ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কানাডা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে

আমরা সব সময় আমাদের দেশের খারাপ খবরগুলোই বড় করে দেখি। আর ভালো খবরগুলোকে ‘ছোট’ করে দেখি।

অথচ খবরগুলো আগামী দিনের জন্য যেমন সুদিন বয়ে আনবে,তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের জন্য সুনাম সৃষ্টি করছে। আমি তার দুয়েকটির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।

ক. গত সপ্তাহেই আইসিসির টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে স্থান করে নিলো আমাদের সোনার ছেলে সাকিব আল হাসান। তার নৈপুণ্যের সুবাদেই জ্যাক ক্যালিসকে (৩৯৭ রেটিং) অতিক্রম করে সাকিব (৪০৪ রেটিং) এখন বিশ্বের শীর্ষ-সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার।

খ. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ‘আয়রন লেডি’ মানে ‘লৌহমানবী’। আমেরিকার টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক তাদের গবেষণাপত্রে এ খেতাব উল্লেখ করেন। গবেষকদ্বয়ের দৃষ্টিতে বিশ্বের আরো তিন জন আয়রন লেডি হচ্ছেন- জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দেস এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।

গ. সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দৃঢ় সংকল্পের আবারও প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কংগ্রেসের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সভাপতি ও কংগ্রেসম্যান পিটার টি কিং গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে এ প্রশংসা করেন। কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অন্য এক চিঠিতেও তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে আপনার পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ’
 
ঘ. অন্ন-বস্ত্রে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে খ্যাত দেশটি এখন খাদ্যে যেমন স্বনির্ভর, তেমনি বস্ত্রেও পরিপূর্ণ। তাই সেদিন টরন্টোতে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেছেন- আমার দেশের মানুষ এখন আর পুরনো কাপড় পরতে চায় না। এটা তো অবশ্যই সুসংবাদ।

ঙ. ডিসেম্বর ২৬ তারিখে খবরে দেখলাম,এ বছর প্রাথমিকে (পঞ্চম শ্রেণী) ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তার তিন দিন পরেই ডিসেম্বর ২৯ তারিখে আরেক আনন্দের খবর পেলাম। গ্রেডিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত জুনিয়র (অষ্টম শ্রেণী) স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল চমকে দিয়েছে সকলকে। প্রাথমিকের পর নিম্ন মাধ্যমিকের এ পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য আশা জাগিয়েছে সর্বত্র। কেবল পাসের হার আর জিপিএর সংখ্যা বৃদ্ধিই নয়, পরীক্ষার দ্বিতীয় বছরেই সারাদেশের আমাদের সোনার ছেলেমেয়েরা ঈর্ষণীয় সাফল্য বয়ে এনেছে! আমাদের চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে ... যেনো পুরো বাংলাদেশটাই আনন্দ হাসছে, উচ্ছ্বাসে ভাসছে। ভাবতেই গৌরবে মনটা ভরে যায়, বুকটা গর্বে ফুলে উঠে!

এই ফলাফল এবং সংবাদ পর্যালোচনা করলে অনেক ইতিবাচক বিষয় বেরিয়ে আসে। যেমন- শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়; সারা দেশের স্কুলগুলোই ভালো রেজাল্ট করেছে। ফলে আমাদের উন্নতমানে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সর্বত্রই। এমন কি দেশের বাইরে, বিদেশের সাতটি কেন্দ্রেও পাসের হার ৯৮.২৮ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৩ জন।

ছেলেদের চেয়ে এবারও আমাদের মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। যা বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য গৌরবের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘ভবিষ্যতে প্রত্যেক ছেলেমেয়ের হাতে আর কাগজের মোটা বই নয়, ইলেকট্রনিক বই তুলে দেবো। ’

এখনো নতুন বছর আসেনি। অথচ আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন বই ইতোমধ্যে সারা দেশে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে সেশনজট বলতে আর কিছুই নেই, জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।

আমাদের প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র বিমোচন। আর এর মূল হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। সেই শিক্ষা এখন আরো গৌরবোজ্জ্বল করে আলোকিত করছে আমাদের ভবিষ্যতকে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানালেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট আড়াই লাখ শিক্ষককে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পাসের হার ও শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়েছে। এই বিষয়গুলো অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। যা বর্তমান সরকারের অন্যতম বিশাল সাফল্য।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার শিক্ষা মন্ত্রী হয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। পরে তিনি ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মাত্র ৬ দিনের শিক্ষামন্ত্রী আবুল মনসুর আহমদ বলেছিলেন- ‘শিক্ষার মান নীচু করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তার দরকার নেই। কারণ শিক্ষার মান এখন নীচুই আছে। আমার উদ্দেশ্য শুধু পরীক্ষার মানটাকে নীচু করিয়ে শিক্ষার মানের সমপর্যায় আনা’। (আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলীঃ তৃতীয় খন্ড, বাংলা একাডেমী, জুন ২০০১, ঢাকা। পৃ-২৪৪)

ষাট দশকের ৬ দিনের শিক্ষামন্ত্রী আবুল মনসুর আহমদ যে শিক্ষানীতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন হলে আমরা আরো অনেক এগিয়ে থাকতাম।
 
কিন্তু আজকে আর সেই কথা মোটেও প্রযোজ্য নয়। কারণ, ‘শিক্ষার মান নীচু বা পরীক্ষার মান নীচু’ করার নীতির প্রয়োজন নেই। আমাদের সোনার ছেলেমেয়েরাই ‘শিক্ষার মান উঁচু করে পরীক্ষার মানকে উচ্চতর’ করছে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে। আর তার জন্য আমাদের প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ধন্যবাদ। এই ফাঁকে নেপথ্যের কর্মী শিক্ষা সচিব, কবি-বন্ধু ড. কামাল চৌধুরীকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।