ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

রাজ্জাকের লাশ এবং দীপু মনির আর্টিফিশিয়াল শ্রদ্ধা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কানাডা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১
রাজ্জাকের লাশ এবং দীপু মনির আর্টিফিশিয়াল শ্রদ্ধা

গত পরশু অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে একটি ছোট্ট সংবাদ পড়ে থমকে গেলাম। তখন খুব মন খারাপ করা পরিস্থিতিতে একটা গানের কলি মনে পড়লো- ‘জীবনে যারে দাওনি মালা/ মরণে তারে কেন দিতে এলে ফুল’? কিন্তু ক্ষুব্ধ কর্মী গানের ভাষায় নয়; ক্ষোভের ভাষায় বলেছেন- আজ এখানে কেন এসেছেন?

[বিষয়টা খুলেই বলি।

নিউজটার শিরোনাম ছিলো- ‘লন্ডনে দেখতে যাননি দীপু’। পুরো নিউজটা এরকম- “জননেতা আবদুর রাজ্জাককে দেখতে লন্ডনে হাসপাতালে যাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জীবিত রাজ্জাককে দেখতে না গেলেও মৃত রাজ্জাকের লাশ গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে যান তিনি। সারিবদ্ধ নেতাদের সঙ্গে দীপু মনিকে দেখে যুবলীগের এক কর্মী কান্নাভেজা কণ্ঠে চিৎকার করে বললেন- লন্ডনে তিনবার গেলেন, হাসপাতালে রাজ্জাক ভাইকে দেখতে যাননি। আজ এখানে কেন এসেছেন?”]

তখন মনে পড়লো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিগত দিনের কর্মকাণ্ড! পত্রপত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। তার কিছু চিত্র দেখুন। একবার তার সাথে একই মঞ্চে দেখা হয়েছিলো। ২০০৯-এ জুলাইয়ে নিউইয়র্কে মুক্তধারা আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব এবং বইমেলা উদ্বোধনীর মধ্যমণি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. (ডক্টর নয়) দীপু মনি। ১৯তম উৎসবে ১৮টি মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর জন্য ১৮জনকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। মন্ত্রীর মনোরম বক্তৃতা এবং শিল্পী সাহিত্যিকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখে খুব মুগ্ধ হলাম। তারপর আগস্টে দেশে গিয়ে হঠাৎ একদিন সংবাদপত্রে দেখলাম- এক জুতোর দোকানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি ফিতা কেটে উদ্বোধন করতে গেলেন। প্রশ্ন জাগলো- দেশের একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কী আর কোনো কাজকর্ম নেই? তিনি গেলেন জুতোর দোকানের ফিতা কাটতে! তার নাম ব্যবহার করে চাঁদপুরে ৫০ লাখ টাকার ইলিশ নিয়ে গেল আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার প্রতি পূর্বের মুগ্ধতা কিছুটা হ্রাস পেলো।

ইতোপূর্বে আরেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের কথা মনে পড়লো। শেষ বয়সে বিয়ে করেছিলেন। যদিও সে-টা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবুও যারা পাবলিক অ্যাসেট, তাদের প্রভাব পড়ে সমাজে। আরেক প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন বিদেশে যাত্রাকালে বিমান বন্দরে গার্ল ফ্রেন্ড’সহ আটকা পড়েন। পরে তিনি বাদশাহ আকবর হয়ে ভদ্রমহিলাকে বিবাহ করে রাণীর মর্যাদা দেন। এবং সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, `খারাপ কিছু করার চেয়ে শাদী করা ভালো। `

চমৎকার জবাব!
বারডেমে অরূপ রতন চৌধুরীর দন্ত বিষয়ক একটি চটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ। আমি ছিলাম প্রকাশনা উৎসবের বিশেষ বক্তা। মন্ত্রীর পাশে আমি উপবিষ্ট। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সামাদ আজাদ ঝিঁমুচ্ছেন। ঝিঁমুতে-ঝিঁমুতে হঠাৎ তাঁর মাথার টুপি খুলে পড়লো আমার উপর। দর্শক-শ্রোতারা মুখ চেপে হাসতে শুরু করলেন।

মন্ত্রীরা কেনো যে হাসির পাত্র-পাত্রী হন, তা বোধগম্য নয়। অতীতের কথা থাক। বর্তমান প্রসঙ্গে আসি।

দীপু মনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী, দেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রথম ধাপেই পূর্ণমন্ত্রী। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম চমক। মন্ত্রিসভার রদবদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. (ডাক্তার নন) হাছান মাহমুদকে বন-জঙ্গলে সরিয়ে দেয়া হয়। এখন দীপু মনি একাই অল ইন অল।

২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, তুলনামূলক নতুন মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি একজন উদীয়মান নক্ষত্র। রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে পরিবারের শক্ত ঐতিহ্য থাকার কারণে মনি সুবিধা পেয়েছেন। ২০০৯ সালের ৮ আগস্ট ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় এ মন্তব্য করা হয়। সম্প্রতি তারবার্তাটি প্রকাশ করেছে উইকিলিকস।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি দীপু মনির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আরোহন থেকে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্টি ও সরকারের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তাকেই সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছেন।

 ...নতুন দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি দলের নারী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বেশ আশ্চর্যজনক। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম কয়েক মাসে তিনি দ্রুত সবকিছু অনুধাবন করতে শেখেন। তবে পররাষ্ট্র বিষয়ে তার এখনো দক্ষতার অভাব রয়েছে। ’ *১

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অধিকারী ৬ জন। বাংলাদেশের সব চেয়ে কম বয়সী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাগ্যবতী দীপু মনি সবার ঊর্ধ্বে। *২

“গত এক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ বার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ৩৪ বার বিদেশ সফর করেছেন। এসব সফরে প্রধানমন্ত্রী বিদেশের মাটিতে কাটিয়েছেন প্রায় ৫০ দিন আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটিয়েছেন প্রায় ৪ মাস। *৩

ভ্রমণবিলাসী দীপু মনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শুনানিতে অংশ নিতে ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর শুরু করেন এবং ১ নভেম্বর ২০১১ পর্যন্ত বিদেশ সফরে তিনি সেঞ্চুরি করলেন। ১০১ তম সফরে  সৌদি আরব গেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর গত ৩৪ মাসে তিনি প্রায় ১৩ মাস কাটিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। ... বাংলাদেশের আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিদেশ সফরের রেকর্ড অনেক আগেই ভেঙেছেন ডা. দীপু মনি। *৪

তাই তার সমালোচকরা মন্তব্য করছেন- ‘গিনেস বুকে নাম ওঠাবেন দীপু মনি?’*৫  

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গত নভেম্বরে বাংলাদেশে সফরে গেলে তাঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজের হোস্ট ডা. দীপু মনি হুট করে বিদায় নিলেন মাঝপথে! ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই পার্টিতে উপস্থিত। ... কিন্তু তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনই ব্যস্ত, পার্টিতে তার থাকার সময় নেই। তাকে ফ্লাইট ধরতে হবে। বিমানে চড়তে হবে। এটা তার এক ধরনের নেশা। সব বাদ দিয়ে তিনি এমন উড়াল-কূটনীতিকেই বেছে নিয়েছন’। *৬

পাঁচ বছর মেয়াদের সরকারের তিন বছরের শেষ পর্যায়ে এসেও ন্যূনতম অর্জনহীন অবস্থায় আছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কূটনীতি। শতবারের বেশি বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত ক্যামেরায় বরেণ্য মানুষের সঙ্গে ছবির ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করলেও তার মেয়াদে বাংলাদেশের কূটনীতিতে উল্লেখ করার মতো কোনো অর্জন নেই। *৭

এভাবেই দীপু মণি আলোচিত হন। আলোচিত হলেন কানাডায় ঝটিকা সফরে এসে। তার অকূটনীতিকসুলভ আচরণে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে; প্রশ্ন উঠেছে তার কথাবার্তা নিয়েও। যেমন- ২০১১ জুনে আদিবাসী দিবসে কাটা ঘা’য়ে নুন ছিটিয়ে বললেন, এ দেশে কেউ আদিবাসী নয়, আমরা সবাই আদিবাসী। তারপর বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তো গণক নই যে, তিস্তা চুক্তির দিনক্ষণ বলতে পারবো। *৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দু’বার কানাডা সফর (২০০৯ এবং জানুয়ারি ২০১১) বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ তিনি কানাডায় আসেন জুলাই ২০০৯-এ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা সফরের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কানাডায় এসেছিলেন। তখন টরন্টোতে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য অফিসও ভাড়া নেয়া হয়েছিল। কানাডা জুড়ে সাজসাজ রব উঠেছিল বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সে সফল বাতিল হয়ে যায়। তখন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সফর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর পূর্ণমন্ত্রীর সফর হলো গুরুত্বহীন। কেন?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ১ অক্টোবর ২০১০-এ (দ্বিতীয়বার সরকারি সফরে এসেছিলেন ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে) কয়েক ঘণ্টার ঝটিকা সফরে কানাডায় আসেন, ব্যক্তিগত সফরে। প্রটোকল ছাড়া মন্ত্রীর সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক বিতর্ক শুরু হয়।

প্রথমত: তিনি সরকারের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও কানাডা সরকারে কোনো পর্যায়ে কারো সাথেই দেখা সাক্ষাৎ করেননি। এমনকী টেলিফোনেও যোগাযোগ করেননি।

দ্বিতীয়ত: যাদের সাথে দেখা করেছেন, ফোনে কথা বলেছেন এবং নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন, তারা সবাই বিরোধী দল অর্থাৎ লিবারেল পার্টির ডেপুটি প্রিমিয়ার, এমপি, এমপিপি, নেতৃবৃন্দ।

কানাডার সরকারি দলের সঙ্গে যখন বিরোধী দলের সরকার পতন আন্দোলনে বিরোধ চলছে, তখন এ ধরনের অকূটনৈতিক কর্মকাণ্ড দু’দেশের জন্যই বিব্রতকর নয় কি?

তৃতীয়ত: বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত এয়াকুব আলী সাহেব কোনো সরকারি দলের মন্ত্রী বা সরকারের সাথে যোগাযোগ করে একটা সুপরিকল্পিত কূটনৈতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করে, ব্যক্তিগতভাবে ভোজসভার আয়োজন করলেন। তাই বিতর্কিত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অভিজ্ঞমহল।

চতুর্থত: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর এতোই গোপন রাখা হলো যে, তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও অবগত নন। ফলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

পঞ্চমত: মন্ত্রীর সফরের খবর প্রথমে কোনো মিডিয়াকেও জানানো হয়নি। তিনি টরন্টো ত্যাগ করার পর দূতাবাস নয়, তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ ডেপুটি প্রিমিয়ার স্মিথার ম্যানের ব্যক্তিগত সহকারি এই সচিত্র সংবাদটি ই-মেইলে বাংলা মিডিয়াকে অবগত করেন। এটাও কোনো কূটনৈতিক রীতিনীতির মধ্যে পড়ে না।

ফকীর আবদুর রাজ্জাক সেজন্যই লিখেছেন, ‘কানাডা বাংলাদেশের অন্যতম ভাল বন্ধুরাষ্ট্র। কানাডা কখনো বিতর্কে জড়ায়নি, কখনো কোনো চাপও দেয়নি। ... দীপু মনি নিশ্চয়ই কচি-কাঁচার আসরের সদস্য নন,... তবু কেন লুকোচুরি লুকোচুরি খেললেন! *৯

মনে হয় দীপু মনি এখনো ‘খুকি মনি’ই রয়ে গেছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (অক্টোবর ১৯, 2010) তিনবিঘা করিডোর দিয়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যান। ... এ সময় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। ... তিনি আলোচিত হয়েছেন ফটোগ্রাফার হিসেবে।

...এর আগে একবার বিদেশের মাটিতে তিনি সবার নজর কাড়েন অটোগ্রাফ শিকারি হিসেবে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যান। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার দেয়া হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল রাষ্ট্রপতি ভবনে ওই পুরস্কার প্রদান করেন। ওই অনুষ্ঠানে দীপু মনিকে দেখা গেল অটোগ্রাফ শিকারি হিসেবে। সেই ভরা মজলিসে সবাই দেখলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিভা পাতিল, সোনিয়া গান্ধী এবং ড. মনমোহন সিংয়ের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিন অটোগ্রাফগুলো নিয়েছিলেন আমন্ত্রণপত্রের ওপর’। *১০

মাহবুব মিঠু ‘অটোগ্রাফ শিকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী!’ শীর্ষক এক লেখায় সমালোচনা করে লিখেছেনঃ সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে অনেকে যেমন শপিংএ ব্যস্ত থাকেন, উনি তেমন ব্যস্ত থাকেন বিশ্বের বড় বড় নেতা নেত্রীর সংগে ছবি তোলায়। ... এমনকি তিনি অটোগ্রাফ নিতেও বেশ খানিকটা রাষ্ট্রীয় কাজের সময় ব্যয় করে ফেলেন। এভাবে অটোগ্রায় সংগ্রহ আর ছবি তোলার আনন্দে বিভোর থাকলে সেই সব বিশিষ্ট ব্যক্তির বিপক্ষে কূটনৈতিক টেবিলে দেশের স্বার্থ বাগিয়ে আনবেন কীভাবে? ...দীপু মণির ব্যক্তিগত ছবির অ্যালবাম বিখ্যাত লোকদের সাথে তোলা ছবিতে সমৃদ্ধ হলেও দেশের স্বার্থের ঝোলা পুরোটাই বলতে গেলে ফাঁকা। *১১
এখন তার দপ্তর বদলানোর কথা উঠছে।

তাই, জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘খুকু মনি’র শিশু সুলভ আচরণে বলে ফেলেছেন, ‘দীপু মনি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন’। *১২

যাই হোক, কানাডায় মন্ত্রীর এই ব্যক্তিগত সফরের হোটেল (শেরাটন) বিল দিয়েছে দূতাবাস।   কিন্তু কেন? এটা তো তার রাষ্ট্রীয় সফর নয়!*১৩

বাংলাদেশ ছোট দেশ হতে পারে, কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল স্থানে অবস্থান করছে। এই তো মাত্র ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে চালু করার প্রস্তাব দেন। আশা করি, এই ক্ষুদ্র উদাহরণটি এখানে যথেষ্ট দৃষ্টান্তের স্বাক্ষর বহন করে। আর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা এবং ভাবমূর্তিকে কতটা তুলে ধরতে পেরেছেন- সে প্রশ্নের তালিকা দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে।

শুধু তাই নয়; মাননীয় মন্ত্রী জনগণের টাকায় সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ৩৪ মাসে তিনি প্রায় ১৩ মাস বিদেশে কাটাচ্ছেন। অথচ মৃত্যুযাত্রী আব্দুর রাজ্জাকের মতো একজন জননেতাকে দেখার জন্য ১৩ মিনিট সময় তার নেই। জাতির জন্য এর চেয়ে বেদনার আর কী থাকতে পারে!!

তথ্যসূত্রঃ
১. বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, অক্টোবর ০৮, ২০১১, ঢাকা
২. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০, ঢাকা
৩. দৈনিক আমার দেশ, জানুয়ারি ৬, ২০১০, ঢাকা
৪. দৈনিক  আমার দেশ, নভেম্বর ০২, ২০১১, ঢাকা
৫. দৈনিক নয়া দিগন্ত, নভেম্বর  ১১, ২০১১, ঢাকা
৬. দৈনিক মানব জমিন, নভেম্বর  ১৮, ২০১১, ঢাকা
৭. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, নভেম্বর  ২৪, ২০১১, ঢাকা
৮. অক্টোবর ০৫, জাতীয় দৈনিক, ঢাকা
৯. দৈনিক সংবাদ, অক্টোবার ১৭, ২০০৯, ঢাকা
১০. দৈনিক আমার দেশ, অক্টোবর ২০, ২০১০, ঢাকা
১১. বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, নভম্বের ২৮, ২০১১, ঢাকা
১২. বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, অক্টোবর ১৭, ২০১১, ঢাকা
১৩. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, অক্টোবর ০৪, ২০০৯, ঢাকা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।