঃ

দিগন্তরে-
অমর একুশে যুগ যুগান্তরে
ছড়িয়ে গেল আজ কি মন্তরে
মুক্তিকামী মানুষের অন্তরে।
ঐ একুশে - একুশে - একুশে

রফিক সালাম-
 দেশ বিদেশে ছড়িয়ে গেল নাম
 দেশ বিদেশে সবে জানাল সালাম।

রক্তরাগে -
শহীদ মিনার কি অলক্তরাগে
বিশ্ব-বীণায় বাজে সপ্তরাগে।
ঐ একুশে - একুশে - একুশে

কি ঝংকারে -
বিশ্ব-লালাটে জ্বলে অহংকারে
একুশে রক্তক্ষতের অলংকারে
ঐ একুশে - একুশে - একুশে

এসো সবে -
বিশ্ব-মাতৃভাষার এ উৎসবে,
বাংলার দানে ধরা ধন্য হবে।
এসো এসো ভাই -
অমর একুশের জয়গান গাই
মায়ের ভাষার বড় নাই কিছু নাই।
ঐ একুশে - একুশে - একুশে

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১-এ মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল CDN এবং NDG  শহরের ব্যুরো মেয়রের পরিচালনায় শহীদ মিনার নির্মাণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এতে উপস্থিত ছিলেন CDN এবং NDG এর ব্যুরো মেয়র এপেস বান, সিডি কাউন্সিলর মারডিন রবরান্ডসহ অন্যান্য বিভাগের প্রধান ব্যক্তিবর্গ। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মন্ট্রিয়লে সরকারি উদ্যোগে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের। প্রস্তাবগুলো হলো:

১. মন্ট্রিয়লে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা প্লামন্ডন-এর কেন্ট পার্কে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ।
২. কানাডা পোস্ট-এর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার খচিত ডাক টিকেট প্রকাশ।
৩. বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভবন বা স্থানগুলোতে অন্যান্য ভাষায় খচিত লেখার পাশাপাশি বাংলা লেখা সংযুক্তকরণ।
পুরো কানাডায় বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন আবেগ, উচ্ছ্বাস, প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে প্রতি বছর অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ফুলে-ফুলে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে গেয়ে ওঠেÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...

ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে একুশ নিয়ে কাজ করছেন। যেমন, বিশিষ্ট আইনজীবী রেজাউর রহমান অটোয়া থেকে ২০০৫ এবং ২০০৭-এ ‘তুষারে অগ্নিশিখা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন। যা প্রচার হয় চ্যানেল আই-এ। বিটিভির জন্য গত ২০১০-এ ফুয়াদ চৌধুরী তৈরি করছেন টরন্টো থেকে ‘একুশ তুমি বিশ্বজনের’।

উল্লেখ্য, এ বছর অন্টারিও সরকার এবং সিটি অফ টরন্টো অফিসিয়ালি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের কর্মসূচি নিয়েছে এজন্য স্কুলে-স্কুলে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কানাডার বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন কার্যক্রম, বিভিন্নভাবে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও এখন স্থান করে নিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটির জন্য প্রবাসী বাঙালিরা একটি ওয়েব সাইটে সম্মতি সংগ্রহ করছেন।

প্রায়  প্রতিটি বাংলাদেশি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য ও বেড়ে উঠার কারণে যেভাবে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে, পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের সে সুযোগ সীমিত। এ কারণে তার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিতে তার জন্য কি আলো, কি শক্তি লুকিয়ে রয়েছে তা অনুভব করতে  পারছে না এবং যথাযথভাবে সেই শক্তি ব্যবহারও  করতে  পারছে না। ফলে আজকের পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ নিজের আলো  এবং  শক্তি থেকে বঞ্চিত থেকে সংকুচিত জীবন অতিবাহিত করছে।
ভ্যাঙ্কুভারের আমিনুল ইসলাম মাওলাও একুশ নিয়ে লিখেছেন একটি নাটকÑ ‘ঊনিশ বিশ’। যা দর্শকনন্দিত হয়েছে। এদিকে কানাডার বড় বড় শহরে জাক-জমকের সাথে একুশ পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।

উল্লেখ্য, অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১০’ উপলক্ষে হাইকমিশনারের বাসভবনের অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, উক্ত একুশের অনুষ্ঠানে ভাষাদিবস, ভাষা আন্দোলন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি নিয়ে কোনো কথাবার্তা-আলোচনাই হয়নি।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাবিদ শিল্পী হামিদুর রহমানও  শেষ জীবনে শেকড় গেঁড়ে ছিলেন কানাডার মন্ট্রিয়লে। এখানেই পরলোকগমন করেন। কানাডার মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আমাদের হামিদুর রহমান। *

 শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবকারী এবং উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম দু’জনই কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের অভিবাসী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। বাংলা ভাষার অনেক লেখক এখন কানাডায় অভিবাসী, যেমন আফসান চৌধুরী, লুৎফর রহমান রিটন, সৈয়দ ইকবাল, সৈয়দ মোহম্মদ শাহেদ, ইকবাল হাসান, সিদ্ধার্থ হক, মাসুদ খান, নাহার মনিকা, তুষার গায়েন, রণজিৎ বিশ্বাস, আলম খোরশেদ, সাদ কামালী, শিশির ভট্টাচার্য, প্রজ্ঞা লাবনী, খসরু চৌধুরী, ফেরদৌস নাহার এবং আরো অনেকেই।
 
এভাবেই কানাডায় খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতির চালচিত্র। আগে উল্লেখ করেছি, যেখানে বাঙালি, সেখানেই বাংলা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্জনের পর গর্বের সঙ্গে বলা যায়, বাংলা ভাষার কোনো সূর্যাস্ত নেই।

তথ্যসূত্র:

১.    ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, ফেব্র“য়ারি  ৯, ২০১১; দৈনিক সমকাল, ঢাকা
২.    বিশ্বে প্রয়োজন একটি মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট/ রফিকুল ইসলাম, ইত্তেফাক সাময়িকী, অক্টোবর ০৭, ২০১১, ঢাকা
৩.    সাপ্তাহিক বেঙ্গলি টাইমস, অক্টোবর ২০, ২০০৯, টরন্টো, কানাডা
৪.    Discover Canada/ The Rights and Responsibilities of Citizenship. Edition 2010, Canada. Page/22
৫.    আমাদের সময়, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১০, ঢাকা
৬.    দৈনিক জনকণ্ঠ, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১০, ঢাকা
৭.    প্রবাস বাংলা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ১৯৯৪, মন্ট্রিয়ল, কানাডা।

[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।